কাল আরাফা, কাল হজ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জুন ২০২৫, ৮:০৪:০৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : যতদূর দেখা যায়, শুধু তাবু আর তাবু। এরই মধ্য দিয়ে হাঁটছেন সাদা কাপড়ে ইহরাম বাঁধা হজযাত্রীরা। তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারিকা লাক’ যার অর্থ-হে আল্লাহ, আমি হাজির আছি, আমি হাজির আছি। আপনার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির আছি। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নেয়ামত আপনারই এবং সমগ্র বিশ্বজাহান আপনার। আপনার কোনো শরিক নেই।
এমন ধ্বনিতে মিনার উদ্দেশ্যে যাত্রার মধ্যে দিয়েছে আজ বুধবার শুরু হয়েছে ইসলাম ধর্মের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম হজের আনুষ্ঠানিকতা। আল্লাহর উদ্দেশ্যে যাত্রা করা হজ যাত্রীরা আজ সারাদিন মিনায় অবস্থান করবেন। এতে মক্কা থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে মিনা পরিণত হয়েছে তাঁবুর শহরে।
সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী তাওফিক আল রাবিয়া বলেছেন, এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কমপক্ষে ২০ লাখ হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন সৌদি আরবের স্থানীয় হজযাত্রীরা।
সৌদি আরবে ২৮ মে থেকে জিলহজ মাস গণনা শুরু হয়। সেই অনুযায়ী, আগামীকাল ৫ জুন আরাফাতের ময়দানে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা হবে। আর পরদিন অর্থাৎ পরশু শুক্রবার কোরবানির মধ্য দিয়ে ঈদুল আজহা উদ্যাপন হবে।
সৌদি সময় অনুযায়ী আজ ৮ জিলহজ। তাই কাল ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে পালিত হবে হজ। ফজরের পর সম্ভব হলে মিনায় গোসল করে নেওয়া অথবা অজু করে সকাল সকাল আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে রওনা হতে হয়।
জোহরের আগেই আরাফাতের ময়দানে গিয়ে উপস্থিত হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করতে হয়। সেখানে সমবেত হয়ে প্রার্থনা ও খুৎবা শোনাকেই হজ ধরা হয়।
আরাফাত ময়দানেরই পাহাড়ে দাঁড়িয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) তার বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি ও রীতিকে লালন করেন বিশ্বের সমস্ত মুসলিম। তারই ধারাবাহিকতায় হজযাত্রীরা ছুটে যাবেন আরাফাতের ময়দানে। এদিন বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মুসলিম রোজা পালন করেন। এ বছর আরাফাতের দিন আজ ৫ই জুন, বৃহস্পতিবার। মূলত এদিনটিকেই মূল হজ হিসেবে ধরা হয়।
ইস্ট লন্ডন মসজিদের ইমাম হাফিজ মাওলানা আবুল হোসাইন খান বলেন, রোজাটিও কাল ৫ জুন, বৃহস্পতিবার (আরাফাতের দিন) রাখাটাই যুক্তিযুক্ত। কারণ উল্লেখিত হাদীসে তারিখ উল্লেখ না করে রাছুলুল্লাহ (স:) ‘আরাফাতের দিন’ উল্লেখ করেছেন। যদি ৯ জিলহজ্ব উল্লেখ করতেন তাহলে যে দেশে যেদিন ৯ জিলহজ্ব সে দেশে সেদিন রোজা রাখা যেত। সম্ভবত আরাফাতের দিন রোজা রাখতে বলার উদ্দেশ্য এই যে, এই রোজার মাধ্যমে আরাফাতে অবস্থানকারী হাজীদের সাথে আল্লাহ অন্যদেরও ক্ষমা করে দিতে চান। সুতরাং এবছর ৫ জুন বৃহস্পতিবার আরাফাতের দিন রোজাটি রাখলে ঐ বিরাট ফজিলত পাওয়া যাবে। তবে ৯ জিলহজ্ব রোজা রাখলে জিলহজ্ব মাসের ১-৯ তারিখ রোজা রাখার যে ফজিলত সেটা পাওয়া যাবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে তা বিগত এক বছর ও আগত এক বছরের গুনাহকে ক্ষমা করিয়ে দেবে। (মুসলিম, হাদিস : ১১৬২)। উক্ত হাদিসে ‘আরাফার দিন’ বলতে হজের দিনকে বোঝানো হয়েছে।
কাল বৃহস্পতিবার সূর্যান্তের সাথে সাথে আরাফার ময়দান ত্যাগ করে হজ যাত্রীরা যাত্রা করবেন মুজদালিফার উদ্দেশ্যে। সেখানে পৌঁছে মাগরিব ও এশার নামাজ কসরের সাথে আদায় করবেন। মুজদালিফা থেকেই শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য ৪৯টি কংকর সংগ্রহ করবেন।
মুজদালিফায় সারারাত অবস্থানের পর শুক্রবার ফজরের নামাজ পড়ে হজ যাত্রীগণ রওনা দেবেন মিনার উদ্দেশ্যে। মিনায় পৌঁছে বড় শয়তানকে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ, মাথা মুণ্ডন ও কুরবানী দিয়ে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন হাজীরা। মেতে উঠবেন ঈদের আনন্দে।
তারপর মক্কায় গিয়ে কাবা শরিফ তাওয়াফ করবেন। তাওয়াফ, সাঈ শেষে আবার মিনায় ফিরে ১১ ও ১২ জিলহজ অবস্থান করবেন। সেখানে প্রতিদিন তিনটি শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন তারা।