ইরানে ইসরায়েলের হামলা : উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য, বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০২৫, ১২:১০:৩০ অপরাহ্ন
সেনাপ্রধান, পরমাণু বিজ্ঞানীসহ নিহত ৭০
জালালাবাদ রিপোর্ট : ইরানে ভোররাতে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। পাল্টা ড্রোন হামলা দিয়ে জবাব দেয়া শুরু করেছে ইরানও। দুটি দেশের হামলা পাল্টা হামলাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত শুক্রবার ভোর রাতে ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামক ভয়াবহ হামলায় ৭০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানী রয়েছেন।
পরমাণু বিজ্ঞানীরা ছাড়াও নিহতের তালিকায় রয়েছেন ইরানের একাধিক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন- ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার হোসেইন সালামি ও খাতাম আল-আনবিয়া সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টারের কমান্ডার ঘোলামালি রশীদ।
ফার্স নিউজ এজেন্সি বলছে, ‘আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান অনুসারে ইসরায়েলি হামলায় ৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ৩২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (১৩ জুন) ভোররাতে ইরানে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। তেহরানের ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ওমানে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আয়োজিত একটি বৈঠকের একদিন আগেই এ হামলার ঘটনা ঘটল। অর্থাৎ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ভেস্তে দিতেই এই হামলা।
শুক্রবার ইরানের একাধিক স্থানে হামলা চালায় ইসরায়েল। বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে রাজধানী তেহরানসহ দেশটির একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির মধ্যাঞ্চলের ইস্পাহান প্রদেশের নাতানজ শহরে যেখানে গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা রয়েছে সেখানে বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ২০০টির বেশি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ১০০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে ৩৩০টিরও বেশি মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ইরান। তাদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত নাম ফেরেয়দুন আব্বাসি, যিনি ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা এইওআই-এর সাবেক প্রধান ছিলেন।
এছাড়া, নিহত হয়েছেন মোহাম্মদ মাহদি তেহরানচি। তিনি ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং তেহরানের ইসলামিক আজাদ ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এই তালিকায় আরও আছেন আব্দোলহামিদ মিনৌচেহর, আহমাদ রেজা জোলফাঘারি ও আমিরহোসেইন ফেকহি। এদের প্রত্যেকেই তেহরানের শহীদ বেহেশতি ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ছিলেন। ষষ্ঠ জনের পুরো নাম এখনও প্রকাশ করা হয়নি। শুধু তার পদবী ‘মোতাল্লেবিজাদেহ’ উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, হামলার জবাবে ইরানও ১০০টিরও বেশি ড্রোন ইসরায়েলের ওপর নিক্ষেপ করেছে। ইরানের ছোঁড়া সব ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে, দাবি ইসরায়েলের।
দেশটির হোম ফ্রন্ট কমান্ড, যারা এর আগে আশ্রয়কেন্দ্র সংক্রান্ত সতর্কতা জারি করেছিলো, তারা জনগণকে জানিয়েছে যে এখন আর কারোর আশ্রয়কেন্দ্রের কাছে অবস্থান করার প্রয়োজন নেই। তবে একইসঙ্গে সকলকে সতর্ক ও সজাগ থাকার কথাও বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয় বলে এক বিবৃতিতে দাবি করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও স্পষ্ট করেছেন, ইসরাইলের এই সামরিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই। ইসরাইলি হামলার পর ইরান রাজধানী তেহরানে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে। তীব্র উত্তেজনার প্রেক্ষিতে জেরুজালেমে সাইরেন বাজতে শুরু করে এবং দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
এছাড়াও তেল আবিবমুখী ফ্লাইটগুলোকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্লাইট ট্র্যাকিং সংস্থা ‘ফ্লাইট রাডার’। এই ঘটনার পর পুরো মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধ পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া:
ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলের বড় ধরনের বিমান হামলার পর বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এই অভিযানে ইরান দাবি করেছে, তাদের একাধিক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি আবাসিক এলাকায়ও হামলা চালানো হয়েছে, যাতে নারী ও শিশুসহ ৩ শতাধিক আহত হয়েছেন।
এই ঘটনায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরায়েলকে ‘কঠোর শাস্তি’র হুমকি দিয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, প্রয়োজন হলে অভিযান আরও চলবে।
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তা নিচে তুলে ধরা হলো:
জাতিসংঘ : জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে কোনো ধরনের সামরিক উত্তেজনা তিনি সমর্থন করেন না। বিশেষভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ইসরায়েল আত্মরক্ষার স্বার্থে একতরফাভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এই হামলায় জড়িত নয়। তবে তিনি ইরানকে হুঁশিয়ার করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনা বা স্বার্থকে লক্ষ্যবস্তু বানালে ফল ভালো হবে না।
যুক্তরাজ্য : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা এখন অগ্রাধিকার। উত্তেজনা প্রশমন জরুরি।
সৌদি আরব: সৌদি আরব এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এই বর্বর আক্রমণ ইরানের সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। তারা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
চীন : চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা এই ঘটনার ‘গভীর পরিণতি’ নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং পরিস্থিতির ওপর নিবিড়ভাবে নজর রাখছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে উত্তেজনা বৃদ্ধির পথ পরিহার করতে হবে। চীন জানিয়েছে, তারা সংকট নিরসনে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।
তুরস্ক: তুরস্ক ইসরায়েলের হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ও কূটনৈতিক পথকে অস্বীকার’ বলে অভিহিত করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এ ধরনের হামলা প্রমাণ করে, ইসরায়েল শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় না।
ওমান : পারমাণবিক আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী দেশ ওমান এই হামলাকে ‘বিপজ্জনক ও বেপরোয়া উত্তেজনা’ বলে অভিহিত করেছে। ‘ইসরায়েল অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলছে,’ বলা হয়েছে ওমানের বিবৃতিতে।
ফ্রান্স : ফ্রান্স সবপক্ষকে ‘উত্তেজনা না বাড়ানোর আহ্বান’ জানিয়েছে, যদিও ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করেছে। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
কাতার : কাতার হামলাকে ‘ভয়াবহ উসকানি’ এবং আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ করতে হবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত: আমিরাতও হামলার নিন্দা জানিয়ে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। ‘কূটনৈতিক পথের চেয়ে সামরিক পথ বিপজ্জনক,’ বলা হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে।
অস্ট্রেলিয়া : পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং বলেন, এই সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অস্থির করে তুলছে। আমরা সংলাপ ও কূটনৈতিক সমাধানকে উৎসাহ দিচ্ছি।
নিউজিল্যান্ড: প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাকসন ইসরায়েলের হামলাকে ‘অপ্রত্যাশিত ও অপ্রয়োজনীয় উসকানি’ বলেছেন।
জাপান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়াইয়া বলেন, আলোচনার সময় এমন সামরিক হামলা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলবে।
প্রতিশোধের আগুনে পুড়ছে ইরান:
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত ভূ-রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন মুখোমুখি যুদ্ধে ইসরায়েল ও ইরান। ইরানের রাজধানী তেহরানে শুক্রবার ভোররাতে ইসরায়েলের ব্যাপক আক্রমণের পর এই সংঘাত আর সীমিত পর্যায়ে নেই বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। সিএনএনের নিরাপত্তা বিশ্লেষক বেথ স্যানার বলেন, ‘ইসরায়েল এখন ইরানের সঙ্গে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।’
