সিলেট আসছেন না খালেদা জিয়া, ফিরছেন বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ মে ২০২৫, ১০:৩০:২৬ অপরাহ্ন
সিলেট বিএনপির অভ্যর্থনা কর্মসূচী বাতিল
স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ বিমানে আসছেন না, তাই সিলেট আসাও হচ্ছে না বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার। কাতারের আমীরের দেওয়া বিশেষ বিমানে (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) করে দেশে ফিরবেন তিনি।
আগামীকাল সোমবারই (৫ মে) ওই বিমানে করে খালেদা জিয়া দেশে রওয়ানা হবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশে পৌঁছাবেন মঙ্গলবার।
শনিবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মির্জা ফখরুল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, যে বিমানে তিনি (খালেদা জিয়া) গেছেন, কাতারের রয়েল অ্যাম্বুলেন্স, সেই অ্যাম্বুলেন্সের ফ্লাইটেই তিনি ফিরে আসবেন। সময়টা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। সময়টা নির্ভর করবে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর। যখনই নিশ্চিত হব, আবার গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌঁছে দেব। এর আগে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, রোববার সন্ধ্যায় লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশে রওনা হবেন খালেদা জিয়া। সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে ১ ঘন্টার যাত্রাবিরতি দিয়ে ঢাকায় ফিরবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিলেট আসা হচ্ছেনা।
এদিকে, বেগম খালেদা জিয়াকে সিলেটে অভ্যর্থনা জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলো সিলেট বিএনপি। তাঁর আগমন উপলক্ষে সিলেটের বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন বিমানবন্দরে তাকে গণঅভ্যর্থনা কর্মসূচির আয়োজন করেছিলো। কিন্তু তাঁর সিলেট আসা বাতিল হওয়ায় ওসমানী বিমানবন্দরে আয়োজিত সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির ৫ মে’র সব কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ আহমদ সিদ্দিকী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সোমবার বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে সকাল ৯টার দিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রা বিরতি করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা নিশ্চিত নয়। আর তাই সিলেট জেলা-মহানগর বিএনপি ও অংগসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সোমবার সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে না যাওয়ার জন্য এবং কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না করার জন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া লন্ডনে যান। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কথা জেনে রাজকীয় বহরের বিশেষ বিমান দিয়েছেন। ওই বিশেষ বিমানে (বিশেষ ধরনের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) করে তিনি লন্ডনে যান। লন্ডনে চিকিৎসা শেষে চার মাস পর খালেদা জিয়ার দেশে ফিরছেন তিনি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চার মাস পর চিকিৎসা শেষে খালেদা জিয়া দেশে ফিরছেন। স্বাভাবিকভাবে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আবেগ আছে। তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো নৈতিক দায়িত্ব। সারা দেশের মানুষ অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত আছে। শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে জনগণ যেন তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে পারেন, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে, শুধু বেগম জিয়াই নয়, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছেন সিলেটের কন্যা তাঁরই পুত্রবধূ ডা জুবাইদা রহমান ও ছোট পুত্রবধু শর্মিলা রহমান। এছাড়া খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, এপিএস মাসুদুর রহমান ও দুই গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগম ও রূপা হকও সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন।
বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রমহানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান স্বামীর সঙ্গে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দেশ ছেড়েছিলেন। এরপর দীর্ঘ সাড়ে ১৬ বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও আর দেশে ফেরা হয়নি তার। স্বামী তারেক রহমান ও একমাত্র কন্যা জাইমাকে নিয়ে ১৬ বছর সাত মাস ধরে লন্ডনে বসবাস করছেন ডা. জুবাইদা রহমান। এবার তার দেশে ফেরার অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
সরানো হয় বিমানের দুই কেবিন ক্রুকে :
বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইন্সের খালেদা জিয়া দেশে ফেরার আগেই ওই ফ্লাইট থেকে দুইজন কেবিন ক্রুকে সরিয়ে দিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। ওই দুই কেবিন ক্রু হলেন- আল কুবরুন নাহার কসমিক ও মো. কামরুল ইসলাম।
খালেদা জিয়া বিমানে যে ফ্লাইটে আসার কথা ছিলো, ওই ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে সরিয়ে দেওয়া হলো তা নিয়ে বিমানে নানা আলোচনা চলছে। বিমানের প্রশাসন বিভাগ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কেবিন ক্রু আল কুবরুন নাহার কসমিক ও মো. কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। নিরাপত্তাজনিত শঙ্কা ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্যে তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং ভিআইপি যাত্রীর নিরাপত্তার সম্ভাব্য ঝুঁকির কথা উঠে আসায় শুক্রবার মধ্যরাতে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে দুজনের নাম বাতিল করা হয়। পরে ফ্লাইট পার্সার ডিউক এবং ফ্লাইট স্টুয়ার্ডেস আনহারা মারজানকে ওই ফ্লাইটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।