মুখর পর্যটন স্পট, সিলেটে আড়াই লাখের বেশি পর্যটক
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুন ২০২৫, ১২:০১:২৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট পর্যটকদের কাছে অপার বিস্ময়। সবুজ চা বাগান, পাহাড় টিলা আর হাওর বেষ্টিত এই অঞ্চলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবারের পবিত্র ঈদুল আজহায় সিলেট অঞ্চলে পর্যটকদের ঢল নেমেছিল। সিলেট অঞ্চলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে সিলেটে ছুটে এসেছেন নানান বয়সী ভ্রমণ পিপাসুরা। ফলে সিলেটের হোটেল মোটেলগুলোকে পর্যটক সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে।
পর্যটক সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবারের ঈদুল আজহায় দীর্ঘ সরকারি ছুটি থাকায় প্রত্যাশার চেয়েও বেশি পর্যটক এসেছেন পর্যটন নগরী সিলেটে। বিলাসবহুল হোটেল মোটেলগুলো শতভাগ বুকিং ছিল। এছাড়া মধ্য মানের ও অল্প ভাড়ার হোটেলও খালি ছিল না। অনেক পর্যটক অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করে রাত্রিযাপন করেছেন। ফলে চাঙ্গা সিলেটের পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানিগঞ্জের উৎমা ছড়ায় স্থানীয়রা পর্যটকদের বাঁধা দেওয়ায় সিলেটের পর্যটন খাতে বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। এধরণের কর্মকান্ড সিলেটকে নেগেটিভ ভাবে উপস্থাপন করবে। ফলে এই অঞ্চলে আসতে আগ্রহ হারাবে পর্যটকরা। তাই এধরণের কর্মকান্ড থেকে সিলেটবাসীকে বিরত থাকতে হবে।
জানা গেছে, পর্যটকদের কাছে বরাবরই রোমাঞ্চকর বাংলাদেশের একমাত্র জলের বন রাতারগুল। বনের ভেতর নৌকা ভ্রমণের সময় নানা প্রজাতির সাপ ও প্রাণী রোমাঞ্চিত করে পর্যটকদের। সেখানকার বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলরবও মনোমুগ্ধকর। কোম্পানিগঞ্জের সাদা পাথরও অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। নদীর পরিস্কার ধবধবে পানি আর সাদা পাথরে মন ছুঁয়ে যায় পর্যটকদের। অনিন্দ্য সুন্দর প্রকৃতির জাফলং ও বিছানাকান্দিও পর্যটকদের বিমোহিত করে। এসব পর্যটন স্পটের সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাখো মানুষ আসেন সিলেটে। এছাড়া হযরত শাহজালাল (রহ:) ও হযরত শাহপরাণ (রহ:) মাজার এবং চা বাগানের সবুজ দৃশ্য মন কাড়ে পর্যটকদের।
পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবারের পবিত্র ঈদুল আজহায় প্রচন্ড গরমের মধ্যেও দীর্ঘ ছুটি থাকায় রেকর্ড পরিমাণ পর্যটক এসেছেন সিলেট। সিলেট, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলো মিলিয়ে আড়াই লাখেরও বেশি পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। ফলে এসব অঞ্চলের কোনো হোটেল মোটেলই খালি ছিল না। পর্যটকে ভরপুর ছিল সিলেট ও শ্রীমঙ্গলের হোটেল মোটেলগুলো।
জানা গেছে, ঈদের দ্বিতীয় দিন সিলেটের সাদাপাথর, জাফলং, রাতারগুল ও বিছানাকান্দিতে পর্যটকদের বিপুল সমাগম ঘটে। এখনও ছুটি থাকায় প্রতিদিনই পর্যটকদের আনাগোনা লেগে আছে এসব পর্যটন স্পটে। ঈদের পর সিলেটের কোনো হোটেল খালি ছিল না। শতভাগ রুম আগে থেকেই বুকিং ছিল। আর যারা হোটেল আগাম বুকিং না দিয়ে এসেছিলেন, তারা সস্তা মানের হোটেলেও রুম পেতে হিমশিত খেতে হয়েছে।
কুমিল্লা থেকে আগত পর্যটক সানজিদা আক্তার বলেন, জীবনে এই প্রথম সিলেটে বেড়াতে এসেছি। এখানে এসে সৌন্দর্য দেখে সিলেটের প্রেমে পড়ে গেছি। ঘুরার জন্য আমার দেখা বাংলাদেশের মধ্যে সিলেট, শ্রীমঙ্গল ও বান্দরবন বেস্ট জায়গা। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবচেয়ে সুন্দর।
নরসিংদী থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক দম্পতি তানজিনা আক্তার ও ইসমাঈল হোসেন বলেন, ঘুরার জন্য সিলেট সবসময় পছন্দের জায়গা। অতীতে আসলেও ছুটির ফাঁকে আবারও এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করেত এসেছি।
রাতারগুলের নৌকার মাঝি রাবেল মিয়া বলেন, অন্য যেকোনো সময়ে চেয়ে বেশি পর্যটক এসেছে এই ঈদে। ফলে আমাদের মাঝিদের আয়ও বেশি হয়েছে।
রাতারগুলের একটি ইকো রিসোর্টের জিএম এমদাদুর রহমান বলেন, আমরা চাই সহনশীল মাত্রায় পর্যটক আসুক রাতারগুলে। যাতে করে জীববৈচিত্বের ওপর বিরূপ প্রভাব না পড়ে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ জালালাবাদকে বলেন, এই ঈদে প্রচন্ড গরম থাকা সত্বেও প্রত্যাশার চেয়েও বেশি পর্যটক সিলেটে ঘুরতে এসেছেন। এর একটি বড় কারণ এবারের ঈদে লম্বা ছুটি। সেই সুযোগ হাতছাড়া করেনি ভ্রমণ পিপাসুরা। এছাড়াও সরকারের পলিসিও পজিটিভ ছিল। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও যথেষ্ট ছিল। ফলে পর্যটকরা নির্বিঘ্নে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, এই ঈদে সিলেটের কোনো হোটেল খালি ছিল না। এমনকি ৫০০ টাকা মানের হোটেলেও রুম ছিল না খালি। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি পর্যটক এসেছেন এই ঈদে। এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, এই ঈদের ছুটিতে সিলেট, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল ও সুনামগঞ্জ মিলে কমপক্ষে হলেও আড়াইলাখ পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। তবে উৎমা ছড়ার ঘটনায় সিলেটের পর্যটন শিল্পে ভবিষ্যতে বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। এজন্য তিনি সিলেটবাসীকে পর্যটনবান্ধব হওয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, পর্যটন সিলেটের অর্থনীতির প্রাণ। পর্যটন একটি উদীয়মান খাত। এই খাতের বিকাশ করতে হলে পর্যটনবান্ধব হতে হবে।