পাকিস্তানের আবদালি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ মে ২০২৫, ৭:৪৪:৫৬ অপরাহ্ন
উভয় সীমান্তে বাংকার তৈরীর হিড়িক
জালালাবাদ রিপোর্ট : পাকিস্তান শনিবার আবদালি ক্ষেপণাস্ত্র-ব্যবস্থার সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে। এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য। এই ক্ষেপণাস্ত্র ৪৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের লক্ষ্য ছিল সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি যাচাই এবং ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত নেভিগেশন ও গতি-সংক্রান্ত প্রযুক্তিগত দিকগুলো পরীক্ষা করা।
আইএসপিআর জানায়, এই উৎক্ষেপণ ‘এক্স সিন্ধু’ নামে একটি সামরিক মহড়ার অংশ ছিল। মহড়ায় উপস্থিত ছিলেন আর্মি স্ট্র্যাটিজিক ফোর্সেস কমান্ডার (এএফএসসি), স্ট্র্যাটিজিক প্ল্যান ডিভিশন ও এএফএসসির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এবং পাকিস্তানের কৌশলগত সংস্থাগুলোর বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফসহ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা এই সফল উৎক্ষেপণের জন্য সেনা, বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের অভিনন্দন জানান। আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় পাকিস্তানের কৌশলগত বাহিনীর প্রস্তুতি ও প্রায়োগিক দক্ষতায় পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেন তাঁরা। ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলাকে ঘিরে যখন ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চলছে, ঠিক তখন ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণ পরীক্ষা চালানো হলো। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে এক হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগই পর্যটক ছিলেন। এটিকে ২০০০ সালের পর অন্যতম ভয়াবহ হামলা বলা হচ্ছে।
পাকিস্তানের দিকে ইঙ্গিত করে ভারত দাবি করেছে, এই হামলার সঙ্গে আন্তসীমান্ত সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। পাকিস্তান এই অভিযোগ প্রমাণহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে।
এদিকে, ভারত ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখার দুই পাশের কাশ্মীরি মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে গেলে তাঁরাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এজন্য আগেভাগেই দুই পাশের আতঙ্কে থাকা মানুষ বাংকার সংস্কার করছেন।
কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে বেসামরিক নানা বিধিনিষেধ ঘোষণার পরও কাশ্মীরের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, পরিস্থিতি হয়তো এর চেয়ে খারাপ হবে না। কয়েক দিন ধরে দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর গোলাগুলির কারণে বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছেন সীমান্তের দুই পাশে বসবাসরত মানুষ।
গত সপ্তাহে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি সেক্টরের তুতমার গলি পোস্ট এবং পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত লিপা সেক্টরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। তবে এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এহসান-উল-হক শামি পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত লিপা উপত্যকার বাসিন্দা। ওই অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার এবং সেখানকার বেশির ভাগ মানুষই আইন মেনে চলেন। নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে শামির বাড়ি। ২০১৯ সালে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলিতে তাঁর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি জানিয়েছেন, একইভাবে ২০০২ ও ১৯৯৮ সালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তাঁর বাড়ি।
পেশায় আইনজীবী শামি বলেন, ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামের ঘটনার পর গত শুক্র ও শনিবার পাকিস্তান-ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। শুক্র ও শনিবার মধ্যরাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি চলে। এরপর শনিবার রাতে আবার গুলিবর্ষণ শুরু হয়। ওই দিন রাত ১০টায় গোলাগুলি শুরু হয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত চললেও সাধারণ মানুষকে অবশ্য নিশানা হতে হয়নি।