শমসেরনগরকে সম্ভাবনাময় রুট হিসেবে দেখছে বেসরকারি এয়ারলাইন্স
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ মে ২০২৫, ৯:৩০:৩০ অপরাহ্ন
তামিম মজিদ : মৌলভীবাজারের শমসেরনগর বিমানবন্দর চালুর ঘোষণায় সেখানে ফ্লাইট চালাতে আগ্রহের কথা জানিয়েছে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো। বিমানবন্দরটি চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সাম্প্রতিক উদ্যোগ আশার আলো জেগেছে এভিয়েশন সেক্টরে। ঢাকা-শমসেরনগর রুটকে খুবই সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছে দেশের বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো। এ বিমানবন্দরটি চালু হলে মৌলভীবাজরের পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৌলভীবাজার জেলা পর্যটন ও প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় রুটটি খুবই সম্ভাবনাময়। বিমানবন্দরটি চালু করলে বেবিচকেরও রাজস্ব বাড়বে। ফলে মৌলভীবাজার তথা বিশেষ করে শ্রীমঙ্গলের উদীয়মান পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামীর অর্থনীতি পর্যটন কেন্দিক। পর্যটন শিল্প দেশের জিডিপিতে বড় অবদান রাখবে। তাই এ খাতকে বিকশিত করতে হলে নতুন বিমানবন্দর চালুর বিকল্প নেই। বিশেষ করে শমসেরনগর বিমানবন্দর চালু হলে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ অঞ্চলের পর্যটন খাতের বিকাশ ঘটবে। এতে তৈরি হবে বহুমাত্রিক কর্মসংস্থান। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের পাশাপাশি প্রবাসীদেরও বিদেশ যেতে সহজ হবে।
তথ্য মতে, ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে দেশের বৃহত্তম এ বিমানবন্দরটি সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর চা বাগানের ৬২২ একর জমি অধিগ্রহণ করে নির্মিত হয় এ বিমানবন্দর।
স্বাধীনতার পর ১৯৯৫ সালে বেসরকারিভাবে অ্যারোবেঙ্গল এয়ার সার্ভিসের ফ্লাইট চালু হলেও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে ফ্লাইটটি কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে এ বিমানবন্দর যাত্রী সেবার জন্য মৌখিকভাবে চালুর ঘোষণা দিলেও কাগজেকলমে কোনো উদ্যোগে দেখা যায়নি।
তবে গত ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) শমসেরনগর বিমানবন্দর চালুর ঘোষণা দেয়ার পর আশার আলো জেগেছে এভিয়েশন সেক্টরে। নতুন এ রুটটি খুবই সম্ভাবনাময় হিসেবেও দেখছে এয়ারলাইন্সগুলো।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাসিন্দা ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। যাত্রীসেবার পাশাপাশি ভৌগোলিক কারণে এ বিমানবন্দরের সামরিক গুরুত্বও রয়েছে। এছাড়া শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মানের রিসোর্ট, যেখানে প্রতিনিয়ত দেশ বিদেশের পর্যটকরা যান। এ বিমানবন্দরে ফ্লাইট চালু হলে মৌলভীবাজারের পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ হবে। বিকশিত হবে সম্ভাবনাময় এ খাত।
জানা গেছে, শমসেরনগর বিমানবন্দর চালু হলে বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা ও এয়ার অ্যাস্ট্রা ফ্লাইট চালু করবে। প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন একটি করে ফ্লাইট চালাবে এ রুটে। পরবর্তীতে চাহিদা থাকা সাপেক্ষে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানান এয়ারলাইন্স দুটির কর্মকর্তারা। এছাড়া বেসরকারি এয়ারলাইন্স শমসেরনগরে ফ্লাইট চালালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও সেখানে ফ্লাইট চালু করতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, ‘সরকার বিমানবন্দরে ফ্লাইট চালুর সুযোগ সুবিধা তৈরি করলে আমরা সেখানে প্রতিদিন একটি ফ্লাইট চালাবো। সেখানকার অনেক প্রবাসীদেরও সুবিধা হবে। এছাড়া মৌলভীবাজারে প্রতিদিন অনেক পর্যটক যাতায়াত করেন, সুতরাং এ রুট সম্ভাবনাময়। এ রুট চালু হলে মৌলভীবাজারের মানুষেরও সুবিধা হবে। সরকারের উচিত, এ বিমানবন্দরটি চালু করা।’
এয়ার অ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফ জালালাবাদকে বলেন, শমসেরনগর রুট খুবই সম্ভাবনাময়। সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে বিমানবন্দরটি চালু করলে এয়ার অ্যাস্ট্রা সেখানে ফ্লাইট চালাবে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম জালালাবাদকে বলেন, ‘আকাশ পথে যাতায়াতে পৃথিবীর অনেক দেশই গুরুত্ব দিচ্ছে। নতুন বিমানবন্দর তৈরি করছে। যাতায়াত ব্যবস্থা যখন উন্নত হয়, তখন একটি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন সবই বিকশিত হয়। সরকার শমসেরনগর বিমানবন্দর সংস্কার করে চালু করলে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সেখানে ফ্লাইট চালাবে’। উল্লেখ্য যে, নভোএয়ার সম্প্রতি ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বর্তমানে দেশে দুটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স রয়েছে।