ফুলে-ফেঁপে উঠছে সুরমা-কুশিয়ারা
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুন ২০২৫, ১২:০৫:০২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : টানা বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারা ফুলে-ফেঁপে উঠছে। কয়েক দিনের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে দুই নদীর পানি ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেড়েছে কয়েকগুণ। ইতোমধ্যে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ৪ পয়েন্টে পানি বিপদসীমা ছাড়িয়েছে। সিলেটের প্রধান এই দুই নদীর পানি বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় আতঙ্ক কাটছে না সিলেটবাসীর। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী জনবসতির মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, রোববার (১ জুন) সিলেটে বৃষ্টিপাত কমলেও গত ২৪ ঘণ্টার হিসেবে শনিবার সকাল ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে রেকর্ড ৪০৪.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটিই চলতি বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। অতিভারী বর্ষণের ফলে শনিবার সিলেট নগরীর অনেক এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়াও অনেকের বাসাবাড়িতেও পানি প্রবেশ করে। ফলে ওইদিন দূর্ভোগের শেষ ছিল না নগরবাসীর।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, টানা তিনদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে অতিভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এই অবস্থা আরও একদিন থাকতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আজ সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছর প্রথম বারের মতো সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমা ছাড়িয়েছে। ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে এবং সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে এই দুই নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদী অববাহিকার বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রোববার (১ জুন) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ২৯.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগের দিন শনিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৯৮.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় জানিয়েছে, রোববার (১ জুন) সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ৪টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। সুরমা নদীর কানাইঘাট, আমলসীদ এবং কুশিয়ারা নদীর শেওলা ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার কয়েক সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি।
পাউবো’র দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রোববার বিকেল ৩টায় সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা আগের দিন শনিবার সন্ধ্যায় বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১ দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিন শনিবার সন্ধ্যায় বিপদসীমার ১৮৭ সেন্টিমিটার নিচে ছিল।
সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিকেল ৩টায় বিপদসীমার ০.৫০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও এ পয়েন্টে পানি দ্রুত বাড়ছে। সকাল ৯টায় এ পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল বিপদসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। কুশিয়ারা নদীর বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টেও পানি বিপদসীমা ছাড়িয়েছে, বিকেল ৩টায় পানির প্রবাহ ছিল বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপরে। আর ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা সকাল ৯টায় প্রবাহিত হচ্ছিল বিপপসীমার ২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে।
জানা গেছে, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চলেও দ্রুত পানি বাড়ছে। বৃষ্টি ঝরছে ভারতের উজানেও। বিশেষ করে ভারতের আসাম রাজ্যের শিলচর, মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিসহ বরাক মোহনার অন্যান্য অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর প্রভাবে নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকবে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেট আঞ্চলিক অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জালালাবাদকে বলেন, শনিবার সকাল ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৪০৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টির হিসেবে চলতি বছর এটাই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিলেটের ১৩ উপজেলায় ৫৮২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ। তিনি বলেন, বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে নগর এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে জরুরী কন্ট্রোল রুম চালু করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। রোববার থেকে জলাবদ্ধতার পানি নিষ্কাসনে সিসিক কর্মচারীদের কাজ করতে দেখা গেছে। তবে বেলা ১টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত কয়েক ঘন্টা নগরীতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে সিসিক।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, সিলেট জেলার সুরমা, কুশিয়ারা নদীসমূহের ও মৌলভীবাজার জেলার মনু নদীর পানির সমতল বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা, মনু ও খোয়াই নদীসমূহের পানি সমতল আগামী দু’দিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে, সারি গোয়াইন, যাদুকাটা ও ধলাই নদীসমূহের পানির সমতল বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই সময়ে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এবং সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জ জেলার উক্ত নদীসমূহ সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।