মহাসমাবেশ থেকে ২ কর্মসূচী :মামলা প্রত্যাহার, আ’লীগ নিষিদ্ধসহ ১২ দাবি হেফাজতের
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ মে ২০২৫, ৭:৫০:১৯ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : একযুগ পরে ঢাকায় পালন করা মহাসমাবেশ থেকে হেফাজতে ইসলাম দাবি জানিয়েছে, দুই মাসের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সেই সাথে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধসহ ১২ দাবিতে দুইটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী ২৩ মে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও পরবর্তী তিন মাসের বিভিন্ন বিভাগে সম্মেলন। শনিবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব সাজিদুর রহমান।
২০১৩ সালের পাঁচই মে ঢাকার শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের পর এবারই ঢাকায় আবারো বড় আকারের জমায়েত করলো কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক এই সংগঠনটি।দলটির নেতারা শাপলা চত্বরে ঘটনার পর সংগঠনটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা বাতিল, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়েছে। এই মহাসমাবেশ থেকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন হেফাজত নেতারা।
সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদের সময় দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। যদি মনে হয় সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না, তাহলে আঙ্গুল বাঁকা করতে হবে”।
সকাল নয়টায় কর্মসূচি শুরুর সময় থাকলেও ভোর থেকেই ঢাকার বাইরে থেকে মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে যোগ দিতে আসেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। সমাবেশে যারা এসেছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ছিল মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ছিলো।
সকাল দশটার আগেই অনেকটা পূর্ণ হয়ে যায় সমাবেশ প্রাঙ্গণ। যদিও অনেকেই পাশের রমনা পার্ক, মৎস্য ভবন মোড় ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের পাশে অবস্থান করেন।দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীরা বলেন, সরকার কোরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন করলে তারা সেটা যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করবেন। কওমিমাদ্রাসা ভিত্তিক এই সংগঠনের সমাবেশে নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ অংশ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে তিনি অতি দ্রুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।
হেফাজত নেতাদের হুশিয়ারি :
হেফাজতে ইসলামের আমীর শাহ মহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের নেতারা তাদের চারদফা দাবির পাশাপাশি সরকারের নানা কর্মকা-ের সমালোচনা করেও বক্তব্য রাখেন। হেফাজতের আমির মহিবুল্লাহ বাবুনগরীর লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনানো হয় সমাবেশে।
মহাসমাবেশ থেকে নারী সংস্কারের নামে ইসলাম বিদ্বেষী প্রস্তাবনা বাতিল, জাতীয় নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনার বিচার, তার আগে পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করা, ইসরাইলি ও ভারতের পণ্য বর্জন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ভিনদেশিদের অপতৎপরতা বন্ধ ও কাদিয়ানীদের তৎপরতা নিষিদ্ধ করা সহ ১২দফা ঘোষণা পত্র দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক হিউম্যানিটরিয়ান করিডরের নামে বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হরণ করার অপতৎপরতা চালানো হলে তা প্রতিহতের ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে আমরা বলতে চাই, নারী সংস্কারের নামে আল্লাহর কোরআনকে, ইসলামকে কটাক্ষ করা হয়েছে। ধর্মীয় উত্তরাধিকার বিধান, পারিবারিক বিধানকে নারী-পুরুষের বৈষম্যের প্রধান কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করে নারী বিষয়ক কমিশন এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রদান করেছে।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে মামুনুল হক বলেন, ড. ইউনূসের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অনেকবার সাক্ষাৎ করে বিনয়ের সঙ্গে আবেদন করেছে, আমাদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী আমলে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার করেন। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে, সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না।
তিনি বলেন, চব্বিশের জুলাইয়ের স্বাধীনতা সংগ্রামের পর আমি বলতে চাই, আমরা দিল্লির দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছি নিউইয়র্কের গোলামী করবার জন্য নয়। পরে আগামী ২৩ মে শুক্রবার জুমার নামাজের পর সারাদেশে বিক্ষোভসহ দুই দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব সাজিদুর রহমান। মহাসমাবেশে সংহতি জানাতে আসেন দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহও।