শাপলাকান্ডের এক যুগ; মামলা আছে, প্রমাণ নেই!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ মে ২০২৫, ১০:০০:৫২ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: এক দশক আগে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা ৫১টি মামলার অর্ধেকেই পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে অভিযোগের ‘সত্যতা না পাওয়ার’ কথা উল্লেখ করে। এসব প্রতিবেদন জমা পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অর্থাৎ গত আগস্টে। ঢাকার আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখা জানায়, ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, রমনা, শাহবাগ ও যাত্রাবাড়ী থানায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয় মোট ৫১টি। এর মধ্যে ২৫টির তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ‘ফাইনাল রিপোর্ট’ জমা দিয়েছে পুলিশ। ২৪টি মামলা এখনো তদন্তাধীন এবং দুটি মামলা উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে আটকে আছে।
হেফাজতে ইসলাম কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হিসেবে ২০১০ সালে নারী উন্নয়ন নীতি ও শিক্ষা নীতির বিরোধিতা করে আত্মপ্রকাশ করে। তবে সংগঠনটি আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে পাল্টা অবস্থানে গিয়ে। ৫ মে তারা ১৩ দফা দাবিতে শাপলা চত্বরে বিশাল সমাবেশ করে এবং দাবি না মানা পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
পুলিশ ও হেফাজত কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে মতিঝিল ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক সহিংসতা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়। রাতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ অভিযান চালিয়ে হেফাজত কর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হয়।
ওই রাতে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ দাবি করে ৬১ জন নিহত হন। তবে পুলিশের ভাষ্য, রাতের অভিযানে কেউ নিহত হয়নি এবং সারাদিনের সংঘাতে নিহতের সংখ্যা ১১।ঢাকায় করা ৫১টি মামলার মধ্যে পল্টন মডেল থানায় দায়ের হয় সবচেয়ে বেশি—৩৬টি। সেখান থেকে ২২টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রসিকিউশন এসআই মো. রুকনুজ্জামান। মতিঝিল থানার ছয়টি মামলার মধ্যে দুটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেয়েছে, দুটি তদন্তাধীন এবং দুটি স্থগিত।
শাহবাগ থানার চারটি মামলার সবকটিই তদন্তাধীন। রমনা থানার দুই মামলার মধ্যে একটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা পড়েছে। যাত্রাবাড়ী থানার তিনটি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “এসব মামলার অধিকাংশই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় আদালত বেশ কয়েকটি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলা নিষ্পত্তি করেছেন।”
এদিকে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ বলেন, “২০১৩ সালের ৫ মে আলেমরা ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু সরকার নির্মমভাবে তাদের দমন করে এবং ভিত্তিহীন মামলায় জড়িয়ে দেয়। এখন অন্তর্বর্তী সরকার এ মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেবে বলে আমরা আশা করছি।”
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে প্রতিবেদন উল্লেখ করেছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
শাপলা চত্বরে ‘গণহত্যা’র অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে। একটি করেছে বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী, যেটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। অন্যটি হেফাজতে ইসলাম দায়ের করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে, যেখানে শেখ হাসিনাসহ ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।