সাপের ছোবল খাওয়া ব্যক্তির রক্ত থেকে অ্যান্টিভেনম তৈরি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ মে ২০২৫, ৮:২১:৫৭ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২০০১ সাল থেকে ১৮ বছর ধরে অন্তত ২০০টি সাপের কামড় খেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের টিম ফ্রিড। গোখরাসহ বিশ্বের ভয়ঙ্কর নানা সাপের বিষ ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে নিয়েছেন ৭০০ বারের বেশি। এক সময় ট্রাক সারাই ছিল তার পেশা। পরে সাপ নিয়ে কাজ করা হয়ে যায় নেশা। শুরুতে তিনি নিজের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চেয়েছিলেন যাতে সাপ ধরার সময় তিনি নিজেকে রক্ষা করতে পারেন এবং নিজের এই কীর্তিকলাপ তিনি ভিডিও করে ইউটিউবে রেকর্ড করে রাখতেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, টিম ফ্রিডের রক্তে এমন এক ধরনের অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে যা মারাত্মক ধরনের বিষের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। টিমের রক্তে পাওয়া অ্যান্টিবডি প্রাণীদের ওপর পরীক্ষা করা হয়। ওই পরীক্ষায় দেখা গেছে এই অ্যান্টিবডি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীকে সাপের বিষের মারাত্মক ডোজ থেকে রক্ষা করেছে। সাপের বিষ কাটাতে বর্তমানে যে থেরাপিগুলো প্রচলিত আছে তা নির্দিষ্ট প্রজাতির সাপের বিষ অনুযায়ী কাজ করে, অর্থাৎ কোনো ব্যক্তিকে যে সাপ কামড়েছে, সেই প্রজাতির সাপের জন্য তৈরি অ্যান্টিভেনমই দিতে হয়।
ফ্রিডের ১৮ বছরের এই প্রচেষ্টা সব ধরনের সাপের কামড়ের বিরুদ্ধে একটি সার্বজনীন অ্যান্টিভেনম তৈরির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। য় দুই দশক ধরে ইচ্ছাকৃতভাবে শরীরে সপের বিষ নিচ্ছেন টিম ফ্রিড। তবে এসব শুরুর আগে গোখরার দুটি কাপড় খেয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। বিবিসিকে তিনি বলেন, আমি মারা যেতে চাইনি, আমার একটি আঙুলও হারাতে চাইনি। কাজ করতে পারবো না এমন পরিস্থিতির শিকার হতে চাইনি আমি।
প্রায় ১৮ বছর ধরে টিম ফ্রিড যে কাজ করছেন, তার ফলে সাপের কামড়ের চিকিৎসায় একটি সার্বজনিন ওষুধ বা অ্যান্টিভেনম তৈরি করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যেখানে সাপের কামড়ে প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজারেরও মতো মানুষের মৃত্যু হয় এবং এর তিনগুণেরও বেশি মানুষ অঙ্গ কেটে ফেলা বা স্থায়ী পঙ্গুত্বের শিকার হয়।
ফ্রিড বলেন, তার লক্ষ্য ছিল বিশ্বের অন্যান্য মানুষের জন্য ভালো থেরাপি তৈরি করা। ‘এটা একসময় আমার জীবনযাত্রার অংশ হয়ে যায়। আমি নিজেকে ঠেলে ঠেলে এগিয়ে যেতে থাকি—তাদের জন্য, যারা আমার থেকে আট হাজার মাইল দূরে সাপের কামড়ে মারা যাচ্ছে।’
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক পিটার কোয়াং বলেন, আমার ধারণা, আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে আমরা প্রতিটি শ্রেণির বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর কিছু পেয়ে যাব। এবং ফ্রিডের রক্তের নমুনা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।
অধ্যাপক কোয়াং আরও বলেন, টিমের অ্যান্টিবডিগুলো সত্যিই অসাধারণ—সে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শিখিয়েছে কীভাবে খুব বিস্তৃতভাবে বিষকে চিনতে হয়। চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো, এমন একটি একক অ্যান্টিভেনম তৈরি করা যা সব বিষের বিরুদ্ধে কাজ করবে, অথবা ইলাপিডের জন্য একটি ইনজেকশন এবং ভাইপারের জন্য একটি ইনজেকশন।
লিভারপুল স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের সাপের বিষ বিষয়ক গবেষণা ও চিকিৎসা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নিক কেসওয়েল বলেন, এই গবেষণায় সাপের কামড় থেকে সুরক্ষা পাওয়ার যে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা মানুষের জন্য অনেক উপকারী হবে। এই পদ্ধতি অবশ্যই নতুন এবং এখন পর্যন্ত যেসব তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এই অ্যান্টিভেনম তৈরির চেষ্টা সফল হওয়ার দৃঢ় সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে এখনও অনেক কাজ বাকি আছে এবং এই অ্যান্টিভেনম মানুষের ওপর ব্যবহারের আগে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন। তবে ফ্রিডের জন্য, এই পর্যায়ে আসা একটি আত্মতৃপ্তির বিষয়। তিনি বলেন, আমি মানবতার জন্য ভালো কিছু করছি এবং এটি আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি এতে গর্বিত। এ এক দারুণ অনুভূতি।