বন্যা শঙ্কা কাটছে না, ৪ পয়েন্ট বিপদসীমার ওপরে
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুন ২০২৫, ১০:২৮:১৫ অপরাহ্ন
কুশিয়ারা ডাইকে ফাঁটল
স্টাফ রিপোর্টার: ভারতের মেঘালয় ও আসামের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে নেমে আসা উজানি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে সিলেটের প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারার পানি হঠাৎ বেড়ে গেছে। নদী দুটির ৪টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে।
এরমধ্যে কানাইঘাটে সুরমা নদী এবং জকিগঞ্জ, শেওলা ও ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার নিম্নাঞ্চলগুলোতে নতুন করে বন্যার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এছাড়া জকিগঞ্জে কুশিয়ারা ডাইকে ৩টি স্থানে ফাঁটল দেখা দিয়ে পানি ঢুকছে হু হু করে। স্থানীয়রা বালু ও মাটি ভর্তি বস্তা ফেলে ডাইক রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সীমান্ত জনপদগুলোতে পাহাড়ি ঢলের প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। জেলার সীমান্ত জনপদ হিসেবে পরিচিত জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাটে বন্যা নিয়ে শঙ্কায় দিনাপাত করছেন লোকজন।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্ট এবং কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ, শেওলা ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গতকাল সোমবার সন্ধ্য ৬টা পর্যন্ত কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার শূণ্য দশমিক ৯১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল, যা আগের দিন ছিল শুণ্য দশমিক ৮৩ সেন্টিমিটার।
অমলশিদে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ১ দশমিক ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল, যা আগের দিন ছিল ১ দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটার । শেওলায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার শূণ্য দশমিক ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল, যা আগের দিন ছিল শূণ্য দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার শূণ্য দশমিক ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল, যা আগের দিন ছিল শূণ্য দশমিক ৫ সেন্টিমিটার।
পাউবো জানিয়েছে, ভারতের পাহাড়ি এলাকা থেকে নেমে আসা অতিরিক্ত পানি এবং টানা বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে উজানের ঢলের প্রভাব বেশি পড়ছে সীমান্তবর্তী পয়েন্টগুলোতে।
এদিকে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সীমান্ত জনপদ জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর তিনটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়ে পানি ঢুকছে। এতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ডুবে যাচ্ছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে কুশিয়ারার ডাইকে আরও ভাঙন দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামের পাশে কুশিয়ারা নদীর ডাইক দিয়ে পানি প্রবেশ শুরু করে। সোমবার ভোররাতে একই ইউনিয়নের বাখরশাল ও সকাল ৮টার দিকে খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল গ্রামের পাশে কুশিয়ারা নদীল ডাইক ভেঙে যায়। এতে আশপাশের এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে।
এছাড়া জকিগঞ্জ পৌর শহরের নিকটবর্তী কেছরী গ্রামের পাশে ডাইকের ওপর দিয়ে শহরে ঢুকছে কুশিয়ারার পানি। মাইজকান্দি গ্রামের কাছে ডাইকের একাংশ ধসে পড়েছে নদীতে। জকিগঞ্জ ইউনিয়নের ছবড়িয়া, সেনাপতিরচক, সুলতানপুর ইউনিয়নের ইছাপুর, খলাছড়া ইউনিয়নের একাধিক স্থান, বারঠাকুরী ইউনিয়নের পিল্লাকান্দি ও আমলশীদসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক জায়গায় ডাইকের ওপর দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা বালু ও মাটি ভর্তি বস্তা ফেলে ডাইক রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এদিকে, এর আগে রোববার রেকর্ড ভেঙে সিলেটে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪০৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আরও তিন দিন বৃষ্টি হতে পারে। এতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা রয়েছে।