সিলেটে আবারো বজ্রপাত
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২০:১১ অপরাহ্ন
৩ জনের প্রাণহানী, হাওরাঞ্চলে আতঙ্ক
স্টাফ রিপোর্টার: সিলেটে আবারো আঘাত হানলো বজ্রপাত। এর সাথে ছিলো বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া। বজ্রপাতে সিলেট বিভাগে শিক্ষার্থীসহ অন্তত: ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সপ্তাহান্তে বজ্রপাতে ৬ জনের মৃত্যু হলো। বোরোর ভরা মওসুমে বজ্রপাতে কৃষকদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বজ্রপাতে শাল্লায় মৃত্যু হয়েছে শিক্ষার্থীর। হবিগঞ্জ ও বড়লেখায় মৃত্যু হয়েছে ২ ধান কাটা শ্রমিকের। এর আগে গত মঙ্গলবার সিলেট অঞ্চলে বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছিলো। এ নিয়ে সপ্তাহান্তে বজ্রপাতে ৬ জনের মৃত্যু হলো। মৃতদের বেশিরভাগই শ্রমিক।
রোববার দিবাগত রাত ও সোমবার ভোররাতে সিলেটের বিভিন্নস্থানে বজ্রবৃষ্টি হয়। বজ্রপাতের বিকট শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন মানুষজন। বিশেষ করে গ্রাম-গ্রামান্তরে বজ্রপাতে কৃষকদের মাঝে আতঙ্কের মাত্রা ছিলো বেশি। বোরোর ভরা মওসুমে বজ্রপাত আতঙ্কে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না অনেকে। অনেকেই ভয় আর আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। আবহাওয়া অধিদফতরও এ সময়ে ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বজ্রপাতে সারাদেশে প্রতিবছর আড়াই থেকে তিনশ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এর অন্তত ৯৩ শতাংশই গ্রামাঞ্চলে হয় এবং ৮৬ শতাংশের হয় মৃত্যু উন্মুক্ত স্থানে। সারাদেশে বজ্রপাতের যে ১৫টি ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হবিগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জের মত জেলা রয়েছে; যেখানে বিস্তৃত ও উন্মুক্ত হাওরাঞ্চল রয়েছে। ফলে বজ্রপাতে এসব অঞ্চলে মৃত্যুর সংখ্যাও দেশের অন্য জেলার তুলনায় বেশি।
বড়লেখা প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মাখন রবি দাস (৪৮) নামে এক চা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত মাখন ওই ইউনিয়নের অহিদাবাদ চা বাগানের মৃত শংকুরা রবি দাসের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, সোমবার মাখন রবি দাস শ্রীধরপুর গ্রামের আলমাছ মিয়ার জমির ধান চুক্তিতে কেটে দিচ্ছিলেন। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলে মাখন মারা যান।
উত্তর শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন সোমবার বিকেল ৫টায় বজ্রপাতে চা শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। পুলিশও এসেছে। লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফনের জন্য নিহতের স্বজনরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করবেন। দিরাই প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের শাল্লায় বজ্রপাতে রিমন তালুকদার (২০) নামে এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছে। সে শাল্লা উপজেলার আটগাও গ্রামের জাহেদ তালুকদারের ছেলে ও শাল্লা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস শহীদের ভাতিজা। সোমবার সকাল সাড়ে ৬ টায় উপজেলার আটগাঁও গ্রামে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, শাল্লা সরকারি কলেজের স্নাতক ৩য় বর্ষের ছাত্র রিমন তালুকদার সকাল সাড়ে ৬ টায় বাড়ির পাশে কালিয়াকোটা হাওরে গরু নিয়ে যায়। তখন তীব্র বজ্রপাত শুরু হলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এসময় বজ্রপাতে একটি গরুও ভস্মিভূত হয়। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.শফিকুল ইসলাম। হবিগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের হাওরে বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন তিনজন। সোমবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
হবিগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আজাদুর রহমান বলেন, সোমবার সকালে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হয়। বানিয়াচং উপজেলার আড়িয়ামুগুর গ্রামের পূবের হাওরে ধান কাটছিলেন কালাবাসী দাসের ছেলে দূর্বাসা দাস (৩৫) ও তাঁর ভাইবোন। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে দূর্বাসা দাস মারা যান। আহত হন তাঁর ভাই ভূষণ দাস (৩৪) ও বোন সুধন্য দাস (২৮)।
এছাড়া বজ্রপাতে বানিয়াচং উপজেলার বাগহাতা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে বায়েজিদ মিয়া (১৩) নামের এক শিশু আহত হয়েছেন। আহত তিনজনকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বজ্রপাতে ৭ জেলায় ১৩ মৃত্যু :
সিলেট ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে রোববার রাত ও সোমবার বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লার মুরাদনগর ও বরুড়া উপজেলায় ৪ জন, কিশোরগঞ্জের অষ্ট্রগ্রাম ও মিঠামইনে ৩ জন, নেত্রকোনার কলমাকান্দা ও মদনে ২ জন, সুনামগঞ্জের শাল্লায় ১ জন, হবিগঞ্জে ১ জন, বড়লেখায় ১ জন এবং চাঁদপুরের কচুয়ায় ১ জন মারা গেছেন।
শক্তিশালী কালবৈশাখীর শঙ্কা :
সিলেটসহ দেশের ৩ বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র বজ্রপাতসহ শক্তিশালী কালবৈশাখী ঝড় অতিক্রম করার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।সোমবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে এ তথ্য জানান কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ। তিনি পোস্টে উল্লেখ করেন, সিলেট ছাড়াও ঢাকা বিভাগের দক্ষিণের জেলাগুলো ও চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলার ওপর দিয়ে তীব্র বজ্রপাতসহ শক্তিশালী কালবৈশাখী ঝড় অতিক্রম করার আশঙ্কা করা যাচ্ছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলার ওপর দিয়ে তীব্র বজ্রপাতসহ শক্তিশালী কালবৈশাখী ঝড় অতিক্রম করার আশঙ্ক শতভাগ। এই আবহাওয়াবিদ কোন জেলায় কোন সময়ের মধ্যে কালবৈশাখী ঝড় অতিক্রম করতে পারে সেই সময়ও উল্লেখ করে দিয়েছেন তার পোস্টে।
বিশেষ করে সিলেট বিভাগে সোমবার রাত ১০টার পর থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টার মধ্যে তীব্র বজ্রপাতসহ হালকা থেকে মাঝারি মানের বৃষ্টি অতিক্রমের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিলেটে শেষ ২৪ ঘন্টায় ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।