নির্বিকার কর্তৃপক্ষ :অলিগলি ছেড়ে মূল সড়কে ব্যাটারি চালিত রিকশা!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মে ২০২৫, ১২:৩০:৪১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : অলিগলি থেকে বেরিয়ে সিলেট নগরের মূল সড়কে এখন দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। শিথিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সুযোগে ব্যস্ত সড়কগুলোতে তারা বেপরোয়া। ট্রাফিক আইনসহ সড়কের শৃঙ্খলায় অজ্ঞ এসব চালকদের কারণে নগরের সড়কগুলোতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
৫ অগস্ট পটপরিবর্তনের পর ভেঙে পড়া পুলিশি ব্যবস্থার সময়ে কিছুদিন ছাত্র-জনতা নিজেদের উদ্যোগে রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। সিলেটও এর ব্যতিক্রম ছিলোনা। কিছুদিন পর ছাত্ররা ক্লাসে ফিরে গেলে ফের শৃঙ্খলা হারায় সড়ক। ধীরে ধীরে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ নামলেও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে অনেকটাই বাধাহীনভাবে। যেন দেখার কেউ নেই।
নগরের প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, লামাবাজার, শিবগঞ্জ, সুবিদবাজার, কুমারপাড়া, ঈদগাহসহ প্রায় সবকটি এলাকায় এখন অনেকটাই স্বাধীনভাবে চলছে এসব ব্যাটারীচালিত রিকশা। এসব রিকশার
অদক্ষ চালকদের নেই কোন প্রশিক্ষণ। তাদের বেপরোয়া গতি, এলোমেলো চলাচল, আইন না মানার প্রবণতা, উল্টোপথে চলা, যেখানে-সেখানে হুটহাট রিকশা ঘোরানো-সব মিলিয়ে রাস্তায় প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। আর দ্রুত বেগে চলার কারণে ঘন ঘন দুর্ঘটনা তো স্বাভাবিক চিত্র হয়ে গেছে। এদের আচরণও অন্যদের তুলনায় আক্রমণাত্মক।
এসব অটোরিকশা যখন-তখন দ্রুতগতির যানবাহনের সামনে চলে আসছে; কোথাও হঠাৎ করেই বাঁক নিচ্ছে, এতে পেছনের যানবাহনের চালকরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। আবার দ্রুতগতিতে সড়কে উল্টোদিকে চলে অন্যান্য যানবাহনের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে।
ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের অনেকেই নিজেদের রিকশাকে ‘ইঞ্জিনের গাড়ি’ দাবি করছে। নগরের কুমারপাড়া এলাকায় এ প্রতিবেদককে দুই জন চালক বলেন, ইঞ্জিনচালিত অন্য গাড়ি রাস্তায় চললে আমরা পারব না কেন। তাদের গাড়িও ইঞ্জিনের, আমাদেরটাও একই।
তখন প্রতিবেদক বলেন, তাদের গাড়ির লাইসেন্স আছে-অনুমতি আছে, তারা রোড ট্যাক্সও দেয়। আপনাদের তো তা নেই। উত্তরে দুই রিকশা চালক বললেন, অনুমতি না থাকলে এগুলো বানায় কেমনে? তৈরীর জায়গা বন্ধ হয়না কেন? আসলেই তো! তাদের প্রশ্নের উত্তর দেবে কে?
গতবছর অটোরিকশার কারণে সারাদেশে মোট ৮৭০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। যাত্রীদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী একটি সংগঠন এ তথ্য জানিয়েছে। সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে এ সব দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৮৭৫ ও আহতের সংখ্যা এক হাজার ৭৭৯। সিলেটেও এমন ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
সিলেট নগরে এমন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন এ প্রতিবেদকও। দ্রুত বেগে চলার কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে প্রতিবেদক পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। পরে নগরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। বার বার বলার পরও বেপরোয়া চালক কথার কোন কর্ণপাতই করেনি।
শুধু এ প্রতিবেদকই নন, দৈনিক জালালাবাদের কাছে নাম না জানা অনেকেই অভিযোগ করেছেন বেপরোয়া এসব ব্যাটারি চালিত রিকশাগুলোর বিরুদ্ধে।অথচ সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে আদেশ জারি করা আছে যে, মূল সড়কে এসব রিকশা চলতে পারবেনা। চলাচল করবে অভ্যন্তরের সড়কে। আদেশ জারি করে কিছুদিন অভিযান চালানো হলেও সময়ের সাথে সাথে তা স্থিমিত হয়ে পড়ে। অটোরিকশা নগরের ব্যস্ত সড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়ালেও ট্রাফিক বিভাগের জোরালো কোন অভিযান দেখা যাচ্ছেনা।
সরকারের পালাবদলের পর নানা সীমাবদ্ধতায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে শিথিলতার কথা স্বীকার করছেন রাস্তায় দায়িত্বপালন করা ট্রাফিক পুলিশের কেউ কেউ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বললেন, এখন সময়টা এমন, কেউ কারও কথা শুনছে না। সড়কে অটোরিকশা চলে আসছে। তারা যেন স্বাধীনতা পেয়ে গেছে।
অথচ গত কয়েক মাস থেকে ট্রাফিক বিভাগ এই যানটিকে প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষামূলক ট্র্যাপার বসানো হয়েছে। তাতে ফলও মিলেছে। এখন সেগুলোর সংখ্যা বাড়িয়ে ঢাকা নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে আরও বসানো হবে। এছাড়া এই রিকশা প্রতিরোধে হচ্ছে নতুন নীতিমালা। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধে রিকশার ওয়ার্কশপ ও চার্জিং পয়েন্ট বন্ধ করা হবে বলেও জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। কিন্তু সিলেট এক্ষেত্রে নিরব!