একইসাথে করোনা ও ডেঙ্গুর প্রকোপ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুন ২০২৫, ১১:৪৯:১৮ অপরাহ্ন
সিলেটে নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ২ জন
স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে কীট ও টিকার সংকট
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জরুরী নির্দেশনা
জালালাবাদ রিপোর্ট : করোনাভাইরাস এবং ডেঙ্গু, বাংলাদেশে এখন এই দুই রোগেরই প্রকোপ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, ডেঙ্গু আক্রান্তের হার ক্রমশ বেড়েই চলেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য। এমনকি ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। তবে ডেঙ্গুর তুলনায় করোনা সংক্রমণের হার এখনও কিছুটা কম।
বাংলাদেশে বর্ষা এলে প্রতি বছরই ডেঙ্গু সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। কিন্তু চলতি বছর একই সময়ে করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটায় বিষয়টি উদ্বেগের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কারণ বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর থেকে মানুষ করোনা পরীক্ষা করাতে তৎপর হয়ে উঠেছে।
কিন্তু দেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে করোনা পরীক্ষার কিট ও টিকার সংকটের কথা শোনা যাচ্ছে।
এছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, প্লাটিলেট কিট, জনবল ও স্থান সংকটের কারণে হাসপাতালগুলো ডেঙ্গুর চিকিৎসা সেবা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই দুই সংকট মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার ।
বাড়ছে করোনার প্রকোপ, সিলেটেও হানা :
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ঢাকায় ৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৭ জন ও চট্টগ্রামে ৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে।
এদিকে, সিলেটে এতদিন তেমন কোনো প্রকোপ দেখা যায়নি, তবে এবার সিলেটে নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত দু’জন শনাক্ত হয়েছেন।
আক্রান্ত দুইজনই বর্তমানে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, যাকে হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্তদের একজন নারী ও একজন পুরুষ। পুরুষটির বয়স ৮০ বছর এবং তার অবস্থাই সবচেয়ে গুরুতর। জানা গেছে, একজন শুক্রবার এবং অন্যজন আজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
সিলেট বিভাগের স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. আনিসুর রহমান জানান, আক্রান্তদের একজনের বাড়ি সুনামগঞ্জে, আর অন্যজন সিলেট মহানগরীর বাসিন্দা। তবে সিলেটে করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায়) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে সরকার। রোববার (১৫ জুন) থেকে পজিটিভ রোগীদের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে আগামী একমাস ফলোআপ করা হবে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্টগুলো সম্পর্কে অবহিত হওয়া যাবে।
এদিকে করোনার সংক্রমণ বাড়লেও মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না। নতুন করে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে জনসাধারণকে ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পাশাপাশি মাস্ক পরার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বেশি বরিশালে ও ঢাকায় :
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ২৮ জন। তবে এই গত প্রায় সাড়ে পাঁচ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু, দু’দিক থেকেই শীর্ষে পুরুষরা।
এদিকে, সরকারি হিসেবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল বিভাগে এখন পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে দুই হাজার ৬৮৪ জন।
এছাড়া এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে চলতি মাসে। গত মে মাসে মোট এক হাজার ৭৭৩ জন আক্রান্ত হয়েছিলো। কিন্তু জুন মাসের প্রথম ১৩ দিনে দেশব্যাপী এক হাজার ২২৫ জন ইতোমধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
পরিস্থিতি সামলাতে পারবে সরকার?
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক মো. ফরহাদ হোসেন বলেছেন, করোনার কিট ও টিকার ব্যবস্থা ছিল। তবে ইতোমধ্যে এগুলো অ্যারেঞ্জ করা হয়েছে, বাইরে থেকে এগুলো আরও বেশি করে আনার বা কেনার ব্যবস্থা চলছে।
হাসপাতালগুলো করোনা পরস্থিতি সামলাতে প্রস্তুত উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাঝখানে দুই বছর করোনা না থাকাতে আমাদের কার্যক্রম কিছুটা স্তিমিত ছিল। এখন পূর্ণ দমে চালু হচ্ছে।
টিকার ব্যাপারে গত ১১ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো: আবু জাফর বলেছেন, ১৭ লাখ করোনা টিকা বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে আগেই। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে খুব শীঘ্রই করোনা শনাক্তকরণ কিট পৌঁছানো হবে।
জনস্বাস্থ্য ও মহামারী বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন মনে করেন, ২০২০ সালে যখন দেশব্যাপী ব্যাপক হারে করোনা সংক্রমণ শুরু হলো, তখন যারা কাজ করেছেন, এখনও তারাই আছেন।
অল্প কিছু মানুষ হয়তো অবসরে চলে গেছেন। কিন্তু নতুনদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত। তাই করোনা সামলাতে চিকিৎসকদের কোনও সমস্যা হওয়ার কথা না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জরুরি নির্দেশনা :
ডেঙ্গু ও করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোতে একগুচ্ছ জরুরি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে সারাদেশে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা কাজে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে সম্পৃক্ত করতে বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত আদেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়েছে।
রোববার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠি ২টি পাঠানো হলো। এই চিঠির নির্দেশনা মোতাবেক এ অধিদপ্তরের আওতাধীন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উল্লিখিত নির্দেশনাগুলো প্রতিপালনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
নির্দেশনা ১ এ বলা হয়েছে, সারাদেশে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা কাজে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
নির্দেশনা ২- এ বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দেশনাগুলো হলো: বারবার প্রয়োজনমতো সাবান দিয়ে হাত ধোয়া (অন্তত: ২০ সেকেন্ড), জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং বাইরে বের হলে মুখে মাস্ক পরা, আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা, হাঁচি-কাশির সময় বাহ-টিস্যু-কাপড় দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখা।