বোরো’র ঊৎসবে বজ্রঝড়-বৃষ্টি : নদীর পানি বাড়লেও বন্যা শঙ্কা নেই
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১:০৩:১৭ অপরাহ্ন
সিলেটে ২৪ ঘন্টায় ১১৫ মি.মি বৃষ্টিপাত
স্টাফ রিপোর্টার : বৈশাখ মাস, চারদিকে উৎসবের আমেজ। সেই উৎসবের ঢেউ লেগেছে গ্রাম-গঞ্জে। নতুন ধান ঘরে তোলার ধুম লেগেছে হাওর অঞ্চলে। এই উৎসবের মাঝেই আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে বজ্রপাত, বজ্রবৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়। আগামী ৫ দিন দেশজুড়ে টানা বৃষ্টি ও ঝড়ের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
ওদিকে, প্রাক-বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত ও নদনদীর পানি স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়। এ ধারাবাহিকতায় সিলেটের নদনদীর পানিও অল্প অল্প করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটের কুশিয়ারা ও ধলাই নদীর পানির সমতল মান কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই পানি বৃদ্ধিতে এখন পর্যন্ত বন্যার কোনো শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সিলেটের কোনো নদীর পানি প্রাক-বর্ষাকালের ডেঞ্জার লেভেল অতিক্রম করেনি। তবে কুশিয়ারা নদীর শেরপুর পয়েন্ট ও ধলাই নদীর কমলগঞ্জ পয়েন্টে পানির সমতল মান কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
কুশিয়ারা নদীর শেরপুর পয়েন্টে শুষ্ক মৌসুমে পানির ডেঞ্জার লেভেল থাকে ৭ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। সেখানে সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ৯টায় পানি ছিল ২ দশমিক ৩৭ সেন্টিমিটার। এর আগের দিন রবিবার ওই পয়েন্টে পানি ছিল ২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার এবং শনিবার ছিল ২ দশমিক ২১ সেন্টিমিটার।
ধলাই নদীর কমলগঞ্জ পয়েন্টে শুষ্ক মৌসুমে পানির ডেঞ্জার লেভেল থাকে ১৯ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার। সোমবার সকাল ৯টায় এখানে পানি ছিল ১৪ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার। রবিবার ছিল ১৪ দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার এবং শনিবার ছিল ১৪ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার। এই দুই নদীর নির্ধারিত পয়েন্ট ছাড়া সিলেটের অন্য সব নদীর পানি বিপদসীমার অনেক নিচে অবস্থান করছে।
এদিকে, সিলেট বিভাগে কয়েক দিন ধরেই বৃষ্টিপাত চলছে। শেষ ২৪ ঘন্টায় দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি ঝরেছে সিলেটে, ১১৫ মিলিমিটার।
এ বিষয়ে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তানভীর ইসলাম বলেন, এই প্রাক-বর্ষা মৌসুমে ধীরে ধীরে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পায়। এই পানি মূলত ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও দেশের অভ্যন্তরীণ বৃষ্টিপাতের কারণে বাড়ে। সিলেটের সব নদীর পানি এখনো বিপদসীমার অনেক নিচে রয়েছে। শুধু দুটি নদীর পানির সমতল মান একটু একটু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা স্বাভাবিক। এই হারে পানি বাড়লেও বন্যার কোনো শঙ্কা নেই। বরং কয়েকদিন পর পানি কমতেও শুরু করতে পারে।
এদিকে, আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী পাঁচ দিন টানা দেশজুড়ে বৃষ্টি ঝরবে। এরপর কমবে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা। যদিও এ সময়ের মধ্যে টানা চার দিন তাপমাত্রার তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না। পঞ্চম দিন থেকে দিনের তাপমাত্রা কমে রাতে বাড়বে।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের জন্য দেওয়া পূর্বাভাসে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এ সময় রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর ও বগুড়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ জন্য এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে, বৈশাখ মাসের শুরু থেকেই সিলেটের হাওরাঞ্চলে বোরো ধান কাটার ধুম লেগেছে। কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কৃষকরা। তবে স্বস্তিতে ধান কাটতে পারছেন না তারা। বজ্রপাতে প্রাণহানির আতঙ্ক তাড়া করছে তাদের। প্রায় প্রতিদিনই বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।