শান্তিগঞ্জে সহজ প্রক্রিয়ায় ধান কিনছে খাদ্যগুদাম
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ মে ২০২৫, ৭:১৮:৩০ অপরাহ্ন
শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি: উপজেলা পর্যায়ে ধান ক্রয় বিক্রয় একটি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অংশ মনে করেন অনেক সাধারণ কৃষক। খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে নানা নিয়মের মারপ্যাঁচে পড়তে হয় কৃষকদের। একবার যারা ধান বিক্রি করতে যান তারা আর এই চেষ্টা করেন না। তাছাড়া ধান বিক্রির টাকা পেতে দেরি হওয়ায় অনেকে সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে অনাগ্রহ দেখান। এটি ছিলো সরকারি খাদ্য গোদামে ধান বিক্রি করতে গিয়ে কৃষকদের এতোদিনের ধারণা। তবে এ বছর এমনটা হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন শান্তিগঞ্জ উপজেলা কৃষি ও খাদ্য কর্মকর্তা। তারা বলছেন, কৃষকদের কথা মাথায় রেখে খুব সহজ প্রক্রিয়ায় এবছর ধান ক্রয় করা হচ্ছে। টাকাও দেওয়া হচ্ছে হাতে হাতে। জটিল কোনো প্রক্রিয়াই নেই এ বছর। কৃষকরা চাইলেই খুব সহজে সরকারের কাছে ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রি করতে পারবেন।
জানা যায়, খলায় খলায় গিয়ে ধান ব্যবসায়ী নামের এক শ্রেণির ‘সিজনাল’ ফরিয়াবাজরা কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনছেন। প্রতিমন ধানের দাম দিচ্ছেন ৯শ’ থেকে ১ হাজার। যেখানে সরকার মূল্য নির্ধারণ করেছে ১৪শ’ ৪০ টাকা। সরকারের ধান ক্রয় প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় কৃষকরা ফরিয়াবাজদের কাছে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন বলে জানিয়েছেন একাধিক কৃষক। তারা জানান, যদি ইউনিয়ন পর্যায়ে অস্থায়ী গুদাম করে হাতে হাতে টাকা দিয়ে সরকার ধান ক্রয় করতো তাহলে কৃষকদের অনেক ভোগান্তি দূর হতো এবং ফরিয়াবাজরা এ সুযোগ পেতো না।
উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, সরকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে এবছর ১৫শ’ ১২ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করা হবে। ইতোমধ্যে ধান ক্রয় শুরু করেছেন তারা। আগামী আগস্ট মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত ধান ক্রয় করবে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয়। খুব সহজ প্রক্রিয়া মেনে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনছে সরকার। একজন কৃষক সর্বনি¤œ ৩ মন থেকে সর্বোচ্চ ৩৮ মন ধান সরকারি গুদামে বিক্রি করতে পারবেন। প্রতিমন ধানের দাম ধরা হয়েছে ১৪শ’ ৪০ টাকা। সূত্র জানিয়েছে, কৃষকরা যেনো কোনো অবস্থাতেই ফরিয়াবাজ বা সিন্ডিকেটের কবলে না পড়েন সেদিকে নজর রেখেই কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় জানিয়েছে, শুকনো এবং পরিষ্কার ধান ক্রয় করছে উপজেলা খাদ্য অফিস। ধানের আর্দ্রতা থাকতে হবে ১৪ শতাংশের কম। ধান শুকানোর পর যখন ধানের রং উজ্জল সোনালী বর্ণ অথবা ধানের স্বাভাবিক রং ধরে তখন বুঝা যাবে ধান ভালো করে শুকিয়েছে। এছাড়াও একটি ধান থেকে চাল বের করে কামড় দিলে যখন চাল ভাঙার শব্দ ‘কট’ করে উঠে অর্থাৎ চাল থেকে আওয়াজ হয় তখন বুঝা যাবে ধানের আদ্রতা ১৪ শতাংশের কম।
একজন প্রকৃত কৃষক সরকারি গুদামে নিজেই ধান বিক্রি করতে পারবেন। এজন্য কোনো ভায়া বা মাধ্যম ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই। যেসব কৃষকের নিজস্ব কৃষি কার্ড আছে তারা কৃষি কার্ডের ফটোকপি সাথে করে খাদ্য গুদামে ধান নিয়ে গেলেই দেখে মেপে ধান রেখে দিচ্ছেন খাদ্য কর্মকর্তারা। যাদের কৃষি কার্ড নেই তারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে একটি প্রত্যয়ন নিয়ে খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে পারবেন। প্রত্যয়ন নেওয়ার সময় একমুঠো ধান ‘স্যাম্পল’ হিসেবে নিয়ে গেলে অনেক জটিলতা এড়ানো যায় বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস।
খাদ্য গুদামে ধান দেওয়ার পর কৃষকের নামে সাথে সাথে চেক ইস্যু করছে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয়। সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকে একাউন্টের মাধ্যমে এই টাকা সাথে সাথে উত্তোলন করতে পারবেন কৃষক। যেসব কৃষকদের একাউন্ট নেই চেক নিয়ে ব্যাংকে গেলে মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে একাউন্ট করে সাথে সাথে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। ‘হ্যান্ড ক্যাশ’ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করলে মধ্যস্বত্বভোগীরা এর সুযোগ পেয়ে যায় বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। প্রকৃত কৃষকরা যেনো ধানের ন্যায্য দাম পান সেজন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আবদুর বর বলেন, অসাধু ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমাতে আমরা সক্রিয় রয়েছি। কৃষকরা যেনো খাদ্য গুদামে গিয়ে খুব সহজ প্রক্রিয়ায় সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারেন সেজন্য আমরা সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
উপজেলা কৃষি কর্মতর্কা আহসান হাবীব বলেন, যে সব প্রকৃত কৃষক ধান বিক্রি করতে চাচ্ছেন আমরা তাদেরকে সুযোগ করে দিচ্ছি। যাদের কৃষি কার্ড আছে তারা সরাসরি খাদ্য গুদামে গিয়ে ধান বিক্রি করতে পারছেন। আর যাদের কার্ড নেই তাদেরকে আমরা প্রত্যয়ন দিচ্ছি। কোনো জটিলতা নেই।