গণপরিবহন কি অধরাই থাকবে?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুন ২০২৫, ৪:১৯:৪৩ অপরাহ্ন
তামিম মজিদ :
পর্যটন নগরী সিলেট। ২৬.৫০ বর্গোকিলোমিটার এলাকা নিয়ে সিলেট পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয়েছে ২০০২ সালে। ২০২১ সালে বর্ধিত হয়ে নগরীর আয়তন ৭৯.৫০ বর্গোকিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। নগরীর আয়তন কয়েকগুণ বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে জনসংখ্যাও। দশ লাখ জনসংখ্যার এই নগরে কার্যকর গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।
তথ্য বলছে, ২০০৭ সালে নগরীতে প্রথম চালু হয়েছিল গণপরিবহন। চালু হওয়ার কিছুদিন পরই বন্ধ হয়ে যায় টাউন বাস সার্ভিস নামের এই গণপরিবহন। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে ৪৫টি মিনিবাস নিয়ে নগর এক্সপ্রেস চালু হয়েছিল, সেটাও ১১টিতে এসে পৌছেছে। গণপরিবহন চালুর দুটি উদ্যোগই টেকসই হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, সিলেটে টেকসই গণপরিবহন বাস্তবায়ন কত দূর। নগরবাসী বলছেন, সিলেটে টেকসই গণপরিবহন কি অধরাই থাকবে?
নাগরিকরা বলছেন, বড় শহরে যে নাগরিক সুবিধা প্রয়োজন, তার সিংহভাগও নেই এই শহরে। এই নগরে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যায় পড়তে হয়, তা হচ্ছে যাতায়াত। এখানে নেই গণপরিবহন। ফলে রিকশা ও সিএনজিই একমাত্র ভরসা। তারা বলছেন, সিলেট নগরীতে গণপরিবহনের টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা দরকার। তাহলেই কেবল ভোগান্তি কমবে সাধারণ মানুষের, বাসযোগ্য হবে আগামীর সিলেট।
সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, সিলেটের সবগুলো সড়ক সরু। তাই এখানে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের মতো গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করা কঠিন। গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করতে হলে নগরের সবগুলো সড়ক বড় করতে হবে। কিন্তু যেটা খুবই কঠিন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের শহরগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। যেখানে আগে ভবন নির্মাণ করা হয়, তারপর সড়ক করা হয়। অথচ উন্নত বিশে^ প্রথমে সড়ক তৈরি করা হয়, তারপর ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে তার ঠিক উল্টোটা করা হয়।
তথ্য বলছে, সিলেট শহরের গণপরিবহন সমস্যা দূর করতে ২০০৭ সালে প্রথম টাউন বাস সার্ভিস চালু করা হয়। বন্দর-টুকেরবাজার, বন্দর-সালুটিকর, বন্দর-হেতিমগঞ্জ ও বন্দর বটেশ^র রুটে চালু হয় এই টাউন বাস সার্ভিস। প্রথম দিকে কিছুদিন ভালোভাবে চললেও কিছুদিন পরই মুখ থুবড়ে পড়ে এই বাস সার্ভিস।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত সিএনজি চালকদের দৌরাত্মে ২০০৯ সালের দিবে বন্ধ হয়ে যায় এই টাউন বাস সার্ভিস। সিলেট নগরীতে কার্যকর গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রধান বাঁধা সিএনজি চালকরা। এই সিএনজি চালকদের কারণে সিলেট নগরীতে গণপরিবহন সার্ভিস টেকসই হয় না।
জানা গেছে, নগরের গণপরিবহন সমস্যা দূর করতে নগরবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে ৪৫টি মিনিবাস নিয়ে শহর এবং শহরতলীর ৪টি রুটে নগর এক্সপ্রেস চালু হয়। পুনরায় বন্দর-টুকেরবাজার, বন্দর-সালুটিকর, বন্দর-হেতিমগঞ্জ ও বন্দর বটেশ^র রুটে চালু হয় এই নগর বাস সার্ভিস। মাত্র ৫ বছরের মাথায় এই বাসের সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ১১টিতে। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। এই ১১টি মিনিবাসই ১০ লাখ নগরবাসীর গণপরিবহন। খুড়িঁয়ে খুড়িঁয়ে চলছে এই মিনিবাসগুলো।
জানা গেছে, গত ২৩ বছরে নগরীর আয়তন ও জনসংখ্যা বিবেচনায় বাড়েনি গণপরিবহনের সংখ্যা, যার প্রভাব পড়ছে নগরজীবনে। অপরিকল্পিত পরিবহন ব্যবস্থার কারণে অটোরিকশা বা রিকশার ওপর নির্ভরশীলতায় গুনতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া। এমনকি অটোরিকশার দৌরাত্ম্যে নগরীর যানজট দিন দিন তীব্র হচ্ছে।
নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকার বাসিন্দা মওলানা আমিনুল ইসলাম খান বলেন, গণপরিবহন না থাকায় যাতায়াত খরচ বেশি হয়। সিএনজিসহ ছোট ছোট যেসব পরিবহন আছে, সেগুলো সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করছে। এসব যানবাহনে ভাড়াও বেশি। নগরীর ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক মো. আবু তাহির বলেন, সিটি মানে সিটি বাস সার্ভিস চালু থাকবে। এখানে যদি পরিকল্পিত রোড ও বাসের রুট নির্ধারণ থাকতো তাহলে এই সমস্যা হতো না। পর্যটন নগরী সিলেটের এ সমস্যা সমাধানে দেশের অন্যান্য বড় শহরের মত সার্কুলার রোডের সীমানা নির্ধারণ করে দ্বিতল ও মিনিবাস চালুর পরামর্শ দেন এই স্কুল শিক্ষক।
নগর বিশেষজ্ঞ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোশতাক আহমদ জালালাবাদকে বলেন, আমাদের দেশের শহরগুলো পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি। বিশেষ করে সিলেটের সড়কের যে অবস্থা, সেখানে গণপরিবহন চালু করার উপযোগী না। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য এক সংস্থার সঙ্গে অন্য সমন্বয় করা জরুরি। যেটা আমাদের দেশে অনুপস্থিত।
সিলেট সিটি করর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাই রাফিন সরকার জালালাবাদকে বলেন, সিলেটে গণপরিবহনের অনুপস্থিতি অনুভব করি। নগরবাসীর সুবিধার্থে গণপরিবহন প্রয়োজন। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশেন যদি গণপরিহবন চালু করে, সেটা কখনও টেকসই হবে না। সিটি কর্পোরেশন যেটা করতে পারে, প্রাইভেট সেক্টর থেকে কোম্পানি করে গণপরিবহন চালুর উদ্যোগ নিলে সিটি কর্পোরেশন সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে পারে। ঢাকার মতো কোম্পানি করে প্রাইভেট সেক্টর আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।