ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের দামামা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মে ২০২৫, ১০:৩০:৩৮ অপরাহ্ন
♦ গভীর রাতে ভারতের হামলা, পাকিস্তানে নিহত ২৬ ♦পাকিস্তানের আকাশ-স্থলে জবাব, ভারতে নিহত ১৫ ♦ ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত
♦ ভারতের টার্গেটে মসজিদ, ঘুমন্ত মানুষ
জালালাবাদ রিপোর্ট : গভীর রাতে পাকিস্তানের ঘুমন্ত মানুষের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ভারত। হামলার টার্গেটে ছিলো মসজিদ ও আশপাশের এলাকা। তাৎক্ষণিক স্থলে ও আকাশপথে পাল্টা জবাব দিয়েছে পাকিস্তানও। তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত করেছে। হামলা পাল্টা হামলায় ভারতের ১৫ জন ও পাকিস্তানে ২৬ জন নিহত হয়েছেন। বিনা উস্কানিতে ভারতের হামলা দুই দেশকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় গোটা বিশ্বের নজরও এখন সেদিকে।
ভারতকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যায়িত করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, তারা পাকিস্তানের ভেতরে পাঁচটি জায়গায় ‘কাপুরুষোচিত’ হামলা চালিয়েছে। এই ঘৃণ্য আগ্রাসনমূলক পদক্ষেপ শাস্তি ছাড়া পার পাবে না।
দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাতের ইতিহাস আছে। এই ঘটনা একটি বিপজ্জনক অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে। ভারতের হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে পাকিস্তান। সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ জবাব দেয়ার অনুমতি দিয়েছে পাক নিরাপত্তা পরিষদ। তবে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল উভয় পক্ষকে সংযম দেখাতে আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের হামলাকে লজ্জাজনক বলে অভিহিত করেছেন। তবে একই সঙ্গে তার বক্তব্য, বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।
টার্গেট মসজিদ, পাকিস্তানে নিহত ২৬ :
গভীর রাতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিশেষ করে মসজিদ ও মুসল্লিকে টার্গেট করেছে ভারত। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দিয়ে এই অভিযান চালিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। এর আওতায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের নয়টি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে।পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের ৬টি স্থানে মঙ্গলবার রাত ও বুধবার ভোরের হামলায় ২৬ জন নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানিয়েছেন, আহমেদপুর ইস্ট এলাকায় সুবহান আল্লাহ মসজিদে হামলায় ১৩ জন নিহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে তিন বছরের ২টি শিশু, ৭ জন নারী ও ৪ জন পুরুষ রয়েছেন। ওখানে আহত হয়েছেন ৩৭ জন। এছাড়া মুজাফফারবাদের কাছে বিলাল মসজিদে হামলায় ৩ জন নিহত এবং ২ জন আহত হয়েছেন।
কোটলির আব্বাস মসজিদে ১৬ বছর বয়সী একজন কিশোরী ও ১৮ বছর বয়সী এক তরুণ নিহত, এবং দ্ইুজন আহত হয়েছেন। মুরিদকের উম আল-কুরা মসজিদে হামলায় তিনজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। শিয়ালকোট ও শাকারগড় এলাকায়ও হামলা করা হয়েছে, কিন্তু সেখানে কেউ হতাহত হননি।
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে ভারতের হামলার সময় স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ সময় নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আশপাশের পাহাড়গুলোর দিকে ছুটে যান তাঁরা। রয়টার্সকে স্থানীয় বাসিন্দারা এ কথা জানান।
হামলার সময়ের পরিস্থিতি বর্ণনা করে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, চারপাশে বিস্ফোরণের শব্দ হচ্ছিল, ভূমি কেঁপে উঠছিল। তখন মসজিদের লাউড স্পিকারগুলোতে ঘোষণা দিয়ে লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হচ্ছিল।
৪৬ বছর বয়সী বাসিন্দা মুহাম্মদ শায়ের মীর বলেন, ‘(বিস্ফোরণের শব্দ শুনে) আমরা ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসি। তখন আরও বিস্ফোরণ হয়। পুরো ঘর কেঁপে উঠছিল। সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আমরা বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে পাহাড়ের দিকে চলে যাই।’
ভারতে নিহত ১৬ ও ৫ যুদ্ধবিমান ‘ভূপাতিত’ :
