সিলেটে এক বছরে পশু খামারী কমেছে ৩ হাজার
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ মে ২০২৫, ৩:৫৮:১৩ অপরাহ্ন
এমজেএইচ জামিল : কুরবানীর পশুর হাটকে সামনে রেখে সিলেট অঞ্চলের ২০ হাজার খামারে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারীরা। গতবারের তুলনায় পশুর উৎপাদনের পাশাপাশি কমেছে খামারীর সংখ্যাও। তবে ঈদের হাটকে কাজে লাগাতে পশুর পরিচর্যায় কমতি নেই তাদের। প্রতিটি খামারে ছোট, মাঝারি ও বড় সবধরণের কুরবানির পশু রয়েছে। সেসব খামারে দিন রাত প্রাকৃতিক উপায়ে চলছে পশু হৃষ্টপুষ্ট করণ কাজ।
এদিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খামারিকে গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্ট করণের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্টেরয়েডের ব্যবহার রোধে উপজেলা পর্যায়ে উঠান-বৈঠক করে খামারিকে হাতে কলমে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গত বছর সিলেট বিভাগে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২২ হাজার ৫৭৬ জন খামারী থাকলেও এবার খামারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৪৭৪ জন। এক বছরের ব্যবধানে সিলেটে খামারীর সংখ্যা কমেছে ৩ হাজারেরও বেশী।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবছর সিলেট বিভাগে ১৯ হাজার ৪৭৪ জন খামারী পশু উৎপাদন করছেন। তন্মধ্যে সিলেট জেলায় ৭ হাজার ৭৮২ জস, মৌলভীবাজারে ১ হাজার ২৯৩ জন, হবিগঞ্জে ৭ হাজার ২৯৯ জন ও সুনামগঞ্জে ৩ হাজার ১০০ জন।
গত বছর সিলেট বিভাগে মোট খামারী ছিল ২২ হাজার ৫৭৬ জন। তন্মধ্যে সিলেট জেলার ৬ হাজার ৮৫৮, সুনামগঞ্জ জেলায় ৩ হাজার ৪৫৮, মৌলভীবাজার জেলায় ৫ হাজার ৩৬৯ ও হবিগঞ্জ জেলায় ৬ হাজার ৫১৯ টি খামার ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১ বছরের ব্যবধানে সিলেট বিভাগে খামারি বেড়েছে কমেছে ৩ হাজার ১০০ জন। ১ বছরে সিলেট জেলায় খামারি বেড়েছে ৯২৪ জন, মৌলভীবাজার জেলায় খামারি কমেছে ৪ হাজার ৭৬ জন, হবিগঞ্জ জেলায় খামারি কমেছে ৭৮০ জন ও সুনামগঞ্জ জেলায় খামারি বেড়েছে ৩৫৮ জন। এবার সিলেট বিভাগে খামারি কমার ফলে কমেছে পশুর সংখ্যাও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সিলেটের খামার মালিকরা। গত বছরের তুলনায় এ বছর দেশী গরুর চাহিদা বাড়বে বলে মনে করছেন খামার মালিকরা। প্রবাসী অধ্যূষিত সিলেটে প্রতিবারই অবৈধ ভাবে ভারত থেকে আনা গরুর চাহিদা থাকে যার ফলে স্থানীয় খামার মালিকদের কপাল পুড়ে। তবে এবার দেশের পট পরিবর্তনের পর নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন খামার মালিক ও গরুর লালন পালনে সম্পৃক্ততা।
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সিলেটের প্রায় সব উপজেলাতেই দেশী গরু নিয়ে প্রস্তুত হয়েছেন খামার মালিকরা। সরেজমিন কয়েকটি খামার ঘুরে দেখা গেছে দেশীয় পদ্ধতিতে লালন পালন করা গরু নিয়ে এবারের কুরবানির হাটে বিক্রি করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন তারা। কেউ কেউ ইতোমধ্যে গরু বাজারজত করাও শুরু করেছেন।
সদর উপজেলার খামারি সবুজ মিয়া বলেন, কি হবে খামার করে। শেষ পর্যন্ত চোরাই গরুতে বাজার পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এতে আমরা স্থানীয় খামার মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হই। সময়ের ব্যবধানে সবধরণের পণ্যের দাম বাড়ছে। কিন্তু পশুর দাম বাড়তি চাইলেই ক্রেতাদের মনক্ষুন্ন হন। তারা কম টাকায় পাচার হয়ে আসা বড় গরু ক্রয় করেন। এবছর আমি ২০-২৫ টা গরু বাজারে নিতে পারবো।
খামারী কমে যাওয়ার জন্য সিলেটে ঘন ঘন বন্যা ও গত ঈদে বন্যার কারণে অনেক পশু অবিক্রিত থাকাকে দায়ী করছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. মারুফ হাসান। তিনি দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, খামারিদের ব্যবসা পরিচালনায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সব সময় কাজ করছে। খামারীদের সংখ্যা সব সময় ঠিক থাকেনা। এক বছর বাড়ে তো আরেক বছর কমে। গত বছর আমরা দেখেছি এক বছরের ব্যবধানে খামারি বেড়েছিল ১০ হাজার। এবার কমেছে ৩ হাজার। সামনে হয়তো আরো বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, আসন্ন কুরবানীর পশুর হাটে আমাদের মেডিকেল টীম কাজ করবে। এছাড়া আমাদের বিভিন্ন টীম খামারে গিয়ে নিয়মিত পশুর পরিচর্যার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে আসছে।