সিলেট সীমান্তে ভারতের রাত্রিকালীন কারফিউ
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ মে ২০২৫, ৯:৩১:২৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: সিলেটের সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ৩ জেলায় চলছে রাত্রিকালীন কারফিউ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট সীমান্তে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। এছাড়াও নাগরিকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে ভারতীয় কারফিউয়ের কারণে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ সন্ধ্যার আগেই সীমান্ত ছেড়ে নিজ নিজ আবাস স্থলে ফিরে গেছেন। এতে সন্ধ্যার আগেই এসব এলাকা জনশুণ্য হয়ে যায়। প্রয়োজন ছাড়া ঐসব এলাকার কাউকে খুব একটা বাড়ীর বাইরে যেতে দেখা যাচ্ছেনা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ। তিনি বলেন, সেখানকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একটি অনুলিপির মাধ্যমে বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন। সীমান্তবর্তী এলাকার নাগরিকরা যাতে সীমান্ত অতিক্রম না করেন সে বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট ব্যাটালিয়ন ৪৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো: নাজমুল হক জানান, সিলেটের সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ৩ জেলায় রাত্রিকালীন কারফিউ জারির বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জেনেছি। এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
বাংলাদেশের সীমান্তে নিয়মিত টহল রয়েছে। তবুও, এই পরিস্থিতিতে কেউ যেন ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা না করে এবং ভারত থেকে কেউ যেন বাংলাদেশ প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য বিজিবির টহল জোরদার করে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একইসাথে সীমান্ত এলাকার মানুষকে সচেতন করতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্যোগে সিলেটের সীমান্তবর্তী সব উপজেলায় মাইকিং করা হচ্ছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৮ মে) ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব জৈন্তিয়া হিলস, পূর্ব খাসি হিলস ও পশ্চিম জৈন্তিয়া হিলস জেলা প্রশাসন সীমান্ত এলাকায় রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করে। ওই আদেশের একটি অনুলিপি সিলেটের জেলা প্রশাসককে পাঠানো হয়েছে।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব জৈন্তিয়া হিলস জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শ্রী শিবাংশ আরস্থির স্বাক্ষরিত কারফিউ আদেশে বলা হয়, পূর্ব জৈন্তিয়া হিলস জেলার আন্তর্জাতিক সীমান্ত এখনো সম্পূর্ণভাবে বেড়া দিয়ে ঘেরা নয়। এই কারণে এ অঞ্চলে অবৈধ অনুপ্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, চোরাকারবারি ও অবাঞ্ছিত অনুপ্রবেশকারীরা রাতের আঁধারে সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধ কর্মকা-ে লিপ্ত হতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে ৮ মে থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত রাত্রিকালীন কারফিউ বলবৎ থাকবে। আন্তর্জাতিক সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে ৫০০ মিটার এলাকাজুড়ে এই কারফিউ থাকবে। কারফিউয়ের সময়সীমা প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত।
পূর্ব খাসি হিলসে, আন্তর্জাতিক সীমান্তের শূন্য রেখা (জিরো লাইন) থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত নাইট কারফিউ জারি থাকবে। পশ্চিম জৈন্তিয়া হিলসে, শূন্য রেখা (জিরো লাইন) থেকে ২০০ মিটার পর্যন্ত এলাকায় কারফিউ কার্যকর থাকবে। কেউ আন্তর্জাতিক সীমান্তে চলাফেরা করে বা ভারতের ভূখ-ে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করা হবে।
আদেশে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কারফিউয়ের আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে।
এছাড়াও, আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রমের উদ্দেশ্যে অনুমতি ছাড়া মিছিল, পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির অবৈধ সমাবেশ এবং অস্ত্র অথবা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এমন কোনো সরঞ্জাম বহন করাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এই কারফিউ জারি থাকবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।