বন্যা ঝুঁকিতে সিলেট-সুনামগঞ্জ
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মে ২০২৫, ১১:৫৯:০৮ অপরাহ্ন
সিলেটে ৩৬ ঘন্টায় ২১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি
আগামী ৩ দিনে পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা
স্টাফ রিপোর্টার : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি রূপ নিয়েছে স্থল নিম্নচাপে। এটি শুক্রবার সকালে অবস্থান করে রাজধানী ঢাকা এবং এর আশপাশে। দিনের শেষ দিকে এর গতিপথ হয়ে যায় সিলেটমুখী। এর প্রভাবে অবিরাম বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে। টানার বৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারতের পাহাড়ি ঢল। এতে সিলেট-সুনামগঞ্জে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়েছে। বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে সিলেটের ৩ নদীর পানি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, গভীর নিম্নচাপটি এখন অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং শুক্রবার শেষ বিকেলে এটি লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। তবে এর প্রভাবে আজ শনিবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম বলেন, নিম্নচাপটি দিনের শেষ দিকে লঘুচাপে পরিণত হলেও এর প্রভাবে বৃষ্টিপাত চলবে। এর গতিপথ এখন সিলেটমুখী।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট অফিসের তথ্যমতে, সিলেটে ৩৬ ঘন্টায় ২১৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এরমাঝে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ৮৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার এবং শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘন্টায় ১২৮ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত ২১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সেদেশের আবহাওয়া অফিস বৃষ্টিপাতের এই তথ্য রেকর্ড করেছে। ফলে উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেটের সকল নদ-নদীতে পানি বাড়ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন বলেন, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সিলেটে ভারিবর্ষণ ও দমকা হওয়া বহমান রয়েছে। সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এ কারণে বৃষ্টি হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, সিলেটে বন্যা নির্ভর করে ভারতের বৃষ্টিপাতের ওপর। দেশেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে আবার ভারতেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আবার দেশে আগামী তিনদিন বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা আছে। যদিও সিলেটের কোনো নদীর পানি এখনো বিপদসীমা অতিক্রম করেনি তারপরও ভারতের পাহাড়ি ঢলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার শঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে মেঘালয় হিলসের পানি সারি গোয়াইন, ডাউকি দিয়ে বেশি নামবে। তাই এসব নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষকে বিশেষভাবে সর্তক থাকতে হবে।
শুক্রবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী তিনদিনের মধ্যে দেশের ছয় জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীগুলোর পানি সমতল আগামী তিনদিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং নদীগুলোর পানি সমতল বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এ সময়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় উক্ত নদীগুলোর সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডে সিলেটের তথ্যমতে, সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, ধলাই, পিয়াইন ও সারি নদীসহ সবকটি নদনদীর পানি সমতলে মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে সারিগোয়াইন, ডাউকি ও সারি নদীর পানি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার বেলা ৩টায় সিলেট জেলার কানাইঘাটে সুরমার পানি বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৩৮ সেন্টিমিটার, বিপদসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সে.মি। সিলেটে পয়েন্টে ৭ দশমিক ৭১ সে.মি, বিপদসীমা ১০ দশমিক ৮ সে.মি.।
কুশিয়ারা জকিগঞ্জের অমলসিদে ৯ দশমিক ৭৯ সেন্টিমিটার, বিপদসীমা ১৫ দশমিক ৪০ সে.মি.। শেওলা পয়েন্টে ৮ দশমিক ৩৮ সে.মি, বিপদসীমা ১৩ দশমিক ০৫ সে.মি। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৭ দশমিক ৬৯ সে.মি, বিপদসীমা ৯ দশমিক ৪৫ সে.মি.।
এছাড়া পাহাড়ি নদী কানাইঘাটের লোভাছড়ার পানি বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৭০ সে.মি। জৈন্তাপুরের সারি নদী ১১ দশমিক ৬২ সে.মি., বিপদগসীমা ১২ দশমিক ৩৫ সে.মি। জাফলং ডাউকি ১১ দশমিক ৫২ সে.মি, বিপদসীমা ১৩ সে.মি.। গোয়াইনঘাট সারি গোয়াইন ৮ দশমিক ১৮ সে.মি., বিপদসীমা ১০ দশমিক ৮২ সে.মি. এবং জেলার কোম্পানীগঞ্জের ইসলামপুর ধলাই নদীর পানি বেড়ে ১০ দশমিক ৪২ সেন্টিমিটারে পৌঁছেছে।
এদিকে, দেশের অন্যান্য স্থানের মতো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার দিনভর সিলেটে ভারী বর্ষণ ও দমকা হাওয়া বয়ে যায়।
সিলেটজুড়ে মুষলধারে বৃষ্টিতে জনজীবনে ছন্দপতন ঘটেছে। নগরের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে ভোগান্তি পোহান মানুষ। নগরের অনেক এলাকার খানাখন্দকে ভরপুর সড়কগুলোতে জমে যাওয়া পানিতে দুর্ঘটনার সম্মুখিন হন পথচারীসহ যানবাহনের আরোহীরা।
নির্ঘুম রাতও কাটাতে দেখা গেছে শহরের নিম্নাঞ্চল এলাকার বসবাসকারীদের। রেলস্টেশন, উপশহর, কুমারপাড়া, রায়নগর, মদীনা মার্কেট, দরগাহ মহল্লা, পীর মহল্লা, হাউজিং এস্টেট, শিবগঞ্জ, মেন্দিবাগ, রেলগেইট, মাছিমপুর, দক্ষিণ সুরমা, মেজরটিলাসহ অসংখ্য এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে, সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নামা ঢলে জেলার নদ-নদী ও হাওরে পানি বেড়েছে। আগামী তিন দিন মাঝারি ও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পাউবো ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢল নেমে প্রথমেই সীমান্তবর্তী জেলার ছাতক, সুনামগঞ্জ সদর দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা বন্যাকবলিত হয়। এবারও বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এই পাঁচ উপজেলার নদ-নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে। তবে হাওরে এখনো পানি কম থাকায় বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা কম।
সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১৫ মে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি তাঁদের দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। যেকোনো প্রয়োজনে সেখানে যোগাযোগ করতে নাগরিকদের অনুরোধ করা হয়েছে।