এবারো চামড়ার ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কা!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুন ২০২৫, ৪:৫৫:৪১ অপরাহ্ন
আগ্রহ নেই সিলেটের ব্যবসায়ীদের
এমজেএইচ জামিল : সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চামড়াজাত পণ্যের দাম কয়েকগুণ বাড়লেও দিন দিন কমছে চামড়ার মূল্য। গেল কয়েক বছর ধরে নায্যমূল্য না পাওয়ায় কুরবানীর পশুর চামড়া পানিতে ফেলতে ও মাটিতে পুতে ফেলতে দেখা গেছে। এবারো সেই পুরনো শঙ্কার কথা জানাচ্ছেন সিলেট চামড়া ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া ঢাকায় ট্যানারী ব্যবসায়ী কর্তৃক বকেয়া পরিশোধ না করায় এবারো তেমন আগ্রহ নেই সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীদের। ফলে এবারো চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার শঙ্কা করছেন অনেকেই।
সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, গেল কয়েক বছর ধরে রাজধানীর ট্যানারি মালিকদের কাছে সিলেটের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীদের প্রায় দুই কোটি টাকা বকেয়া আটকে আছে। ফলে চামড়া ব্যবসায় সিলেটের অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তবে গত দুই মৌসুম থেকে ট্যানারি মালিকরা অল্প করে বকেয়া পাওনা টাকা পরিশোধ করছেন। এবারো ঢাকার ট্যানারী মালিকগণ সিলেটের ব্যবসায়ীদের ২০ থেকে ৪০% পর্যন্ত বকেয়া পরিশোধ করেছেন। তবে এখনো বকেয় আছে দেড় কোটি টাকারও বেশী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর সিলেট বিভাগে ৪ লক্ষাধিক পশু কুরবানী হয়েছে। কিন্তু বিভাগে অর্ধেক পশুর চামড়াও সংগ্রহ হয়নি বলে দাবী সিলেটের পাইকারী চামড়া ব্যবসায়ীদের। যদিও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বিসিক সূত্র জানিয়েছিল গেল বছর ছাগল-ভেড়া চামড়া নিয়ে অনাগ্রহ থাকায় সংগ্রহ কম হলেও গরু-মহিষের কোন চামড়া নষ্ট হয়নি। তবে মাঠের পরিস্থিতি ছিলো অনেকটা বিপরীতমূখী। গত বছর ঈদুল আযহার আগের দিন থেকে ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সিলেট নগরীসহ জেলা, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলাজুড়ে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। ফলে নগরীসহ অনেক স্থানে ঈদের দিন কুরবানী দিতে পারেন নি অনেকেই। একদিকে বন্যা অপরদিকে বৃষ্টি এই দুই কারণে কুরবানী শেষে পশুর চামড়া অনেকের বাড়ীর আঙ্গিনা পড়ে থাকার খবর পাওয়া গেছে। বিনামূল্যেও কেউ চামড়া না নেয়ায় শেষ পর্যন্ত বানের পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। আবার পরিবেশের কথা চিন্তা করে কেউ কেউ সন্ধ্যার পর মাটিতে পুতে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন।
সিলেটের ব্যবসায়ীরা জানান, এবছর সিলেট জেলায় ৫০ হাজার গরুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে বলে জানান তারা। তবে এবছরও চামড়া ব্যবসা নিয়ে শেষ পর্যন্ত আগ্রহ ঠিক থাকা নিয়ে সংশয় খোদ পাইকারী ব্যবসায়ীদের। সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ারও শঙ্কা করছেন। তারা বলেন, সবকিছুর দাম বাড়ছে, লবণের দামও বেড়েছে। কিন্তু আমাদের মূলধন তেমন বাড়ছেনা। আমরা লবণ দিয়ে সর্বোচ্চ ৩ মাস পর্যন্ত চামড়া রাখতে পারি। এরপর আমাদেরকে ট্যানারী মালিকদের কাছে যেতে হবে। কিন্তু ট্যানারী মালিকগণ প্রতি বছর বকেয়া রাখে। গত ৬/৭ বছর থেকে ট্যানারী মালিকগণ আমাদেরকে নগদ পরিশোধ না করায় আমাদের পুজি ক্রমশ কমছে। অনেকেই চামড়া ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেটের শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মিয়া দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, এবছর সিলেট জেলায় গরুর ৫০ হাজারের মতো চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সাইজভেদে একটি চামড়া সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকার বেশী দামে কেনা সম্ভব হবেনা। কারণ একটি চামড়ায় লবণ ও পরিচর্যা বাবদ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা খরচ হবে। তাই ব্যবসায়ীগণ সেই দিকে খেয়াল রেখেই চামড়া সংগ্রহ করবেন।
তিনি বলেন, সিলেটের ব্যবসায়ীদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা নেই। ঢাকায় ট্যানারী মালিকদের কাছে আমাদের বকেয়া টাকা পাওনা রয়েছে। অনেকেই চামড়ার ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। সিলেট জেলায় যেখানে ৪০০-৫০০ ব্যবসায়ী ছিলেন। সেখানে বর্তমানে জেলায় ব্যবসায়ী আছেন মাত্র ৫০-৬০ জন। অন্যরা চামড়া ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে ব্যবসায়ী আরো কমবে।