সিলেট সীমান্তে ৩ সপ্তাহে ৫১২ জনকে পুশইন
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুন ২০২৫, ১২:১২:২১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : কড়া নজরদারী ও সতর্ক অবস্থানেও সিলেট সীমান্তে বন্ধ হচ্ছেনা পুশইন। চলতি মে মাসের শেষ ৩ সপ্তাহে সিলেটের পৃথক সীমান্ত দিয়ে ৫১২ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার নওয়াগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ২১ জনকে পুশইন ( জোরপূর্বক ঠেলে পাঠায়) বিএসএফ। পরে তাদের আটক করে ৫২বিজিবি সদস্যরা। এ নিয়ে গত ৩ সপ্তাহে শুধুমাত্র বিয়ানীবাজার সীমান্ত দিয়ে ৫৩ জনকে পুশইন করল বিএসএফ।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে বিয়ানীবাজার ব্যাটালিয়ন ৫২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদী হাসান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকৃতরা বাংলাদেশী বলে জানা গেছে। তারা বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে ভারতে কাজের সন্ধানে গিয়েছিলেন। তারা সেখানে দিনমজুরের কাজ করতেন। শুক্রবার তাদের জোরপূর্ব ক পুশইন করে বিএসএফ।
এর আগে গত বুধবার জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়ান ১৯ বিজিবি ১৯ ও সিলেট ব্যাটালিয়ন ৪৮ বিজিবির আওতাধীন সিলেট ও সুনামগঞ্জের চারটি সীমান্ত এলাকা দিয়ে ৮২ জনকে পুশইন করে বিএসএফ। জৈন্তাপুর উপজেলার মোকামপুঞ্জি দিয়ে ৩২ জন, মিনাটিলা দিয়ে ২০ জন ও ডিবির হাওর সীমান্ত দিয়ে ১৪ জনকে পুশইন করা হয়। একইদিন সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক ছনবাড়ি সীমান্ত দিয়ে ১৬জনকে পুশইন করে বিএসএফ।
এর আগে গত ২৬ মে (সোমবার) সকাল পৌণে ৮টায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের মতেরবল সীমান্ত া দিয়ে ২১ জনকে পুশইন করে বিএসএফ। একই দিনে চুনারুঘাটের কালেঙ্গা সীমান্ত দিয়ে আরো ১৯ জনকে পুশইন করা হয়।
গত ২৪ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৫৩ জনকে পুশ-ইন করে বিএসএফ। এদের মধ্যে বড়লেখার লাতু বিওপি ক্যাম্পে ৭৯ জন, পাল্লাথল বিওপি ক্যাম্পে ৪২ জন ও নয়াগ্রাম বিওপি ক্যাম্প ৩২ জনকে পুশইন কালে আটক করে বিজিবি।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ মে সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে ২১ বাংলাদেশিকে পুশইন করে বিএসএফ। তাদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ, চারজন নারী ও পাঁচজন শিশু ছিলেন। এর আগে গত ১৪ মে একই উপজেলার ডোনা সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে আরও ১৬ নারী-পুরুষকে পুশইন করা হয়। তাদের মধ্যে আটজন পুরুষ, ৬ জন নারী ও দুজন শিশু ছিলেন।
গত ২২ মে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া সীমান্ত দিয়ে শিশুসহ ৭ বাংলাদেশিকে পুশইন করেছে বিএসএফ। আটকদের মধ্যে ছিলেন দুইজন পুরুষ, দুইজন নারী ও তিন শিশু। তারা সবাই কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা।
গত ১৬ মে মৌলভীবাজারের বড়লেখার নিউ পাল্লাথল সীমান্ত এলাকা দিয়ে আরও ১৬ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। এরমধ্যে ১৪ জন নারী ও দুজন পুরুষ ছিলেন।
গত ১৪ মে মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাল্লাতল সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুসহ ৪৪ জনকে পুশইন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৩ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী ও ১৩ শিশু ছিলেন।
এর আগে গত ৮ মে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে আরও ১৫ জনকে পুশইন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯ জন পুরুষ, তিনজন নারী ও তিনজন শিশু ছিলেন।
এদিকে, সীমান্তে পুশ-ব্যাক ঠেকাতে তৎপর বিজিবি। গোয়াইনঘাটের খাসিয়া হাওড়, তামাবিল, সোনাটিলা, সংগ্রামপুঞ্জি, পান্তুমাই, বিছনাকান্দিসহ ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত পয়েন্টে টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।
বিজিবি সূত্র আরো জানায়, ৭ মে থেকে ২৯ মে (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত সিলেট বিভাগের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ৫১১ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১৪৫, মৌলভীবাজারে ৩৩১, হবিগঞ্জে ১৯ এবং সুনামগঞ্জের সীমান্ত দিয়ে ১৬ জনকে বিএসএফ ঠেলে পাঠিয়েছে।
সিলেট ব্যাটালিয়ান ৪৮ বিজিবির অধিনায়ক লে: কর্ণেল নাজমুল হক বলেন, পুশইন ঠেকাতে সীমান্তে চার স্তরের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সীমান্তে চব্বিশ ঘণ্টা টহল জোরদার ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। পুশইন ঠেকাতে স্থানীয় লোকজনও এগিয়ে এসেছেন। তাদের সঙ্গে নিয়ে বিজিবি সীমান্তে কাজ করছে। বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর কারণে বিএসএফ কৌশলে ভোররাতে পুশইনের চেষ্টা করছে। বিশেষ করে বিএসএফ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কাউকে ঠেলে দিলে আমরা পুনরায় ঠেলে দিতে পারিনা। কারণ তারা বাংলাদেশী বলে পরিচয় দেয়। এরপরও সকল সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।