পাল্টাপাল্টি ড্রোন হামলা : সংঘাতে পরস্পরকে দুষছে ভারত-পাকিস্তান
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ মে ২০২৫, ৮:৫৯:৩৯ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা ও সংঘাত চরমে পৌঁছেছে। গতকালও দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার খবর পাওয়া গেছে। একে অপরের বিরুদ্ধে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিযোগ এনেছে ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লি। বৃহস্পতিবার রাতেই একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে। দিল্লী, জম্মু কাশ্মীরসহ ভারতের অনেক রাজ্যে স্কুল ও কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য একে অপরকে দুষছে ভারত-পাকিস্তান।
ভারতে ৫০০ ড্রোন হামলা :
ভারতে বৃষ্টির মতো ড্রোন হামলা হয়েছে বলে দাবি করেছে নয়াদিল্লি। দেশটি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে প্রায় ৫০০টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। শুক্রবার (০৯ মে) ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী গত রাতে ভারতের বিভিন্ন অবস্থানের দিকে প্রায় ৫০০টি ড্রোন প্রেরণ করেছে। লাদাখের সিয়াচেন বেস ক্যাম্প থেকে গুজরাটের কচ্ছ পর্যন্ত ২৪টি স্থানে এই ড্রোনগুলো দেখা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, এই ড্রোনগুলোর মধ্যে প্রায় ৫০টি ভারতীয় আকাশ প্রতিরক্ষা বন্দুকের সাহায্যে ধ্বংস করা হয় এবং প্রায় ২০টি ‘সফট কিল’ পদ্ধতিতে নামানো হয়েছে। তবে অধিকাংশ ড্রোন অস্ত্রবিহীন ছিল এবং এগুলোর সঙ্গে ক্যামেরা সংযুক্ত ছিল, যা সম্ভবত তাদের স্থল স্টেশনে ফুটেজ প্রেরণ করছিল।
ভারতের ৭৭ ড্রোন ভূপাতিত :
ভারতের ৭৭টি ড্রোন ধংস করেছে পাকিস্তান। যার মধ্যে রয়েছে ইসরাইল-নির্মিত ৬টি ড্রোন। পাকিস্তানের ভেহারি, পাকপত্তন এবং ওকারায় ছয়টি ইসরাইল-নির্মিত ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। ভেহারিতে একটি, পাকপত্তনে একটি এবং ওকারায় চারটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে।
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, এই সব ড্রোন আক্রমণ চালানোর আগেই ভূপাতিত করা হয়েছে। পাকিস্তানের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আকাশে থাকা অব্স্থাতেই ড্রোনগুলোকে গুলি করে নামানো হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর দুর্দান্ত কাজের জন্য অনেক সাধারণ মানুষের প্রাণ ক্ষতির মুখে পড়েনি।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর গণসংযোগ শাখার মহাপরিচালক (ডিজি আইএসপিআর) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেছেন, সব ড্রোন রাডারে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যখনই কোনও ড্রোন আমাদের আকাশসীমায় প্রবেশ করে, তখন এটি রাডারে দৃশ্যমান থাকে। পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এমনকি ছোট ড্রোনও ট্র্যাক করতে সক্ষম।
নিবিড় সামরিক পর্যবেক্ষণে জঙ্গিবিমানের লড়াই :
চীনের তৈরি পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান এবং ফ্রান্সের তৈরি ভারতের রাফাল জঙ্গিবিমানের মধ্যে লড়াই বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীর জন্য নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখার বিষয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যেসব দেশের বাহিনী ভবিষ্যৎ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সামরিক কৌশল নির্ধারণে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টায় আছে তাদের জন্য।
বুধবার দুই দেশের জঙ্গিবিমানের সংঘর্ষে চীনের তৈরি একটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ফ্রান্সের তৈরি ভারতের দুটি জঙ্গিবিমান ভূপাতিত করেছে বলে রয়টার্সকে নিশ্চিত করে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই কর্মকর্তা।
এ ঘটনাকে চীনের উন্নত যুদ্ধবিমান প্রযুক্তির জন্য বড় ধরনের মাইলফলক হিসেবেই বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকরা, বিশেষ করে তাদের উন্নত জঙ্গিবিমান প্রযুক্তির কার্যকারিতার দিক থেকে।
এ ধরনের লড়াইয়ে অন্যান্য দেশগুলোর সামরিক বাহিনীর জন্য আধুনিক যুদ্ধবিমানের কার্যকারিতা, পাইলটের দক্ষতা এবং সরাসরি লড়াইয়ে আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যকারিতা পরখ করার বিরল সুযোগ তৈরি হয়, যা ভবিষ্যত যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এগিয়ে থাকার জন্য সামরিক বাহিনীগুলোর প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তানের উন্নত অস্ত্রের এমন সরাসরি ব্যবহার বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশই চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখবে। এর মধ্যে আছে- চীন ও যুক্তরাষ্ট্র, যারা তাইওয়ান কিংবা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, চীনের নির্মিত জে-১০ যুদ্ধবিমান দিয়ে আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে পাকিস্তানের পাইলটরা।
যা বললেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট :
আমাদের আশা ও প্রত্যাশা হলো- এটি যেন বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধ বা ঈশ্বর না করুন, পারমাণবিক সংঘাতে পরিণত না হয়, বলেছেন মার্কিন এ ভাইস প্রেসিডেন্ট। ভারত ও পাকিস্তানের নিজেদের মধ্যকার উত্তেজনা নামিয়ে আনা উচিত মন্তব্য করে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই পারমাণবিক শক্তিধর দুই এশীয় প্রতিবেশীকে নিয়ন্ত্রণ করে না এবং তাদের মধ্যে যুদ্ধ মোটেও ‘আমাদের দেখার বিষয় নয়’। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব উত্তেজনা কমে যাক। যদিও আমরা এই দেশগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।
তিনি বলেন, আমরা যেটা করতে পারি তা হলো উত্তেজনা কমাতে তাদেরকে খানিকটা উৎসাহিত করার চেষ্টা করতে পারি, কিন্তু আমরা একটা যুদ্ধের মাঝখানে গিয়ে জড়িয়ে পড়তে পারি না, কার্যত যেটা আমাদের দেখারই বিষয় নয় এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণক্ষমতার বাইরে, বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজের ‘দ্য স্টোরি উইথ মার্থা ম্যাককালাম’ অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভ্যান্স এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।