ছাতক সিমেন্ট কারখানায় ৬ কোটি টাকার টেন্ডার জালিয়াতি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ মে ২০২৫, ৭:৫৬:৫১ অপরাহ্ন
ছাতক সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জের ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। এটির অভ্যন্তরে চলছে অনিয়ম-দুর্নীতি। এ দুর্নীতি যেন পিছু ছাড়ছে না। পুরাতন প্রজেক্টের মালামাল, বিভিন্ন স্থাপনা, যেখানে যে অবস্থায় আছে স্ক্যাপ মালামাল বিক্রির টেন্ডারে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ৬শত টাকার ব্যাংক ড্রাফট জালিয়াতি করে ৬ কোটি টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয়েছে। এ জালিয়াতিকে কেন্দ্র করে সর্বত্র চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ফ্যাক্টরির অসাধু কিছু কর্মকর্তার যোগসাজসে এমন অনিয়ম-দুর্নীতি হতে পারে বলে সচেতন মহলের ধারণা।
জানা যায়, ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এ দেশের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান। দেশের অবকাঠামো নির্মাণে এ শিল্পের রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা। এ সিমেন্ট ফ্যাক্টরির পুরাতন প্রজেক্টের মালামাল, বিভিন্ন স্থাপনা, যেখানে যে অবস্থায় আছে স্ক্যাপ মালামাল বিক্রির টেন্ডার গেল ৫ মে দেওয়া হয়। এ টেন্ডার রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় সিমেন্ট ফ্যাক্টরির অফিসে বক্স খোলা হয়। এ সময় টেন্ডার কমিটি, কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। দরপত্রে অংশ নেয় ৮টি প্রতিষ্ঠান। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বিল্লাল এন্টারপ্রাইজ। ওই প্রতিষ্ঠানের দরপত্রে ছিল ৭৫ কোটি ৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ৭১ কোটি ১ লাখ টাকায় দ্বিতীয় দরদাতা নির্বাচিত হন বিছমিল্লাহ সোনালী চেলা ইঞ্জিনিয়ারিং। ৬৯ কোটি ৯০ লক্ষ টাকায় তৃতীয় দরদাতা নির্বাচিত হয়েছেন মেসার্স রাকিব হাসান। ৬৩ কোটি ১৬ লক্ষ ৫ শ ৫৫ টাকায় চতুর্থ কর্ণফুলী রিভার্স ট্রান্সপোর্ট। এছাড়া শহীদ ট্রেডার্স ৬১ কোটি টাকা, রাব্বি এন্টারপ্রাইজ ৫৯ কোটি ৯৫ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা, সালেহ এন্ড ব্রাদার্স ৫১ কোটি টাকা ও মা আয়রণ পয়েন্ট ৪৯ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার দরপত্র দাখিল করেন।
এখানে সর্বোচ্চ দরদাতা বিল্লাল এন্টারপ্রাইজের ৬ শত টাকার পে-অর্ডারকে এনআরবিসি ব্যাংক ছাতক শাখার ম্যানেজারকে ম্যানেজ করে ছয় কোটি টাকা ভূয়া ড্রাফট তৈরির অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ে এ দরপত্রের স্বচ্ছতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
সরকারি এ ফ্যাক্টরির মালামাল বিক্রির জন্য এর আগেও একটি দরপত্র আহবান করা হয়েছিল। সে সময় ৭১ টি দরপত্র বিক্রি হলে জমা পড়েছিল মাত্র ৩ টি। এর মধ্যে ৫৯ কোটি ৩ লক্ষ ৪৪ হাজার ৬ শত ৬৫ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ-ভৈরবের মেসার্স মমিনুল হক। দেড়শ কোটি টাকারও বেশি টাকা মূল্যের মালামালের দরপত্র কম হওয়ায় সেটি বাতিল হয়েছিল। জালিয়াতির কারণে এবারও বাতিল হতে পারে টেন্ডার। জাল জালিয়াতির বিষয়টি সর্বত্রে আলোচনা সমালোচনা চলছে। স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি দ্রুত এই জালিয়াত চক্রের মুখোশ উন্মোচিত করা হোক। সরকারি এ প্রতিষ্ঠান যারা ধ্বংস করতে চায় ছাতকবাসী তাদের পরিচয় জানতে হবে। এছাড়া ইতোপূর্বে যারা ফ্যাক্টরি থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছে তাদেরকেও আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এনআরবিসি ছাতক শাখার ম্যানেজার সাখাওয়াত হোসেন এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন গত ২১ মে উপজেলার নোয়ারাই গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে আমির আলী আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিমেন্ট কারখানার নামে ৬শত টাকার একটি পে অর্ডার ইস্যু করে। এ পে অর্ডারকে জাল করে ৬ কোটি টাকা বানিয়েছে বলে অবগত করেছেন ফ্যাক্টরির এমডি।
বিএমআরই প্রজেক্টের পরিচালক ও সিমেন্ট ফ্যাক্টরির এমডি আবদুর রহমান বাদশা বলেন, গত ২৫ মে টেন্ডারে ৮টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয়েছে বিল্লাল এন্টারপ্রাইজ। এনআরবিসি ব্যাংকের ৬শত টাকার ড্রাফটকে ৬ কোটি টাকা বানিয়ে দরপত্র বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। ব্যাংক ড্রাফট জালিয়াতি ঘটনায় সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্ততি চলছে।