সচিবালয়ে বিক্ষোভ, সারাদেশে একই কর্মসূচি পালনের আহ্বান
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ মে ২০২৫, ৭:২৫:২৯ অপরাহ্ন
আন্দোলনকারীদের সতর্ক করলেন হাসনাত
জালালাবাদ ডেস্ক: জাতীয় বেতন স্কেল পুনর্বিন্যাস ও বৈষম্য দূর করার দাবিতে সচিবালয়ে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন বিভিন্ন ক্যাডার ও নন-ক্যাডার সরকারি কর্মচারীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে একই দাবিতে পুনরায় কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি দেশের সব সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন প্রশাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রকৌশল, ট্যাক্স, খাদ্যসহ বিভিন্ন ক্যাডার ও সংযুক্ত দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁদের দাবি, প্রস্তাবিত নতুন জাতীয় বেতন কাঠামোতে প্রথম গ্রেডে নিয়োজিত বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সুবিধা রেখে অন্যদের বৈষম্যের শিকার করা হয়েছে। এই বঞ্চনার অবসান না হলে আন্দোলন চলবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
এ সময় বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা ‘এক দফা এক দাবি-বেতন বৈষম্য চাই না’, ‘সমতা চাই’, ‘ক্যাডার-নন-ক্যাডার বৈষম্য চলবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
আন্দোলনকারীদের পক্ষে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমাদের দাবিগুলো যৌক্তিক এবং বাস্তবসম্মত। নতুন বেতন কাঠামোতে শীর্ষ শ্রেণির কর্মকর্তাদের বিশেষ সুবিধা রেখে আমরা বাকিরা অবমূল্যায়নের শিকার হচ্ছি। এই বৈষম্য শুধু মনোবল ভাঙে না, প্রশাসনব্যবস্থায় বিভাজন তৈরি করে।
মঙ্গলবার আবারও সচিবালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়ে তারা বলেন, “আমরা আহ্বান জানাচ্ছি- ঢাকা ও জেলা শহরসহ দেশের সব সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেন একই কর্মসূচি পালন করেন। এই আন্দোলন কোনো নির্দিষ্ট ক্যাডার বা পদ নয়, এটা সবার ন্যায্য অধিকারের দাবি।
এদিকে আন্দোলনের কারণে সচিবালয়ের কিছু দপ্তরে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, গুরুত্বপূর্ণ বা জরুরি সেবায় তারা ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন না।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৯ম পে কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়, যা নিয়ে বিস্তর আলোচনা ও অসন্তোষ দেখা দেয় সরকারি চাকরিজীবীদের একাংশের মধ্যে। এর পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ করে আসছেন কর্মচারীরা।
আন্দোলনকারীদের সতর্ক করলেন হাসনাত: এদিকে কর্মচারীরা সরকারের কাজে বাধা দিলে, হুমকি দিলে জনগণই তাদের বিকল্প খুঁজে নেবে বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপি দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। সংস্কারে ‘বাধা দিয়ে’ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারকে জিম্মি করলে পরিস্থিতি ভালো হবে না বলেও হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।
সরকারি চাকরি আইন সংশোধন নিয়ে সচিবালয়ে কর্মচারীদের বিক্ষোভ এবং এনবিআর বিভক্তের বিরুদ্ধে ও চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে সংস্থার কর্মীদের আন্দোলন নিয়ে এ কথা বললেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা।
সোমবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর বিপ্লব উদ্যান থেকে উত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভা শুরুর আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “এখন সচিবালয়েও দেখলাম আন্দোলন হচ্ছে, বিক্ষোভ হচ্ছে। এনবিআর সংস্কারেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।
“দেখেন, আপনাদের বলতে চাই যখন জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলছিল, আপনারা কিন্তু কালো ব্যাজ ধারণ করে শেখ হাসিনাকে সমর্থন জানিয়ে অফিস করেছেন। এখন আপনারা হুমকি দেন- অফিস চলতে দিবেন না, অফিস বন্ধ করে রাখবেন। ৫ অগাস্ট কিন্তু আপনাদের এই হিম্মতটা ছিল না। শেখ হাসিনার ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আপনারা কিন্তু তখন কেউ পদত্যাগ করেননি।”
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদ সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারি করার প্রস্তাবে সায় দেয়। এর প্রতিবাদে রোববার সকাল থেকে দিনভর সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের আপত্তির মধ্যেই রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রোববার রাতে অধ্যাদেশ জারি করা হয়।