ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আর নেই: আজ আজিমপুরে দাফন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ মে ২০২৫, ১২:০১:০৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, সিলেটের কৃতীসন্তান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার বিকেলে ৪টা ১০ মিনিটে ঢাকার ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বেশ কিছুদিন ধরে গুরুতর অসস্থ অবস্থায় এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মরহুমের প্রথম জানাজা গতকাল রোববার বাদ এশা ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন, মরহুমের ছোট ছেলে ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিকী। আজ সোমবার বেলা ১১টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা এবং জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে তৃতীয় জানাজা শেষে ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
এদিকে বাদ এশা ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে অনুষ্ঠিত জানাজার পূর্বে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী মাওলানা এটিএম মাসুম, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী ও সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমীর মু. সেলিম উদ্দিন, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনির প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর ১১ বছর পর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। এরপর সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় আবারো কাজ শুরু করেন। গত ৬ জানুয়ারি জুনিয়র আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনে তাকে সংবর্ধনা দেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের আইনজীবী ছিলেন।
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের জন্ম ১৯৪৯ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের শেখলাল গ্রামে। বিএ (অনার্স) ও এম এ ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮০ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি লন্ডনেই আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। দেশে ফিরে ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। তিনি ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৪ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৯০ সালে তিনি দ্য ল’ কাউন্সেল নামে একটি আইনি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী হন।
প্রধান বিচারপতির শোক: ব্যারিস্টার আব্দুরর রাজ্জাকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এক শোকাবার্তায় তিনি মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। ব্যারিস্টার রাজ্জাকের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে প্রধান বিচারপতি বলেন, তাঁর প্রয়াণে দেশের আইন অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
জামায়াতের শোক: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক এর ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
এক যুক্ত যুক্ত শোকবাণীতে তারা বলেন, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক এর ইন্তিকালে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি অত্যন্ত সুনামের সাথে প্রতিটি দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে পেশাদারিত্ব, স্বচ্ছতা এবং দায়িত্ববোধের যে উদাহরণ স্থাপন করেছেন তা একবারেই বিরল। আমাদের জানা মতে সত্যিকারের মজলুমদের পাশে দাঁড়াতে তিনি কখনো কারো সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির পরওয়া করতেন না। অনেক ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে তিনি আইনি সহায়তা প্রদান করেছেন। মজলুমানের পক্ষে তাঁর এ লড়াই ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মজলুমদের পক্ষ থেকে আমরা তাঁকে গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি। তাঁর ইন্তিকালে জাতি একজন প্রবীণ খ্যাতিমান আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও অভিভাবককে হারালো। জাতির বর্তমান সংকটকালে তার মত একজন দেশপ্রেমিক ও ইসলামপন্থী আইনজীবীর বড়ই প্রয়োজন ছিলো। তাঁর ইন্তিকালে আমরা আমাদের অতি আপনজনকে হারানোর বেদনা অনুভব করছি। আল্লাহ তাআলা তাঁর এ শূন্যতা পূরণ করে দিন।
আমরা তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনা করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট দোয়া করছি যে, তিনি তাঁর জীবনের গুনাহসমূহ মাফ করে দিন, তাঁর নেক আমলসমূহ কবুল করুন এবং তাঁকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে গ্রহণ করে উচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমরা তাঁর শেক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আল্লাহ আআলা আমাদের সবাইকে এ শোক সহ্য করার তাওফিক দান করুন, আমীন।”
মাওলানা ফরীদ উদ্দিন চৌধুরীর শোক: সিলেটের কৃতীসন্তান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ইন্তেকালে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি মাওলানা ফরীদ উদ্দিন চৌধুরী। এক শোকবার্তায় তিনি এদেশে ইসলামী আন্দোলনে মরহুমের অবদানের কথা স্মরণ করেন এবং মহান আল্লাহর দরবারে তার মাগফেরাত কামনা করেন।