পশুখাদ্য সংগ্রহে ব্যস্ত হাওরপারের কৃষক
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মে ২০২৫, ৭:৩০:৩১ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: হাওরে বছরের অর্ধেক শুকনো আর অর্ধেক পানিতে থাকে পরিপূর্ণ। শুকনো মৌসুমে ধানসহ নানান ফসল ফলান কৃষকরা। ফলে ধান বা বোরো মৌসুম শেষ হওয়ার সাথে সাথেই তাদের ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয় পানির সময়ের। এই সময় তাদের সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতে হয় পশু বা গোবাদি পশুর খাদ্য মজুদ নিয়ে। একসময় গোবাদি পশুর খাবারের জন্য তাদের বেশি চিন্তা করতে হতো না। তবে জলবায়ু পরিবর্তন ও হাওর দখলের নেতিবাচক জেরে হারিয়েছে অনেক চারণভূমি ও ফসলের ক্ষেত। ফলে ধানের মৌসুমের পরই চলে আসবে পানির মৌসুম। তাই এরআগেই সংগ্রহ করতে হবে গোখাদ্য, যার প্রধান উৎস খড়।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো ধরনের দুর্যোগ-দুর্বিপাক ছাড়াই চলতি বোরো মৌসুমের ফসল ঘরে তুলতে পেরেছেন হাওরপারের কৃষকরা। তাই এবার ভরা বর্ষার আগে গবাদি পশুর খাদ্য জোগানে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক বৈরিতা এবং ভূমি দখলের জেরে হাওর জনপদ সুনামগঞ্জ জেলার অনেক এলাকাতে কমে গেছে গোচারণভূমি। কান্দা নষ্ট হওয়ায় গবাদি পশুর খাদ্যের প্রাকৃতিক উৎসও নষ্ট হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় প্রতি মৌসুমে বোরো আবাদ ও ধান সংগ্রহের ব্যস্ততা শেষে গোখাদ্যের মজুত নিশ্চিত করতে খড়ের জোগান দেন স্থানীয় কৃষকরা। এর ওপরে নির্ভর করে বছরজুড়ে তাদের গবাদি পশু পালনের সাবলম্বিতা। ভরা বর্ষার আগে তাই পাকা ধান গাছ থেকে পাওয়া খড়ের মজুত নিশ্চিত করেন কৃষক।
বর্ষাকালে হাওরাঞ্চলের এলাকাগুলো পানিতে ভরপুর থাকে। চারদিকে পানি থাকায় এ অঞ্চলের কোথাও গবাদি পশু চরানোর জন্য ভূমি পাওয়া যায় না। এমন সময় গবাদি পশুর যেন খাদ্য সংকট না হয় সেজন্য খড়ের মজুত জোগান দিতে হয় প্রান্তিক কৃষককে; যার কারণে বাড়িতে রেখে পশু পালন সহজ হয় তাদের জন্য।
গোখাদ্য হিসেবে পরিচিত কাটা ধান গাছের শুকনো খড় রোদে শুকিয়ে হাওর থেকে বাড়িতে এনে স্তূপ দিয়ে রাখা হয়। এ মৌসুমেও গোখাদ্যের সংকট মোকাবিলায় খড় সংগ্রহে ব্যস্ত হাওরাঞ্চলের কৃষক ও গেরস্ত।
হাওরে খড় সংগ্রহে ব্যস্ত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জান যায়, অনেক বছর পর হাওরপারে এমন বৈশাখ পেয়েছেন তারা। জমির ধান দুর্যোগে নষ্ট হয়নি। মাঝে পোকার আক্রমণ হলেও সময় মতো বৃষ্টি হওয়ায় বিশেষ ক্ষতি হয়নি। ফসলের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ঝড়-বন্যার শঙ্কা কাটিয়ে গোলা ভরেছেন তারা। এখন ভরা বর্ষায় গবাদি পশু পালনের সবচেয়ে জরুরি কর্তব্য গোখাদ্যের মজুত নিশ্চিত করছেন।
শনির হাওরপার ভাটি তাহিরপুর গ্রামের এক কৃষক বলেন, তাঁর ৫টি গরু আছে। জমি চাষাবাদ করেন সোয়া দুই কিয়ার (৩০ শতকে এক কিয়ার)। এ জমি থেকে এবার ফসল পেয়েছেন প্রত্যাশিত। সেই সঙ্গে যে পরিমাণ খড় জোগান দিতে পেরেছেন তা এ পুরো বর্ষা নিশ্চিন্তে কেটে যাবে।
মাটিয়ান হাওরপারের আনন্দনগর গ্রামের এক কৃষক জানান, বিগত বছরগুলোতে হাওরডুবি ও পরবর্তী সময়ে ভয়াবহ বন্যার কারণে গোখাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছিল। তখন তিনি ৭টি গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন। দেড় হাজার টাকা মণ খড় কিনতে বাধ্য হয়েছিলেন। এ বছর তাই পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিত করতে চান। আরেক কৃষক বলেন, এ বছর হাওরে বোরো ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। ধান শুকিয়ে গোলায় তোলা শেষ। এখন গরুর খাবার জোগান দিতে ব্যস্ত।