হোঁচট খেলো ঐকমত্যের সংলাপ, দ্বিতীয় দফায় অংশ নেয়নি জামায়াত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুন ২০২৫, ৩:০৯:৩১ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের সলাপ শুরু হলো। এই সংলাপেই ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত হবার কথা। কিন্তু শুরুতেই যেন হোঁচট খেল ঐকমত্যের এই সংলাপ। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি জামায়াতে ইসলামী এই বৈঠকে যোগ দেয়নি।
দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের অসমাপ্ত আলোচনা শুরু হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একটি সূত্র বলেছে, বৈঠকে জামায়াত থাকবে না-এ বিষয়ে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কারণ হিসেবে দলটি বলেছে, প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে জামায়াতকে ‘ইগনোর’ করা হয়েছে বলে মনে করে দলটি। এর প্রতিবাদ হিসেবে তারা বৈঠকে যোগ দেয়নি।
অবশ্য কমিশনের পক্ষ থেকে দুই ঘণ্টা পরে হলেও জামায়াতকে বৈঠকে যোগ দিতে অনুরোধ করা হলেও দলটি যোগ দেয়নি ।
জামায়াতের একটি সূত্র গণমাধ্যমকে জানায়, দলের পক্ষ থেকে লন্ডনে ইউনুস ও তারেকের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠককে স্বাগত জানানো হলেও বিদেশ থেকে যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণায় তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এটি অবমাননাকর ও উপেক্ষামূলক বলেও মনে করে দলটি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন দলটির নায়েবে আমীর ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ঈদের আগের (৩ জুন) বৈঠকে তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আজাদ।
জামায়াতের অনুপস্থিতি নিশ্চিত করে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, আমরা আজকের সংলাপে অংশ নিইনি। আগামীকাল (আজ) অংশ নেবো কি না এবং না যাওয়ার কারণ কী-এ বিষয়ে দলের নায়েবে আমীর ডা. আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন।
কমিশনের পক্ষ থেকে ৩০ দল ও জোটকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে জামায়াত ছাড়া বিএনপি, এনসিপিসহ ২৯ দল ও জোটের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনয়ন, নারী প্রতিনিধিত্বসহ বেশ কিছু বিষয় আলোচনা হয়েছে। এছাড়া দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ (নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ), প্রধান বিচারপতি নিয়োগপ্রক্রিয়াসহ বেশ কিছু বিষয় আলোচনা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত অংশ না নিলেও গতকালের সংলাপে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে উপস্থিত সবাই একমত হয়েছেন। আস্থা ভোট ও অর্থ বিল-এই দুই বিষয় বাদে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন। এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।
আরও কয়েকটি দল তাদের পক্ষ থেকে সংবিধান সংশোধনী বিলের সঙ্গে নিজ নিজ অবস্থান যুক্ত করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকেও লিখিত প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় যেমন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সংসদ সদস্যরা স্বাধীন থাকবেন না। আস্থা ভোট ও অর্থ বিল জাতীয় সনদে উল্লেখ থাকবে এবং এতে সবাই স্বাক্ষর করবেন।
সংসদের বিভিন্ন স্থায়ী কমিটির নেতৃত্বে বিরোধীদলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়েও অগ্রগতি হয়েছে সংলাপে। পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটি, ইস্টিমেশন কমিটি এবং পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী কমিটিগুলোতে সভাপতির পদ আসনের ভিত্তিতে বিরোধী দলপ্রাপ্ত হবে। এ নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে। নারীদের জন্য সংরক্ষিত ১০০ আসনের প্রস্তাব নিয়েও মত হয়েছে। তবে এই আসনগুলোর নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপের সূচনা বক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, আগামী জুলাই মাসের মধ্যে জুলাই সনদ তৈরি করতে পারবেন তারা। তিনি বলেছেন, জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন সংকল্পবদ্ধ যে, আমরা জুলাই মাসের মধ্যে জাতীয় সনদ তৈরি করতে পারব।
আলী রীয়াজ বলেন, আমরা আশা করছি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে, আমাদের পক্ষে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। আমরা চেষ্টা করছি সমস্ত বিষয়গুলোতে যাতে আমরা সকলে একমত না হলেও সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন বিষয়ে মতে আসতে পারি।
আলী রীয়াজ বলেন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। কিন্তু এটাও বলব নীতিগতভাবে কিছু দল আপত্তি জানিয়েছে। কিন্তু এটা অধিকাংশই স্বীকার করেছেন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। অধিকাংশই ১০০ আসনের উচ্চকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন কিছু কিছু বিষয় অগ্রসর হচ্ছে। সবদিক বিবেচনায় আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি হচ্ছে।
সংলাপের বিরতিতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জামায়াত কেন অংশ নেয়নি-এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশন মন্তব্য করবে, আমরা না।
এদিকে, রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, জামায়াতের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) আলোচনায় আসবে বলে আশা করছি। শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জামায়াতের কোনো বৈঠক হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে শফিক জানান, এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তিনি আরও জানান, জুলাই মাসেই ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশ হবে।
বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সদস্য আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান প্রমুখ।
১৭, ১৮ ও ১৯ জুন-এই তিন দিন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার কথা রয়েছে কমিশনের।