টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা ঝুঁকিতে বড়লেখা
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুন ২০২৫, ৭:৫৮:০৯ অপরাহ্ন
* পাঁচ শতাধিক কাচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত, খোলা হয়েছে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র
আব্দুর রব, বড়লেখা প্রতিনিধি:
গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে বন্যাপ্লাবিত হচ্ছে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার নিম্নাঞ্চল। এ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখন পানির নিচে। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে রাস্তাঘাট। শনিবার (৩১ মে) দুপুর থেকে বড়লেখা পৌরসভার বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া টানা বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় পাঁচ শতাধিক কাচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। ঢলের পানিতে ভেসে গেছে খামারিদের মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমি।
রোববার (১ জুন) বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে টিলা ধ্বসে পড়ার আশঙ্কায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী পরিবারকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত বড়লেখা পৌরসভা ও উজানের ৩টি ইউনিয়নের ১৪৪টি পরিবারকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি। আবহাওয়া দফতরের সতর্কীকরণ অনুযায়ী, আগামী দুইদিন অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বড়লেখার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, টানা ভারী বর্ষণের ফলে শনিবার দুপুরের দিকে বড়লেখা-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ, রতুলী, পানিদার, পৌর শহরের পাখিয়ালা, উপজেলা চত্বর, থানা ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকা, হাজীগঞ্জ বাজার ও উত্তর চৌমুহনী, বড়লেখা কলেজ রোড এলাকার সড়ক তলিয়ে যায়। এতে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন মানুষ। এসব সড়কের বিভিন্ন এলাকায় রোববার বিকেল পর্যন্ত পানিতে নিমজ্জিত ছিল। এছাড়া ঢলের পানিতে বড়লেখা পৌর শহরের হাজীগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে মালামাল নষ্ট হয়েছে। এতে বাজারের ব্যবসায়ীদের প্রায় ৪-৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
অন্যদিকে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বড়লেখা আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীন পানিদার এলাকার সাব-স্টেশন-১ এর ভেতরে কোমর সমান পানি হওয়ায় শনিবার বিকেল থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন প্রায় ৮০ হাজার গ্রাহক। ঢলের পানি কিছু কমায় রোববার সকালের দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। তবে বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়নি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছায়েদুল ইসলাম সুমন বলেন, আমার এলাকায় ভারী বর্ষণে প্রায় অর্ধশতাধিক কাচা বাড়ি, ১০০ বিঘার মতো ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢলে অনেক পুকুর ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। এতে মৎস্য চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ বলেন, আমার ইউনিয়নের শাহবাজপুর বাজারে ভারী বর্ষণ ও ঢলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে অনেক দোকানে পানি ঢুকে ব্যবসায়ীদের মালামাল নষ্ট হয়েছে। ইউনিয়নের পাতন এলাকায় টিলা ধ্বসে একটি পরিবারের ঘর বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেননি।
বড়লেখা উপজেলা হাজীগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সদস্য সচিব আব্দুল হাছিব বলেন, ভারী বর্ষণ ও ঢলের পানি বড়লেখা পৌর শহরের দোকানে ঢুকে পড়ায় ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে তাৎক্ষণিভাবে ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বড়লেখা কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর অফিসে বন্যা আক্রান্ত এলাকায় বিতরণের জন্য ৩০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ১৬০টি জারিক্যান, ৫০ কেজি ব্লিচিং পাউডার মজুদ রয়েছে। বন্যা আক্রান্ত এলাকায় এগুলোর বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হলে জেলা অফিসে সংরক্ষিত মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে আক্রান্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে।
বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা আক্তার বলেন, ভারী বর্ষণ ও ঢলের কারণে দুর্গত মানুষকে আশ্রয় দিতে ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এখনও কেউ উঠেননি। আমাদের পর্যাপ্ত ত্রাণ-সামগ্রী মজুত আছে। রোববার তৎক্ষণিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমটির সভা হয়েছে। সর্ব সম্মতিক্রমে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বড়লেখা পৌরসভা ও ৩টি ইউনিয়নের ১৪৪টি পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।