বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব বানাতে চীনা বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুন ২০২৫, ৮:৫০:৩৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: বাংলাদেশকে বিনিয়োগের আদর্শ গন্তব্যস্থল উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনা ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে আসার এবং ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার ঢাকায় বাংলাদেশ-চীন বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা চীনা বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ আমরা একসাথে এই যাত্রা শুরু করছি- আমি আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি বাংলাদেশে বিদ্যমান বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে। টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প থেকে শুরু করে ওষুধ, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, পাট, মৎস্য ও তথ্য প্রযুক্তি- প্রতিটি খাতেই বিনিয়োগ ও অংশীদারিত্বের উপযোগী সুযোগ রয়েছে। এখানে বিনিয়োগ করে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব তৈরি করুন।’
বাংলাদেশ ও চীন সরকার যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মাল্টি পারপাস হলে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চীনা বিনিয়োগকারীরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের অর্থনীতি পাল্টে দিয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘সম্মেলনে আপনাদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনার প্রতীক। চীনা বিনিয়োগকারীরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের অর্থনীতি পাল্টে দিয়েছে। আমরা আশা করি, এই সফর বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একটি অনুরূপ রূপান্তরের সূচনা করবে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রস্থলে একটি কৌশলগত অবস্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আমাদের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেকেরই বয়স ২৬-এর নিচে। এই কর্মক্ষম জনশক্তি বাংলাদেশকে বিনিয়োগের আদর্শ গন্তব্য হিসেবে গড়ে তুলছে। তবুও, বহু দশক ধরে বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বহু অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছিল, কিন্তু সেগুলো খালি পড়ে ছিল- গরু চরানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। ব্যাপক দুর্নীতি, শাসনের ব্যর্থতা ও স্বৈরশাসন সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘লাখ লাখ তরুণের নেতৃত্বে সংঘটিত জুলাই বিপ্লব, সেই অন্ধকার যুগের অবসান ঘটিয়েছে। এই বিপ্লবের পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিডাকে একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেছে। আমরা এর পরিচালনায় বেসরকারি খাতের সেরা মেধাবীদের নিয়োগ দিয়েছি। আমরা বিনিয়োগকারীদের সমস্যা দেখভাল করার জন্য রিলেশনশিপ ম্যানেজার নিয়োগ করছি। এছাড়াও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতি মাসে প্রাতরাশ বৈঠকের আয়োজন করছি যাতে তাঁদের উদ্বেগের সমাধান, অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা যায়।’
কয়েক মাস আগে বেইজিং সফরের কথা স্মরণ করে ড. ইউনূস বলেন, আমি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে বাংলাদেশে চীনা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে অনুরোধ জানাই, কারণ আমরা আমাদের দেশকে এই অঞ্চলের একটি উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমি সম্মানিত যে প্রেসিডেন্ট সি তাঁর কথা রেখেছেন। চীনা কোম্পানিগুলো বিশ্বজুড়ে উৎপাদনে সর্বাগ্রে। বাংলাদেশে তাঁদের বৃহৎ বিনিয়োগ আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি গেম চেঞ্জার হতে পারে। সেইসঙ্গে আমাদের লাখ লাখ তরুণ, যারা ভালো চাকরির অপেক্ষায় রয়েছে তাদের জন্যও।
সম্মেলনে চীনের ১শ’টি কোম্পানির প্রায় ২৫০ বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী অংশগ্রহণ করেছেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।