১৪ বছর পর মুক্ত বাতাসে এটিএম আজহার: ‘জুডিশিয়াল কিলিং’-এ জড়িতদের বিচার দাবি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ মে ২০২৫, ৮:০৪:১৫ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : অবশেষে মুক্ত বাতাসে নিংশ^াস ফেললেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রটারী জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম। প্রায় ১৪ বছরের নি:সঙ্গ কারাবাস শেষে বুধবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিরত অবস্থায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
এ সময় সকাল তাকে দেখতে বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালে ভিড় করেন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। মুক্তি পাওয়ার পর হাসপাতালের ই-ব্লকে তাকে ফুলেল সংবর্ধনা দেন জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর এ টি এম আজহারুল ইসলামকে শাহবাগের জনারন্য মঞ্চে সংবর্ধনা দেয় জামায়াতে ইসলামী। সেখানে ব্যাপক উপস্থিতির মাঝে তাঁকে আবারো ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেন দলের আমীর ডা: শফিকুর রহমান।
এসময় বক্তব্যে জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহার বলেছেন, আজ আল্লাহর রহমতে আমীরে জামায়াতের কাছ থেকে ফুলের মালা পাচ্ছি। গলায় রশি ঝুলানোর পরিবর্তে ফুলের মালা পাচ্ছি। আজীবন যেন আমি ইসলামী আন্দোলনের জন্য সাথে থাকতে পারি, শহীদ হতে পারি, সেই তৌফিক আল্লাহর কাছে চাই।
সংবর্ধনায় এ টি এম আজহারুল বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আমি প্রায় ১৪ বছর কারাগারে থাকার পর আজ সকালে মুক্ত হলাম। আমি এখন মুক্ত, আমি এখন স্বাধীন। স্বাধীন দেশে আমি একজন স্বাধীন নাগরিক। এর জন্য তিনি প্রথমে মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এরপর আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তারা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। এতদিন ন্যায় বিচার ছিলো না, আদালতকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। আশা করি, সামনের দিনগুলোতে আদালত জনগণের আশা-আকাঙ্খা অনুযায়ী তারা যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন।
নিজের মামলায় নিয়োগকৃত আইনজীবীদেরও ধন্যবাদ জানান আজহারুল। তিনি বলেন, আরও ধন্যবাদ জানাতে চাই, যাঁদের কারণে আজকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, সেই ৩৬ জুলাই অর্থাৎ ৫ আগস্টের মহাবিপ্লবী নায়কদের। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছে। আমি ধন্যবাদ জানাব এক্ষেত্রে ছাত্রসমাজকে, যাঁরা তাঁদের অতীতের গৌরব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। সেনাবাহিনীকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।
সাবেক আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা ও মীর কাশেম আলীকে ‘জুডিশিয়াল কিলিং’ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, যারাই এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যেখানে যে পর্যায়ে জড়িত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার করা হোক। তা না হলে এই খারাপ সংস্কৃতি চালু থাকবে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
সংবর্ধনার এই আয়োজনে জামায়াতের আমীর ডা: শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের সম্মানিত এই ভাইয়ের (আজহারুল) বক্তব্য অচিরেই আমরা আরও বড় পরিসরে শুনব, ইনশাআল্লাহ। এই ঢাকাতেই শুনব, ইনশাআল্লাহ। আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি যে মানুষটাকে সুদীর্ঘ ১৪টি বছর ঘাড়ের ওপর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়ে জুলুম করা হয়েছে। আল্লাহ তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। মহান রব তাঁকে আমাদের বুকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন।
জামায়াত আমীর আরও বলেন, দেশের ১৮ কোটি মজলুম মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জালিম সরকারের পতন হয়েছে। আমরা এর মূল কৃতিত্ব আল্লাহ তাআলাকে দিই আর জমিনে এই কৃতিত্ব এ দেশের জনগণকে দেওয়ার পক্ষে। জাতির প্রয়োজনে আমরা একপথে হাঁটবো এবং সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম সংবর্ধনার আয়োজনটি সঞ্চালনা করেন। দলের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান ও সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ ও মাওলানা আবদুল হালিম প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।