সিলেটে চোখ রাঙাচ্ছে বন্যা : জলাব্ধতায় বিপর্যস্ত নগর
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুন ২০২৫, ১২:৩০:৫১ অপরাহ্ন
* সিলেটে ৩৬ ঘন্টায় ৩৩০ মি.মি. বৃষ্টি * চেরাপুঞ্জিতে ২৪ ঘন্টায় ৪১০ মি.মি. বৃষ্টি *
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে ভারী বৃষ্টি ও সীমান্তের ওপারে ভারতের ঢলে সিলেটে চোখ রাঙাচ্ছে বন্যা। নদ-নদীতে দ্রুত বাড়ছে পানি। প্লাবিত হচ্ছে সিলেটের নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা। চরম জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে সিলেট নগরের অধিকাংশ এলাকা। এ অবস্থায় ভোগান্তির সাথে আতঙ্ক নিয়ে মুহূর্ত পার করছেন সিলেটবাসী।
শনিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘন্টায় সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ১৯৮ মিলিমিটার। এর আগের ২৪ ঘন্টায় (শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) বৃষ্টি হয়েছে ১৩২ মিলিমিটার। অর্থাৎ ৩৬ ঘন্টায় সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ৩৩০ মিলিমিটার। সন্ধ্যা ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি অব্যাহত ছিলো।।
অন্যদিকে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ভারতে বৃষ্টি হলেই পাহাড়ি ঢল সীমান্তের নদ-নদী দিয়ে সিলেটে আসে। রীতিমতো সেই ঢল নামা শুরু হয়েছে। এতে সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারাসহ নদ-নদীগুলোতে দ্রুত বাড়ছে পানি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, সিলেটের পাশাপাশি ভারতে মেঘালয়ে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। এতে জেলার প্রধান দুই নদী সুরমা, কুশিয়ারাসহ সব কটি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। সারি-গোয়াইন ও ধলাই নদের পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এটাই সতর্কবার্তা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর পানি কানিশাইল পয়েন্টে বিপদসীমার মাত্র ৯ সেন্টিমিটার নিচে, আর কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এয়াড়া অন্যান্য পয়েন্টেও বিপদসীমার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আজকের মধ্যে বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলতে পারে।
সীমান্তবর্তী উপজেলায় অবনতির শঙ্কা :শনিবার সকালে গোয়াইনঘাট উপজেলার গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়কের অংশবিশেষ পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ওই সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার নিম্নাাঞ্চলে দ্রুত পানি বাড়ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলেও পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
এছাড়া বালাগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলার অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র জাফলং ও বিছনাকান্দি এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব স্থানে পর্যটকদের ভ্রমণ করতে না যাওয়াটাই ভালো বলে স্থানীয় লোকজন পরামর্শ দিয়েছেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী শনিবার বেলা ১টার দিকে জানান, উপজেলার গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়কের নিচু অংশের অংশবিশেষ প্লাবিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পানি বৃদ্ধি পেলেও কারও পানিবন্দী অবস্থায় থাকার খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে; পাশাপাশি জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনা খাবারের মজুত রাখা হয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাঁধন কান্তি সরকার বলেন, নদ-নদীর পানি বাড়লেও আপাতত বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনও আশঙ্কা নেই। উপজেলার নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হয়ে স্বল্প মেয়াদে বন্যা হতে পারে।
জাফলং পর্যটনস্পটের ট্যুরিস্ট পুলিশের ওসি শাহাদাৎ হোসেন জানান, জাফলংয়ে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে এবং নদীর পানি বাড়ছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং পর্যটকদের ঝুঁকি এড়িয়ে নিরাপদে অবস্থান করার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ শনিবার বেলা দেড়টার দিকে গণমাধ্যমে বলেন, তিনি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গোয়াইনঘাট উপজেলায় যাচ্ছেন। এর আগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় গিয়েছিলেন। স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
ডুবলো সিলেট নগর :
ঋারী বৃষ্টিতে সেই পুরানো রূপে সিলেট মহানগরী। ডুবেছে অধিকাংশ এলাকা। অবর্ননীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নগরবাসী। চোখ রাঙাচ্ছে সেই ২০২২ সালের মহা দুর্ভোগ।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কোথাও হাঁটু পানি, কোথাওবা কোমর সমান। নগরীর চৌকিদেখী, বাদাম বাগিচা, রিকাবিবাজার, আম্বরখানা, ইলেক্ট্রিসাপ্লাই, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল সড়ক, বাগবাড়ী, উত্তর বাগবাড়ী এলাকা, মিরাবাজার, সুরমাতীরের মহাজনপট্টি, কালিঘাট, কাষ্টঘর, উপশহর-সুবহানীঘাট সংলগ্ন এলাকা, বিমানবন্দর, শাহপরাণ, কদমতলী ও সংলগ্ন এলাকায়, কাজিরবাজার, তালতলা, জামতলা, মাছিমপুর, হাওয়াপাড়া ইত্যাদি এলাকার রাস্তাঘাটগুলো পানির নিচের তলিয়ে যায়। জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা পয়েন্টও পানিতে টাইটুম্বুর হয়ে যায়। কিছু এলাকায় পানি নেমে গেলেও বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বাসিন্দারা। নগরের নিম্নাঞ্চলগুলোর অনেক বস্তির ঘরে ঘরে পানি প্রবেশের খবরও পাওয়া গেছে।
এদিকে আকস্মিক অতিবৃষ্টির কারণে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জরুরী যোগাযোগের জন্য কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে বলে এক অফিস আদেশে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের সচিব আশিক নূর।
অফিস আদেশে বলা হয়, সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় তলার ২০৫ নম্বর কক্ষে এ কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়। এ কক্ষের দায়িত্বে আছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর। তাঁর মুঠোফোন নম্বর: ০১৭১১৯০৬৬৪৭। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে থাকবেন প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ একলিম আবদীন।
সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ওয়ার্ড সচিবদের নিজেদের অধিক্ষেত্রে অবস্থান করে সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুততম সময়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও অফিস আদেশে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে বৃষ্টি কমার সঙ্গে সঙ্গে পানি নেমে যাচ্ছে।