পুঁজিবাজারে আরো তীব্র হচ্ছে দরপতন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ মে ২০২৫, ৮:৫৭:৩৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : বছর তিনেক ধরেই দেশের পুঁজিবাজারের অবস্থা হতাশাজনক। এর ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে চলতি বছরেও। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুঁজিবাজারে কিছুটা চাঙ্গা ভাব দেখা গিয়েছিল, যদিও সেটি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
গত নয় মাসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স ১ হাজার ২৩৫ পয়েন্ট হারিয়েছে। লেনদেনের পরিমাণ নেমে এসেছে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে। সার্বিকভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার কারণে যত দিন যাচ্ছে পুঁজিবাজারের দরপতন আরো তীব্র হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ডিএসইএক্স সূচকের অবস্থান ছিল ৫ হাজার ৪২৬ পয়েন্টে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গত বছরের ১১ আগস্ট সূচকটি বেড়ে ৬ হাজার ১৬ পয়েন্টে দাঁড়ায়। তবে এর পর থেকেই আবারো ছন্দপতন ঘটে পুঁজিবাজারে। কখনো কখনো সূচক বাড়লেও সার্বিকভাবে এ সময়ে নি¤œমুখী ছিল পুঁজিবাজার। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ডিএসইএক্স সূচক দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৮১ পয়েন্টে। নয় মাসে সূচকটি ১ হাজার ২৩৫ পয়েন্ট হারিয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত সময়ে অনিয়ম ও কারসাজির মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারের ভিত দুর্বল করে দেয়া হয়েছে। অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর পুঁজিবাজারের অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে মনে করেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু এ সময়ে পুঁজিবাজারে দৃশ্যমান কোনো কাঠামোগত সংস্কার হয়নি। তার ওপর নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে আসার পর বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে। সার্বিকভাবে বর্তমানে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে ভাটা চলছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হলেও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আয় ও মুনাফা কমছে। নতুন করে কোনো কোম্পানির তালিকাভুক্তি হচ্ছে না। পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণও কমছে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার নিয়ে আশাবাদী হতে পারছেন না। ফলে পুঁজিবাজারের সংস্কারে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে নির্দেশনা আসার পরও বাজার পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
দেশের পুঁজিবাজারে তিনদিন ধরেই সূচকে টানা দরপতন হচ্ছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার বড় দরপতন হয়েছে। এদিন লেনদেন শুরুর পর থেকেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করে দেয়ার প্রবণতা ছিল লক্ষণীয়। এর প্রভাবে দিনভর পয়েন্ট হারায় সূচক। এতে দিন শেষে ডিএসইএক্স সূচক ১ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৭৮১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এদিন নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ ১ শতাংশের বেশি কমে ১ হাজার ৭৭০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস বৃহস্পতিবার ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ১ হাজার ৩৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে ইসলামী ব্যাংক, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংকের শেয়ার।
ডিএসইতে বৃহস্পতিবার ২৯৭ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। এর আগের কার্যদিবসে যা ছিল ২৯৪ কোটি টাকা। এদিন লেনদেন হওয়া ৩৯৫টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ৪২টির, কমেছে ৩১৭টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৩৬টির বাজারদর।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে পুঁজিবাজারে যে পরিমাণ শেয়ার বিক্রির কার্যাদেশ আসছে, সে তুলনায় ক্রয়াদেশের পরিমাণ কম। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সূচক ও লেনদেনে। স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়ার কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও এগিয়ে আসছে না। পুঁজিবাজারের মূল সমস্যা কোথায় সেটি আমরা এখনো চিহ্নিত করতে পারিনি। ফলে সমস্যার সমাধানও হচ্ছে না এবং পুঁজিবাজারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে না। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও নীতি নির্ধারক যারা রয়েছেন তাদেরকে বাজারের মূল সমস্যাগুলো খুঁজে বের করে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ব্যাংক খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ দখলে নিয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। ১১ দশমিক ৭ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত। মিউচুয়াল ফান্ড খাত ৮ দশমিক ৬ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল। পঞ্চম অবস্থানে থাকা জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের দখলে ছিল লেনদেনের ৭ দশমিক ৬ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার ডিএসইতে চামড়া বাদে সব খাতের শেয়ারেই নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে কাগজ ও মুদ্রণ খাতে। এছাড়া পাট খাতে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ২ দশমিক ৬ শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং জীবন বীমা খাতে ২ দশমিক ১ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে।
দেশের আরেক পুঁজিবাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) নির্বাচিত সূচক সিএসসিএক্স বৃহস্পতিবার প্রায় ১ শতাংশ কমে ৮ হাজার ২৪০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সিএসইর সব শেয়ারের সূচক সিএএসপিআই ১ শতাংশ কমে ১৩ হাজার ৪৭৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ২০৫টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৩৭টির, কমেছে ১৫১টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৭টির বাজারদর। সিএসইতে ১০ কোটি ২৯ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, এর আগের কার্যদিবসে যা ছিল ১১ কোটি ২৩ লাখ টাকা।