ঘূর্ণিঝড়প্রবণ মাস ‘মে’ : দেড় যুগে ১২ ঘূর্ণিঝড়, ব্যতিক্রম এবার
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মে ২০২৫, ১:৩৮:৫১ অপরাহ্ন
সিলেট অঞ্চলে বন্যা ঝুঁকি, সতর্কতা জারি
জালালাবাদ রিপোর্ট : মে মাস ঘূর্ণিঝড়প্রবণ মাস। গত দেড় যুগে (২০০৭ থেকে ২০২৫) এই মাসে ১২ বার ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। এর আঘাত পড়েছে উপকূলে। কিন্তু এবার এর পুরো ব্যতিক্রম। সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হলেও তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়নি। যদিও সম্ভাব্য এ ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল ‘শক্তি’। তবে ভারী বৃষ্টিতে সিলেটের ৪ জেলাসহ দেশের ১১ জেলায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
চলতি মাসের শুরুতে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছিল, মাসের শেষে একটি ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার অধিদপ্তরের সব আবহাওয়াবিদ বারবারই জোর দিয়ে বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় হওয়ার আশঙ্কা কম; বরং একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। বাস্তবেও তা-ই হলো।
নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলো না কেন :
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ঘূর্ণিঝড়’ নিয়ে আলোচনার দাপট লক্ষ্য করা গেছে। এর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে নানা কথাও বলা হয়েছে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল ‘শক্তি’।
গত মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। বুধবার তা সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে এটি নিম্নচাপে পরিণত হয়। পরে তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে বেলা ৩টার দিকে।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেছেন, নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে উপকুল অতিক্রম শুরু করে বিকেলে। এর গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী এটি স্থলভাগের দিকে উঠে এসেছে। এ থেকে ঘূর্ণিঝড় হওয়ার আশঙ্কা নেই।
সাগরে প্রথম লঘুচাপ, তারপর সুষ্পষ্ট লঘুচাপ, পরে নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপ এবং শেষে তা ঘূর্ণিঝড় হয়। এবার শুরুর প্রক্রিয়াগুলো একই রকম ছিল। কিন্তু শেষতক ঘূর্ণিঝড় হলো না। কেন?
এ প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়াবিদেরা কয়েকটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। এর প্রথম কারণ হিসেবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম কামরুল হাসান মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কথা বলেছেন। তাঁর কথা, ‘মৌসুমি বায়ু এবার সময়ের আগেই দেশে প্রবেশ করেছে। আর তা অনেকটাই সক্রিয়। এই সক্রিয়তা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে দেয়নি।
এদিকে, নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাবে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, নিম্নচাপের এর প্রভাবে দেশের অন্তত ১৪ জেলার বিভিন্ন স্থানে ২ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
সিলেটে বন্যার শঙ্কা, সতর্কতা জারি :
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি আগামী তিন দিন বাড়তে পারে। এসব নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এ সময় সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় এসব নদী-সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আজ শুক্রবার পর্যন্ত পূর্বাভাসে এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
একইসাথে চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী ও ফেনী ইত্যাদি নদীর পানি বাড়তে পারে। এ সময় মুহুরী নদীর পানি কিছু পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
এতে ফেনী জেলার মুহুরী নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির ঝুঁকি রয়েছে। পানি বেড়ে রংপুর বিভাগে তিস্তা নদীও কিছু পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে তিস্তাসংলগ্ন রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।