এ সুযোগ যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি : প্রধান উপদেষ্টা
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুন ২০২৫, ৯:৪৮:০৬ অপরাহ্ন
৩০টি দলের সাথে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক : দূরত্ব কমিয়ে আনার তাগিদ
জালালাবাদ রিপোর্ট : বিএনপি-জামায়াতসহ দেশের ৩০টির রাজনৈতিক দলের সাথে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন। বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলো সাথে সরকারের দূরত্ব কমিয়ে আনার বিষয়টি সর্বাগ্রে গুরুত্ব পেয়েচে। বৈঠকে এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বিকেল ৫টার কিছু আগে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই বৈঠক শুরু হয়। এই বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের অন্য সদস্য ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে এই আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ ও আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস; জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আজাদ; গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি; জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নিয়েছেন।
বৈঠকের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, একটি চমৎকার ‘জুলাই সনদ’ করা সম্ভব হবে, এমন আশা প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এ সুযোগ যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি।
অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য সংস্কার কমিশন গঠন ও পরবর্তীকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন এবং ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর প্রথম পর্বের আলোচনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তাঁর মনে হয়েছিল যে হয়তো দলগুলো এ কাজে আগ্রহ পাবে না, ভেতরে ঢুকতে চাইবে না। কিন্তু দলগুলো যেভাবে গভীরে গেছে, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছে, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিতর্ক করেছে, তাতে তিনি আনন্দিত হয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেকগুলো বিষয় আছে, কাছাকাছি এসে গেছি, আরেকটু হলে আমাদের তালিকাতে আরেকটা সুপারিশ যুক্ত হয়, ওই ঐকমত্যের সুপারিশে। এ সুযোগ যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি।
প্রথম পর্বের আলোচনায় যেসব বিষয়ে দূরত্ব রয়ে গেছে, দ্বিতীয় পর্বে সেগুলো ঘুচে যাবে, এমন আশা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘যেটুকু দূরত্ব ছিল, সে দূরত্ব ঘুচিয়ে এনে যাতে জুলাই সনদে বর্তমানে যতগুলো ঐকমত্যের বিষয় আছে, তার মধ্যে আরও কিছু যোগ করতে পারি। দেখতে সুন্দর লাগবে, জাতীয় একটা সনদ হলো।
রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি সারা দিনে যত মিটিং করি, এ পর্যন্ত যত মিটিং করে এসেছি, সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাই, যখন আপনাদের সঙ্গে বসার সুযোগ পাই, আলাপ করার সুযোগ পাই। কারণ, এখানে সবাই মিলে বাংলাদেশের প্রকৃত ভবিষ্যৎ রচনা করা হচ্ছে। এটা আমাকে শিহরণ জাগায় যে এ রকম একটা কাজে আমি জড়িত হতে পেরেছি, নিজেকে যুক্ত করতে পেরেছি।
ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনা হবে বিষয়ভিত্তিক। পবিত্র ঈদুল আজহার আগে একদিন এবং ঈদের পরে দলগুলোর ধারাবাহিকভাবে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা চলবে। বিশেষ করে সংবিধান সংস্কার কমিশনের যেসব মৌলিক প্রস্তাবে এখনো ঐকমত্য হয়নি সেগুলো এ পর্বে বেশি গুরুত্ব পাবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে আগামী জুলাই মাসে ‘জুলাই সনদ’ তৈরি করার লক্ষ্য রয়েছে ঐকমত্য কমিশনের।
গত ২০ মার্চ থেকে দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে প্রথম পর্বের আলোচনা শুরু করে ঐকমত্য কমিশন। প্রথম পর্বের আলোচনা শেষ হয় ১৯ মে। সোমবারের এই বৈঠক থেকে শুরু হলো দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা।