ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্ব : আলোচনাজুড়ে ‘আস্থা ভোট’
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুন ২০২৫, ৯:৫৭:০৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের বিষয়ভিত্তিক আলোচনা মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে আগামী মাসে জুলাই সনদ তৈরির লক্ষ্য রয়েছে ঐকমত্য কমিশনের।
গতকালের আলোচনায় সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের আস্থা ভোটের পক্ষে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ঐকমত্য পোষণ করেছে। বিএনপি ও এনসিপি বলেছে, সরকারের স্থায়িত্বের জন্য এই বিধান প্রয়োজন। তবে কোনো কোনো দল বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনার জন্য বলেছেন।
অন্যদিকে, জামায়াত সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে সংসদ সদস্যরা তাদের নিজ নিজ দলীয় অবস্থানের বাইরে ভোট দিতে পারেন-তবে এটি অর্থ বিল, অনাস্থা প্রস্তাব এবং সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
মঙ্গলবারের বৈঠকে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, নিম্নকক্ষে নারী আসন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্ধারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ও কার্যপরিধির একটি অংশ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক পরিস্থিতি ও সংস্কৃতি বিশ্লেষণ করে এবং উপমহাদেশের চর্চা বিবেচনা করে তাঁর দলের পক্ষ থেকে উপযুক্ত মত হচ্ছে, ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আস্থা ভোট না থাকলে সরকার পরিচালনায় স্থায়িত্ব থাকবে না। প্রতিনিয়ত সরকার পরিবর্তিত হতে থাকবে, যা শোভনীয় হবে না।
আস্থা ভোট, অর্থবিল এবং সংবিধান সংশোধন ছাড়া সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে মতামত প্রদান করবেন, এতে বিএনপি একমত। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে এই আস্থা ভোটের বিষয়টি ৭০ অনুচ্ছেদে যুক্ত করতে বিএনপি প্রস্তাব করেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনার মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময় জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন. আমাদের প্রস্তাব হলো জাতীয় ও স্থানীয় উভয় নির্বাচনই একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হোক।
জামায়াত সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে সংসদ সদস্যরা তাদের নিজ নিজ দলীয় অবস্থানের বাইরে ভোট দিতে পারেন-তবে এটি অর্থ বিল, অনাস্থা প্রস্তাব এবং সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
কিন্তু বিএনপি কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় চারটি বিষয় ছাড়া দলীয় অবস্থানের বাইরে সংসদ সদস্যদের ভোটদানের পক্ষে মত দেয়-এই চারটির মধ্যে জামায়াতের উল্লিখিত তিনটি বিষয় ছাড়াও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোও রয়েছে।
জামায়াতের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে অবস্থানের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ডা. তাহের বলেন, আমরা ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে প্রস্তাবিত তিনটি ব্যতিক্রমের বিষয়ে আমাদের মতামত দিয়েছি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ঐকমত্যের বিষয়গুলোয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাঁরা আরেকবার আলোচনা করবেন।
আস্থা ভোট রেখে দিলে প্রধানমন্ত্রী আনচ্যালেঞ্জড থেকে যাবেন, উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, এই প্রসঙ্গে কোনো উপায় বের করতে হবে। একদিনে শেষ না করে আরেকটি আলোচনায় বসে কোথায় ঐকমত্য হলো তা চূড়ান্ত করতে হবে।
আলোচনায় অংশ নেয় ৩০টি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াত ছাড়াও রয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), খেলাফত মজলিস, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), গণ অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২-দলীয় জোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণফোরাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জাকের পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, আমজনতার দল, ভাসানী অনুসারী পরিষদ/ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও ইসলামী ঐক্যজোট।