ভারতের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত থেকে পাকিস্তানের কামানের গোলা হামলায় ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৪৩ জন আহত হয়েছেন। ভারতের সেনাবাহিনীর বরাতে বুধবার বিবিসির লাইভে এ কথা বলা হয়েছে। ভারতের সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুঞ্চ এবং তাংধর এলাকার বেসামরিক এলাকায় গোলাবর্ষণ করা হয়েছে।
এদিকে রয়টার্স জানিয়েছে, পাকিস্তানের পাল্টা জবাবে পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জানান, এর মধ্যে তিনটি ফ্রান্সের তৈরি রাফাল, একটি রাশিয়ার তৈরি সু-৩০ ও অন্যটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান। সু-৩০ ও মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান সোভিয়েত আমলে তৈরি।
পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে গত মাসের শেষের দিকে খবর পাওয়া যায়, ফ্রান্স থেকে আরও ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করেছে ভারত। ভারতের হাতে থাকা ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমানের সঙ্গে নতুন ২৬টি এলে দেশটির রাফাল যুদ্ধবিমানের বহর আরও শক্তিশালী হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছিল।
এই ২৬ রাফাল যুদ্ধবিমানের মূল্য প্রায় ৭৪০ কোটি ডলার। নিজেদের সামরিক সরঞ্জাম দ্রুত আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ফ্রান্স থেকে এসব যুদ্ধবিমান কিনছে নয়াদিল্লি।
রাফাল যুদ্ধবিমানগুলো তৈরি করেছে ফরাসি মহাকাশ সংস্থা দাসোঁ এভিয়েশন। বলা হয়, এগুলো ভারতের নিজেদের তৈরি বিমানবাহী রণতরি থেকে পরিচালিত হবে। রাশিয়ার মিগ-২৯ এর জায়গায় নতুন রাফাল যুদ্ধবিমানগুলো যুক্ত করার কথাও জানানো হয়।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানায়, দেশটির মাটিতে আক্রমণে অংশ নেওয়ার পরই ওই পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমানকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে।ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, ভারতের পাঁচটি বিমান, কয়েকটি মনুষ্যবিহীন আকাশযান (ড্রোন) ও নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর কিছু ফাঁড়ি ধ্বংস করা হয়েছে।
পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে ‘সমুচিত জবাব’ দেওয়ার অনুমতি :
পাকিস্তান বলেছে, জাতিসংঘ সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদের আওতায় তাদের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। দেশটি হুঁশিয়ার করে বলেছে, সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন ও বেসামরিক লোকজনকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে সময়মতো ভারতের বিরুদ্ধে জবাব দেওয়ার অধিকার রাখে তারা। বুধবার পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকের পর দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, নিজেদের বিচার–বিবেচনা অনুযায়ী ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে, পাকিস্তান ভারতের ওই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের প্রতি শোক জানিয়েছে তারা। ভারতের হামলাকে ‘উসকানিমূলক ও কাপুরুষোচিত’ উল্লেখ করে ইসলামাবাদ বলেছে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।
বিশ্ব কী বলছে :
এই হামলা আন্তর্জাতিক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং দুই দেশকে আরও সংঘর্ষ এড়াতে আহ্বান জানানো হচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ভারতের হামলা নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, বিশ্ব এমন সামরিক সংঘাত সহ্য করতে পারবে না। পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের সীমান্ত এলাকায় ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনাকে লজ্জাজনক অভিহিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘এটা লজ্জাজনক, আমরা এইমাত্র এটি সম্পর্কে শুনলাম। তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় মানুষ বুঝতে পারছিল যে কিছু ঘটতে চলেছে। তারা দীর্ঘকাল ধরে লড়াই করছে।’
যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহেই উভয় পক্ষকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছিল। সর্বশেষ হামলার পর জানিয়েছে যে তারা পরিস্থিতি ‘নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আমরা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত। তবে এই মুহূর্তে আমাদের কোনো মূল্যায়ন নেই। এটি একটি ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি এবং আমরা তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন ও জাপানও উভয় পক্ষকে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে।