সিলেটের ১৭ পাথর কোয়ারি ইজারা স্থগিতে ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ সভা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ৭:৪৬:০২ অপরাহ্ন
কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি: পরিবেশের দোহাই দিয়ে সিলেটের ৬টিসহ দেশের ১৭টি পাথর কোয়ারির ইজারা স্থগিত রাখায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের টুকের বাজারের একটি অভিজাত হোটেলে এ প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দেশের ৫১টি পাথর কোয়ারির মধ্যে ১৭টি পাথর কোয়ারি বন্ধ করে সিলেট অঞ্চলের মানুষের সাথে বৈষম্য করা হয়েছে। এমন অভিযোগ করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, কোম্পানীগঞ্জ মিল মালিক সমিতি ও ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যনারে ব্যবসায়ীরা এই প্রতিবাদ সভা করেন।
সভায় বক্তারা বলেন, প্রায় ১২ বছর ফ্যাসিস্ট আমলে সিলেটের লাখো মানুষের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম পাথর কোয়ারি সমুহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ভারতীয় আগ্রাসন তথা ভারতের পাথর বিপণনের স্বার্থে পরিবেশের কথিত দোহাই দিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পাথর আহরন বন্ধ করে দেয়ার ফলে সিলেটের মানুষের জীবন জীবিকায় ভয়াবহ অনিশ্চয়তা নেমে আসে। কোয়ারি বন্ধ করার ফলে নিমিষেই লাখ লাখ মানুষ অবর্ননীয় দুঃখ কষ্টে নিপতিত হয়। এলাকায় অভাব অনটন এবং সংকট হয়ে পড়ে মানুষের নিত্যসঙ্গী। সিলেটের প্রান্তিক জনপদে বিরাজ করে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি। বিগত সরকারের মদদপুষ্ট একটি দুষ্টচক্র ও চিহ্নিত সিন্ডিকেটের প্রত্যক্ষ ইশারায় সিলেটের লাখ লাখ মানুষের রোজগারস্থল পাথর কোয়ারি বন্ধ করে দেয়া হয়। কোয়ারি বন্ধ করে দিয়ে এই চক্র রিজার্ভের ডলার দিয়ে ব্যাপকভাবে পাথর আমদানি করে দেশের অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। স্থানীয় পাথর কোয়ারিতে পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় করে পাথর আমদানির ফলে আমাদের অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়। যুগ যুগ ধরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে আসা রাশি রাশি পাথর সংগ্রহ করেই এ অঞ্চলের প্রায় সকল মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন। দেশের নির্মাণ শিল্পের অন্যতম উপাদান হিসেবে এ অঞ্চলের পাথর ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ঢলের তোড়ে নেমে আসা পাথর ও বালি সুষ্ঠুভাবে আহরনের কারণে নদীর নাব্যতাও বজায় থাকতো, যার ফলে এ অঞ্চলে বন্যার ভয়াবহতা দেখা দিতোনা। কিন্তু পাথর আহরন বন্ধ করে দেয়ায় সিলেটের নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ার কারণে পানি নিষ্কাশনে মারাত্মক বাধার কারণে প্রতি বছর এ অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। ধলাই ও পিয়াইন নদীর উৎসমুখে রাশি রাশি পাথর জমা হওয়ার ফলে ইতিমধ্যে এ অঞ্চলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের তীরবর্তী বেশ কয়েকটি জনপদ যেকোন সময় ঢলে নিশ্চিহ্ন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। অথচ নদীর উৎসে স্তুপকৃত পাথর অপসারণ করা হলে এ অঞ্চলের মানুষ বন্যা ও ঢলের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতো।
সিলেটের পাথর কোয়ারি যখন চালু ছিল তখন এ অঞ্চলের মানুষের রোজগার ও সমৃদ্ধি ছিল ব্যাপক। এ অঞ্চলে শত শত কোটি টাকা পাথর ব্যবসায় বিনিয়োগ করে লাখ লাখ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন। এছাড়া লাখ লাখ বারকি শ্রমিক পাথর আহরণ করে তাদের পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন অতিবাহিত করতেন। কিন্তু কোয়ারি বন্ধ করে দেয়ায় এসব মানুষগুলো এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কোটি কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা কর্মক্ষেত্র হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে ঋণখেলাপির দায়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কর্মহীন এ জনপদে তাই বিরাজ করছে মারাত্মক সংকটাপন্ন অবস্থা।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম পাথর আহরণ। অবিলম্বে পাথর কোয়ারি খুলে দিয়ে লাখো মানুষকে বাঁচার সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ব্যবসায়ীরা। অন্যথায় ব্যবসায়ীরা নিয়মতান্ত্রিক ভাবে পুনরায় আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জসিমুল ইসলাম আঙ্গুর, ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি সাহাব উদ্দিন, সহ-সভাপতি বশির আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ষ্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হেকিম, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ এর সদস্য শওকত আলী বাবুল, ব্যবসায়ী আব্দুল আজিদ, মতিউর রহমান, ইলিয়াছুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কবির আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মাহফুজ সহ পাথর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।