প্রশ্নবিদ্ধ বোর্ডেই শাবির অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে সাক্ষাৎকার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ মে ২০২৫, ৯:২৫:০২ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : প্রশ্নবিদ্ধ বোর্ডেই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে আপগ্রেডেশনের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে আজ বৃহস্পতিবার। নিজের স্ত্রী অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও এই বোর্ডের সভাপতি হিসেবে সাক্ষাৎকার নেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম। ফলে বোর্ডের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশ^বিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নিকটাত্মীয় কেউ থাকলে বোর্ডে না থাকার নিয়ম আছে। ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী কেউ হলে থাকা যাবে না। এটাই সরকারি নিয়ম। নিয়মানুযায়ী এ বোর্ডের বাইরে থাকতে হবে প্রো-ভিসিকে। কিন্তু নিজের স্ত্রীর অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে আপগ্রেডেশনের সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক সাজেদুল করিম। ফলে বোর্ডের সভাপতি পদ থেকে কোনোভাবেই সরতে চান না প্রো-ভিসি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্ত্রীর বোর্ডে যদি প্রো-ভিসি সভাপতি হিসেবে থাকেন, তাহলে এটি সরাসরি ‘স্বার্থের সংঘাত’। শুদ্ধাচারের নীতিতেও এমন পদক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য। বোর্ডের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। স্বজনপ্রীতি হতে পারে, এটাই স্বাভাবিক।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আজ বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে আপগ্রেডেশনের এই বোর্ড অনুষ্ঠিত হবে। ১৩ জন উপ-রেজিস্ট্রারকে সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। বোর্ডের সভাপতি প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিমের স্ত্রী উপ-রেজিস্ট্রার সাবিহা ইয়াসমিন প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম। এ নিয়ে ‘স্বার্থের সংঘাতের’ অভিযোগ উঠেছে প্রো-ভিসির বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সংবিধি-১৯৮৭-এর কর্মকর্তা নিয়োগের ধারা ২ (১) (ক)-তে বলা আছে, ‘ভাইস চ্যান্সেলর বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন; তবে শর্ত হলো, যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর থাকেন, তাহলে তিনিই এটির চেয়ারম্যান হবেন।’ কিন্তু সরকারি নিয়ম হচ্ছে, ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী কেউ প্রার্থী হলে বোর্ডে থাকা যাবে না।
সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি প্রো-ভিসি অধ্যাপক সাজেদুল করিমকে স্মরণ করিয়ে দিলেও তিনি নিজের স্ত্রীর আপগ্রেডেশন বোর্ডের পদ ছ্ড়াতে নারাজ। এ নিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক অধ্যাপক ড. এ. এম. সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. এ. এম. সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী গত মঙ্গলবার এ সর্ম্পকিত সভায় প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিমকে বোর্ডের সভাপতির পদ ছাড়তে বললে উল্টো ভিসির সঙ্গে তুমুল হট্টগোল করেন সাজেদুল করিম। বিষয়টি ‘টক অব দ্যা ক্যাম্পাস’ ছিল গত মঙ্গলবার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আশরাফ উদ্দিন বলেন, নৈতিকভাবে এই বোর্ড প্রো-ভিসি পরিচালনা করতে পারেন না। এখানে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হবে ও স্বজনপ্রীতি মুখ্য হয়ে দাঁড়াবে। বোর্ডটি অন্য কোনো সদস্যকে হস্তান্তর করতে পারেন। প্রো-ভিসি বোর্ডের বাইরে থাকাই উত্তম।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা মহিবুল আহসান বলেন, বোর্ডের প্রার্থী যদি বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক বা নিকটাত্মীয় থাকেন, তাহলে বোর্ডে থাকতে হয় না। স্ত্রীর পদোন্নতির বোর্ডে প্রো-ভিসি থাকাটা নৈতিকভাবে ঠিক নয়, অফিশিয়ালিও ঠিক নয়। প্রো-ভিসির উচিত বোর্ড থেকে পদত্যাগ করা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম বলেন, আমি জীবনে কোনো দিন বিধি বহির্ভূতভাবে কোনো কাজ করিনি। বিধিসম্মত যেটা হবে, সেটাই করব। নিয়ম অনুযায়ী নিজের স্ত্রীর আপগ্রেডেশন বোর্ডের সভাপতি হিসেবে থাকা বিধিসম্মত কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের বলিও…কী হলে বিধিসম্মত হবে এটা জানাইতে। যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অপিনিয়ন (মতামত) কী? তবে বিধিসম্মত যেটা, সেটাই হবে। তাঁদের বোলো…কোনটা বিধিসম্মত আপনি বলে দিন। তিনি বোর্ডের প্রধান হিসেবে থাকছেন কি না জানতে চাইলে মো. সাজেদুল করিম বলেন,‘আমি এখন কিছুই বলব না। যা হবে বিধিসম্মতভাবেই হবে।