ওসমানীনগরে যুবদল নেতার নেতৃত্বে প্রবাসীর বাড়িতে হামলা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুন ২০২৫, ১০:০৩:৪৩ অপরাহ্ন
ওসমানীনগর প্রতিনিধি: ওসমানীনগরে উপজেলা যুবদল নেতা আহবাব হোসেন ওরফে আহবাবুল (৪০) এর নেতৃত্বে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের খাদিমপুর গ্রামে যুক্তরাজ্য প্রবাসি গোলাম রব্বানী সোহেলের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এ ঘটনায় বাড়ির মালিক ডলি বেগম (৫৩) বাদী হয়ে শুক্রবার ওসমানীনগর থানায় ২১ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ৪০/৪৫জন অজ্ঞাত লোককে আসামী করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অভিযানে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে খাদিমপুর গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য জিতু মিয়া (৫২), শানুদ আলী (৫৮), জিতু মিয়া (৩০) ও আখলাক মিয়া (৪৭) নামের ৪জনকে ও ১৫১ ধারায় ১১জনসহ মোট ১৫জনকে আটক করে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কোর্টে চালান করে।
জানা গেছে, উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের খাদিমপুর গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা যুবদলের ১ম যুগ্ম-আহ্বায়ক আহবাবুলের পিতা চেরাগ আলীসহ কয়েকজনের একটি জুয়া খেলার ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ‘খাদিমপুর ভিলেজ গ্রুপ’ নামক হোয়াটসআপ গ্রুপে ভাইরাল হয়। গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে আহবাবুল একই গ্রামের বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী গোলাম রব্বানী সোহেল ভিডিওটি ভাইরাল করছেন বলে ক্ষিপ্ত হয়ে খাদিমপুর পূর্বপাড়া ও পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের মাইকে পৃথক ঘোষণা দিয়ে সোহেলের বাড়িতে ৪০/৪৫জনের একটি গ্রুপ নিয়ে হামলা চালান। এসময় হামলাকারীরা বাড়ির গেটের তালা ভেঙ্গে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে আসবাবপত্র, মিশুক রিকশা, বাড়ির থাই গ্লাস ভাংচুর, স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন, নগদ টাকাসহ প্রায় সোয়া ১৩ লক্ষ টাকার মালামাল লুট ও ভাংচুর করা হয়। হামলা চলাকালে ডলি বেগম জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল করলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তখন হামলাকারীরা আবার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজনকে জড়ো করে পুলিশের উপর চড়াও হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এক পর্যায়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সিলেট থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও ওসমানীনগর সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এসময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর লোকজন ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৪জন ও প্রবাসি সোহেলের বাড়িতে থাকা বিভিন্ন এলাকার ১১জন নির্মাণ শ্রমিককে আটক করে থানায় নিয়ে এসে গ্রেফতার দেখিয়ে কোর্টে চালান করে।
যুবদল নেতা আহবাব হোসেন আহবাবুল বলেন, আমার নেতৃত্বে কোন হামলা হয়নি। গ্রামবাসির নেতৃত্বে গ্রামের দু’টি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে হামলা করা হয়েছে। আমিও গ্রামবাসির সাথে ছিলাম। আমার বাবা জুয়া খেলেননি, এটা কয়েকজন মিলে একটি কল খেলা ছিল। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ভিডিও করে এটি ভাইরাল করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্য প্রবাসি গোলাম রব্বানী সোহেল বলেন, আহবাবুলের পিতা চেরাগ আলীসহ কয়েকজনের একটি জুয়ার ভিডিও কে বা কারা ভাইরাল করলে যুবদল নেতা আহবাব হোসেন আহবাবুলের নেতৃত্বে আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুট করা হয়েছে। আমার ভাইয়ের স্ত্রী বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। আমি প্রশাসনসহ সকলের কাছে এই সন্ত্রাসী হামলা, ভাংচুর ও লুটের বিচার চাই।
ওসমানীনগর উপজেলা যুবদলের সভাপতি ফজল আহমদ জনি বলেন, খাদিমপুরে প্রবাসির বাড়ি ভাংচুরের সাথে বিএনপি যুবদল জড়িত নয়। এটা দলীয় নয়, ব্যক্তিগত কাজ। আমাদের দলে কোন চাঁদাবাজ দখলদারের স্থান নেই।
ওসমানীনগর থানার ওসি মো. মোনায়েম মিয়া বলেন, খাদিমপুরে একটি বাড়িতে হামলা হলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। আইন শৃংখলা রক্ষা ও আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।