সুনামগঞ্জে বাঁধ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ক মতবিনিময়
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ মে ২০২৫, ৬:০৩:৫২ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের কাবিটা নীতিমালার আলোকে জেলার ডুবন্ত বাঁধে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭ টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আব্দুল্লাহ আল আরিফ।
সভায় বক্তারা বলেন, হাওরে এবার বোরো ফসলের বাম্পার ফলন আমরা ঘরে তুলেছি। ফসল তোলার জন্য হাওরে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বন্যা মোকাবিলায় অনেক কষ্ট করে হাওরে কৃষকেরা বাঁধ নির্মাণ করেন। বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে ঠিকমত বিল দেয়া হয়না। ঠিকাদারি প্রথা যখন ছিল তখন তারা পুরো বিল পেতো। হাওরও তলিয়ে যেতো। পিআইসি প্রথা চালু হওয়ার হাওর তলিয়ে যায়নি। কিন্তু কাজের বিল সময়মত পাওয়া যায়না। কাজ শেষে ৭০-৮০% বিল দেয়া হয়। এর মাঝে টাস্কফোর্স এসে কৃষককে না বলে ম্যাজারমেন্ট করে যায়। পরে দেখা যায় বিল কর্তন করা হয়। এরপর ভ্যাট কেটে নেয়া হয়। প্রতিবছর বাঁধের কাজ করতে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষক। আমরা শতভাগ বিল চাই, চাই কৃষকের উপর থেকে কাবিটার টাকার ভ্যাট প্রত্যাহার।
বক্তারা আরও বলেন, হাওরে মাটির সংকট রয়েছে অনেক দুর থেকে মাটি আনতে হয়। কিন্তু সেইভাবে মাটির দর ধরা হয়না। কান্দা হারিয়ে যাচ্ছে। বছর বছর ফসলরক্ষা বাঁধে টাকা অপচয় না করে বিকল্প পথ বের করতে হবে। বিশেষ করে নদী খনন যতদিন পর্যন্ত হবেনা ততদিন পর্যন্ত বাঁধের কাজ করতে হবে। অতএব নদী খননের দিকে সরকারকে এগুতে হবে এবং হাওরের পিআইসি বাঁধ নির্মাণ করার সময় করতে গিয়ে চাপ সৃষ্টি হয়। এ কমিটি গঠন আগেই করে ফেলতে হবে। অনেক হাওরে পানি নিস্কাশন হয়েছে দেরীতে। এটি আগে করতে পারলে আগে ফসল তোলা যাবে। ঝুঁকিও কমবে।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ফসলরক্ষার দীর্ঘ জার্নি করেছে হাওরের কৃষক। ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকেরা কষ্ট করে বাঁধের কাজ করেন। তারা বিল পায়না। গত বছরের বিলের জন্য আমাকে ফোন করে। এছাড়া কাজ শেষে কাবিটায় কৃষকের কাছ থেকে ভ্যাট কেটে নেয়া হয়। কৃষকের ভ্যাট কেন কাটা হয়। কৃষকের কাছ থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
প্রধান অতিথি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আব্দুল্লাহ আল আরিফ বলেন, হাওরে প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা খরচ করা এটা কোন সমাধান না, এটার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। এই সমাধান কৃষকের কাছে আছে। আমাদের কৃষকের কাছে যেতে হবে। হাওরে যে বাঁধ হয়, উজানের ঢল আসলে ফসল তলিয়ে যাওয়ার শংকা আছে। কোটি টাকা খরচ করে লাভ হবেনা। এবছর ফসল ঘরে উঠেছে। এটি আল্লাহর দেয়া গিফট। ভ্যাট প্রত্যাহার নিয়ে বলেন, কৃষক কষ্ট করে বাঁধের কাজ করে। তারপরও সরকারি বরাদ্দের টাকা থেকে ভ্যাট কেটে নেয়া হয়। এটা যৌক্তিক না, তবে আমি ভ্যাট প্রত্যাহার করতে পারিনা। এটার মালিক জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আমরা সুপারিশ করতে পারি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন পাউবো সিলেট অঞ্চলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাওসার আলম, পাউবো ১ নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার, পাউবো ২ নির্বাহি প্রকৌশলী এমদাদুল হক, পিপি মল্লিক মইনুদ্দিন সোহেল, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সেক্রেটারি শের নুর আলীসহ কাবিটা মনিটরিং কমিটির সদস্য গণমাধ্যমকর্মী ও কৃষক।
উল্লেখ্য সুনামগঞ্জের ৯৫ টি হাওরে ৬৮৬টি পিআইসি, ১০৫টি ক্লোজারে ১২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ফসলরক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ হয়।