রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ২৭% বাড়লেও ব্যাংক আমানত ৪ শতাংশের ঘরে
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুন ২০২৫, ৮:২০:২৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ২৭% বাড়লেও প্রবাসী পরিবারগুলোর ব্যয় নির্বাহের পর রেমিট্যান্সের উদ্বৃত্ত অর্থ আমানত হিসেবে ব্যাংকে জমা থাকার কথা। তবে ব্যাংক খাতের আমানত প্রবৃদ্ধির চিত্রে সেটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ব্যাংক আমানত ৪ শতাংশের ঘরে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) দেশে ২ হাজার ১৭৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা। রেমিট্যান্স হিসেবে আসা এ অর্থের এক-তৃতীয়াংশও ব্যাংকে আমানত হিসেবে জমা হলে তা ৮৮ হাজার কোটি টাকার বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু এ সময়ে দেশের ব্যাংক খাতে মাত্র ৭৫ হাজার ৮১৪ কোটি টাকার আমানত বেড়েছে। যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংকে আমানত বেড়েছিল ৮০ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের তুলনায় চলতি অর্থবছর ৪ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকার আমানত কম বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে আমানত স্থিতি বেড়েছে ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ হারে আমানত বেড়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুনের শেষে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের স্থিতি ছিল ১৭ লাখ ৪২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চে এসে আমানতের এ স্থিতি বেড়ে ১৮ লাখ ১৮ হাজার ৬১১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। সে হিসাবে নয় মাসে আমানত বেড়েছে ৭৫ হাজার ৮১৪ কোটি টাকার। এক্ষেত্রে আমানত বৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক এখন মেয়াদি আমানতের বিপরীতে ১০-১২ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। এত উচ্চ সুদের পরও মানুষ ব্যাংকমুখী হচ্ছে না। এ কারণে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। প্রত্যাশিত হারে আমানত না বাড়ায় ব্যাংক খাতে তারল্যের সংকটও কাটছে না। আস্থাহীনতার কারণেই মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে ভয় পাচ্ছেন বলে মনে করছেন তারা।
ব্যাংক খাতের প্রতি আস্থাহীনতার কারণে কয়েক বছর ধরেই মানুষের মধ্যে নগদ টাকা ধরে রাখার প্রবণতা বেড়েছে। নগদ টাকার চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ইস্যুকৃত নোট (কারেন্সি ইন সার্কুলেশন) বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২৩ সালের জুনে ইস্যুকৃত নোটের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। গত বছরের জুনে এসে এ নোটের পরিমাণ ৩ লাখ ২০ হাজার ৩০৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। আর চলতি বছরের মার্চে ইস্যুকৃত নোটের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। ইস্যুকৃত এ নোটের মধ্যে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩১ কোটি টাকাই ছিল ব্যাংক খাতের বাইরে। অর্থনীতির আকারের তুলনায় নগদ এ অর্থের পরিমাণ অনেক বেশি। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান তথা গত বছরের ৫ আগস্ট থেকেই দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় প্রবৃদ্ধি চলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ২৭ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে)। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরে প্রবাসীরা ৬ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার বেশি পাঠিয়েছেন। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার জরিপ ও গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশে আসা রেমিট্যান্সের প্রায় ৭০ শতাংশই প্রবাসী পরিবারের ভোগে ব্যয় হয়। বাকি ৩০ শতাংশ ব্যাংকে আমানত হিসেবে জমা থাকে। তবে গত কয়েক বছরে ব্যাংক খাতের অস্থিরতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে প্রবাসী পরিবারের সঞ্চয়েও ভাটা পড়েছে। ব্যাংকে টাকা রাখার পরিবর্তে মানুষ জমি ক্রয় ও ভোগে বেশি ব্যয় করছেন।