আর এ যুদ্ধের জবাবে ইরান যে হুমকি দিয়েছে, সেটি শুধু হুমকিতেই সীমাবদ্ধ নয়। এবার তা বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
ছয়শ’র বেশি মিসাইল হামলার সম্ভাবনা: ইসরায়েলের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান যে প্রতিশোধ নেবে, তার ইঙ্গিত বহু আগেই মিলেছিল। ইরান জানিয়েছিল, তারা একসাথে ছয়শ’রও বেশি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোঁড়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে। এ তথ্য সামনে আসার পর থেকেই নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছিলেন, ইসরায়েল যদি উত্তেজনা বাড়ায়, তবে তার পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) এরই মধ্যে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’ নামের একটি বৃহৎ সামরিক প্রতিশোধ অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে। এই অপারেশনের মূল লক্ষ্য হবে ইসরায়েলের বিমানঘাঁটি, রাডার ব্যবস্থা, এবং ভূগর্ভস্থ সামরিক ঘাঁটি ধ্বংস করা। বিভিন্ন সামরিক সূত্র বলছে, এই অপারেশন তিন ধাপে বাস্তবায়ন হতে পারে-
১. প্রথম ধাপে বিমানঘাঁটি ও রাডার ব্যবস্থার ধ্বংস, ২. দ্বিতীয় ধাপে হিজবুল্লাহ ও হুতি বিদ্রোহীদের মাধ্যমে সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ৩. তৃতীয় ও চূড়ান্ত ধাপে ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি থেকে হাইপারসনিক মিসাইল হামলা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরণের সমন্বিত আক্রমণ হলে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কতটা সক্ষমতা রয়েছে তা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষত, ইরানের বর্তমান সামরিক শক্তি আগের তুলনায় ১০ গুণ বেশি, যা এই যুদ্ধকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে।
ইসরায়েলের হামলা : শুক্রবারের ইসরায়েলি হামলা ছিল নিছক একটি সামরিক অভিযান নয়, বরং একটি বড় যুদ্ধের সূচনা। তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানা এবং সামরিক কমান্ড ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালিয়ে ইসরায়েল তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছে। এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ জেনারেল হোসেইন সালামি এবং সর্বোচ্চ সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি।
এমন হত্যাকাণ্ডকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা যাবে না- এটি সুপরিকল্পিত, প্রতীকি এবং আক্রমণাত্মক। সিএনএনের বিশ্লেষক বেথ স্যানার বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরণের হামলা হতো এবং তাদের জেনারেল স্টাফ প্রধান নিহত হতেন, তবে আমেরিকার প্রতিক্রিয়া কেমন হতো তা ভাবলেই বোঝা যায়, ইরানের ক্ষোভ কতটা যুক্তিসঙ্গত।’
অস্তিত্ব সংকটে ইরান : ইসরায়েলের হামলার পর ইরান এখন নিজেকে অস্তিত্বের সংকটে দেখতে শুরু করেছে। ফলে তাদের প্রতিশোধ হবে শুধু প্রতিক্রিয়ামূলক নয়, বরং অস্তিত্ব রক্ষার একটি বাধ্যতামূলক পদক্ষেপ। আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ঘোষণা দিয়েছেন, ‘ইসরায়েলকে তিক্ত ও বেদনাদায়ক পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান এবার আগের চেয়ে বড়, সুপরিকল্পিত ও বিধ্বংসী প্রতিক্রিয়া দেখাবে। ইতোমধ্যেই তারা ইসরায়েল লক্ষ্য করে ১০০টির মতো ড্রোন ছুড়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। যদিও অনেক ড্রোন ভূপাতিত হয়েছে, তবে এটিই শেষ নয়।
আঞ্চলিক যুদ্ধের শঙ্কা ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা : এই উত্তেজনা শুধু ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, ইরানের শক্তির মধ্যে রয়েছে হিজবুল্লাহ, হুতি, ও অন্যান্য মিলিশিয়া- এরাই এখন প্রস্তুত আছে যৌথ প্রতিক্রিয়ার জন্য। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র, ইতোমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্য থেকে জরুরি নয় এমন কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আর তেল আবিবের এই সামরিক অভিযান পরিচালনায় ব্যবহৃত বেশিরভাগ বিমানই ছিল মার্কিন তৈরি।
অর্থাৎ, পরোক্ষভাবে হলেও যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। বিশ্লেষক রিচার্ড লে’বেরন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র না চাইলেও, এই সংঘাতে জড়াতে তাদের বাধ্য হতে হবে।’