শীঘ্রই দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ৯:২৫:১৬ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : শীঘ্রই দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যদিও ফেরার নির্দিষ্ট দিন-ক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। লন্ডনে চিকিৎসা শেষে শীঘ্রই দেশে ফিরবেন তিনি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও একই সঙ্গে দেশে ফিরবেন বলে শোনা গেলেও তিনি এখনই ফিরছেন না। তবে দেশে আসার জন্য সক্রিয় বিবেচনা করছেন তিনি।
দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। গত কয়েকদিন ধরে দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, মে মাসের মধ্যেই খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফিরতে পারেন। সঙ্গে থাকতে পারেন তার দুই পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান।
এ ব্যাপারে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমেক বলেন, ম্যাডাম দেশে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে ফেরার তারিখ নির্ধারণের আগে তার চিকিৎসকদের মতামত ও আনুষঙ্গিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার বিষয় রয়েছে। দলের পক্ষ থেকেও তাকে দেশে আনতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
লন্ডনে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডাম শিগগির দেশে ফিরবেন। তবে এখনো ফেরার তারিখ নির্ধারণ হয়নি।
চলতি বছরের গত ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই আলোচনা ছিল চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা। বহুল আলোচিত একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ অধিকাংশ মামলায় তারেক রহমান খালাস পেয়েছেন। খালেদা জিয়া লন্ডনে যাওয়ার আগ মুহূর্ত থেকে আলোচনা ওঠে, হয়তো ছেলেকে নিয়েই তিনি দেশে ফিরবেন।
দলের সিনিয়র নেতারাও তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে বিভিন্ন সময় কথা বলেছেন। দেশে ফিরতে খুব বেশি আইনি জটিলতা নেই বলেই দাবি তাদের। তাহলে দেশে ফিরছেন না কেন, কিংবা দেশে ফেরার বিষয়ে তিনি এখন কোন অবস্থানে আছেন?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তার আইনজীবী বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, তারেক রহমান আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রচলিত নিয়ম ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তার জন্য তো মামলা কোনো বাধা হতে পারে না। মামলা কোনো বাধা ছিল না, এখন পর্যন্ত নেই। অবশ্যই তিনি দেশে আসার জন্য সক্রিয় বিবেচনা করছেন। যথাসময়ে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
খালেদা জিয়ার সবশেষ শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে লন্ডন থেকে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ম্যাডাম ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় আছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ওনাকে টাইম টু টাইম দেখছেন। ম্যাডামের স্বাস্থ্যের অবস্থা এখন স্থিতিশীল।
লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার পর ডা. জাহিদ হোসেন ওই সময় (৭ জানুয়ারির পরপরই) কিছু আপডেট জানিয়েছিলেন। তিনি সে সময় জানান, খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস, পরবর্তীসময়ে কম্পেনসেন্টারি লিভার ডিজিজ বলে গ্রেড-টু, সেটার জন্য টিপস (চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিশেষ পদ্ধতি) করা হয়েছে। হার্টে স্টেন্টিং করার পর চেক করে আবার সেটার জন্য রি-স্টেন্টিং করে অথবা চেক করে দেখতে হয় যে স্টেন্টিংটা ভালোভাবে কাজ করছে কি না।
ডা. জাহিদ আরও জানান, ওনার আরও যে ব্লক আছে, সেটা অ্যাড্রেস করা দরকার, ওনার ক্রনিক কিডনি ডিজিজ যেটা আছে, সেটা অ্যাড্রেস করতে হবে। করোনা পরবর্তীসময়ে কিছু জটিলতা হয়েছে, সেগুলো নিরসন করার ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশে এভার কেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়া যে চিকিৎসা পেয়েছিলেন তাতে পরিবারের সদস্যরাও সন্তুষ্ট বলে জানান তিনি।বিএনপি চেয়ারপারসনের দেশে ফেরা নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে প্রাণসঞ্চার করবে বলে মনে করছেন সিনিয়র নেতারা। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির রাজনৈতিক কার্যক্রম ও আন্দোলনে যে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে, তা কাটাতে খালেদার দেশে ফেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা তাদের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন খান মোহন বলেন, খালেদা জিয়া দেশে ফিরলেও রাজনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে না যতক্ষণ না তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। তিনি যদি রাজনীতিতে সক্রিয় হন তাহলে রাজনীতিতে তার প্রভাব দৃশ্যমান হবে।
তবে বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় খালেদা জিয়ার সক্রিয় রাজনৈতিক অংশগ্রহণ কঠিন হতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। তার শারীরিক অবস্থা ও সরকারি বিধিনিষেধ বিবেচনায় রেখে বিএনপিকে নতুন ধরনের কৌশল ঠিক করতে হতে পারে।