একটি ব্রিজের অভাবে সীমাহীন দুর্ভোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মে ২০২৫, ৯:০৩:৫৬ অপরাহ্ন
মো. মুহিব হাসান, ওসমানীনগর: ওসমানীনগর উপজেলার পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের সাদীখাল সংলগ্ন সুতারখালির খালের উপর একটি ব্রিজের অভাবে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন খাল তীরবর্তী মোবারকপুর গ্রামের হাজার হাজার লোকজন।
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের পাশর্^বর্তী স্থানে গ্রামটির অবস্থান হলেও একটিমাত্র ব্রিজ তাদের আলাদা করে রেখেছে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে। গ্রামের বাসিন্দারা নিজ নিজ বসতঘরে বসে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক দিয়ে বিভিন্ন প্রকার যাবাহন চলাচল দেখতে পেলেও ব্রিজ না থাকায় এ গ্রামের ভিতরে কোনদিন কোনপ্রকার যানবাহনের চাকা মাটিতে লাগেনি। গ্রামের চতুর্দিক খাল বেষ্টিত হওয়ায় এ গ্রামের অবস্থান যেন কোন এক হাওরপাড়ের তীরে ছোট্ট একটা দ্বীপের মতো। বর্ষাকালে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকোই এ গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার মূল মাধ্যম। গ্রামের ভিতরে ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি মসজিদ ও ৩টি মন্দির রয়েছে। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনী ভোটকেন্দ্র গ্রামের ভিতরে হওয়ায় এবং গ্রামের বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের উন্নত যোগাযোগের জন্য অতি দ্রুত একটি ব্রিজ স্থাপন করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি দাবী জানিয়েছেন গ্রামবাসি।
জানা যায়, স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পরেও যোগায়োগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মোবারকপুর গ্রামে। গ্রামে হিন্দু মুসলিম মিলে প্রায় ২শ ৫০টি পরিবারের লোকজন বাস করছেন। গ্রামের লোকজনের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলে শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় ১শ ৫০জন। গ্রামের ভিতরে একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় হচ্ছে মোবারকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে এ বিদ্যালয়েই ভোটকেন্দ্র হয়ে থাকে। কিন্তু গ্রামবাসির দুঃখ হচ্ছে স্বাধীনতার পর থেকে কোন সরকারই এ গ্রামের পাশে সাদীখাল সংলগ্ন সুতারখালি খালের উপর একটি ব্রিজ স্থাপন করেনি। ফলে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে এ গ্রামে তেমন কোন উন্নয়ন সাধিত হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রামের অধিকাংশ মানুষ জেলে এবং কৃষি পেশার সাথে জড়িত রয়েছেন। পাশর্^বর্তী সাদীখাল থেকে মাছ আহরণ এবং স্থানীয় জমিতে চাষাবাদ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় তাদের উৎপাদিত ফসল এবং ধৃত মাছ সময়মতো বাজারজাত করতে পারেন না।
গ্রামের ভিতরে অবস্থিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশপাশের গ্রাম মোস্তফা পুর ও খারোকোনা গ্রাম দু’টি থেকে শিক্ষার্থীরা আসেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা লাভের আশায় পাশর্^বর্তী সাদীপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু খালের উপর একটি ব্রিজ না থাকায় শিক্ষার্থীরা অতি কষ্টে তাদের বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে থাকেন।
গ্রামের বাসিন্দাদের বৃদ্ধ কিংবা শিশুরা অসুস্থ হলে বর্ষাকালে নৌকায় আর শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে রোগী নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। তাছাড়া ব্রিজ না থাকায় গ্রামের ভিতরের রাস্তায়ও কোন পাকাকরণ প্রকল্প হচ্ছেনা।
গ্রামের বাসিন্দা এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী রাজু আহমদ (১৬) বলেন, আমরা অনেক কষ্ট করে বিদ্যালয়ে যাই। বর্ষায় মাঝেমধ্যে নৌকা ঘাটে না থাকলে আমাদের গ্রামের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আর যাওয়া হয়না। ধিরু দাস (৬০) বলেন, আমরা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি, যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সময়মতো মাছ বাজারজাত করতে পারিনা। হরেন্দ্র দাস (৫৩) বলেন, একটি ব্রিজের জন্য আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসতে অনেক কষ্ট হয়। খলিলুর রহমান (৬৪) বলেন, আমাদের গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে নৌকায় কিংবা বাঁশের সাঁকো দিয়ে চরম কষ্টের মধ্যে চিকিৎসালয়ে নিতে হয়। ব্যবসায়ী রনজিৎ রায় (৫৮) বলেন, একটি ব্রিজের জন্য আমরা দ্বীপের মধ্যে পড়ে রয়েছি। স্থানীয় বিএনপি নেতা সাইফুল আলম মুজিব বলেন, আমাদের গ্রামের উন্নয়নের জন্য একটি ব্রিজ দরকার, আমরা সরকারের শুদৃষ্টি কামনা করছি।
পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও আজাদ বখত উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিহাবুর রহমান বলেন, একটি ব্রিজের অভাবে এ গ্রামটি অনেক পিছিয়ে রয়েছে, ব্রিজ স্থাপন করা খুবই জরুরী।
পশ্চিম পৈলনপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী চৌধুরী সুমন বলেন, মোবারকপুর গ্রামের লোকজন একটি ব্রিজের অভাবে চলাচল করতে সীমাহীন কষ্ট করছেন। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়ে চেষ্টা করছি একটি ব্রিজ স্থাপনের জন্য। ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আমার যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।