রাজস্ব খাতে নেয়া ১৫ বিলকে মৎস্য অভয়াশ্রমে পুনর্বহালের দাবি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুন ২০২৫, ৭:১৩:০৪ অপরাহ্ন
বড়লেখা প্রতিনিধি:
মৎস্য অভয়াশ্রম থেকে রাজস্ব খাতে নেয়া হাকালুকি হাওরের ১৫টি বিলকে পুনরায় অভয়াশ্রম ঘোষণার দাবি হাওর তীরের মানুষের। শুধু তাই নয়, হাকালুকি হাওরকে বিশেষ উন্নয়ন পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত করারও দাবি দীর্ঘদিনের। তাছাড়া বিগত ১৫ বছর যারা হাওরে লুটপাট ও পরিবেশের ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে বলে জানিয়েছে ‘হাওর বাঁচাও কৃষক বাঁচাও’ ও ‘হাকালুকি হাওর তীরের সচেতন নাগরিক সমাজ’।
মৌলভীবাজার জেলায় বর্তমানে মোট স্থায়ী অভয়াশ্রম রয়েছে ৯টি। এর মধ্যে বড়লেখা উপজেলায় ৫টি, শ্রীমঙ্গলে ১টি, কুলাউড়ায় ১টি ও জুড়ীতে ২টির অবস্থান। তবে এ সংখ্যা আরো বাড়ানো দরকার।
এদিকে, হাকালুকির জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও হাওর তীরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য অফিস হাওরের আরও ১১টি বিলকে অভয়াশ্রমের আওতায় আনার প্রস্তাবনা করেছে। এ প্রস্তাবনাকে স্বাগত জানিয়েছে পরিবেশবাদী দু’টি সংগঠন। তাদের মতে, হাওর তীরের বাকি উপজেলাগুলো অভয়াশ্রমের ক্ষেত্রে এগিয়ে এলে হাওরের ইকোসিষ্টেম এবং মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হবে।
কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য অফিস সুত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বর মাসে হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া উপজেলা ইসিএ কমিটির সভায় হাকালুকি হাওরের উন্নয়ন এবং হাওর তীরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক আলোচনা হয়। ১৯৯৯ সালে হাকালুকি হাওরকে ইকোলজিকেল ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা হাওর উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও প্রকৃত অর্থে হাওরের কিংবা হাওর তীরের মানুষের কোন উন্নয়ন হয়নি। সকল অর্থই হাওরের জলে ভেসে গেছে।
হাকালুকি হাওরের ছোটবড় ২৩৮ বিলের মধ্যে ২২টি বিলকে অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বয়ং পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর ডিও লেটারে অভয়াশ্রম বাতিল করে ১৫ বিলকে রাজস্ব খাতে হস্তান্তর করা হয়। যে ৭টি বিল অভয়াশ্রম হিসেবে ছিল সেগুলোতে সরকার দলীয় লোকজন লুটপাট চালিয়েছে। হাওর উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বাদ দেয়া হয় হাকালুকি হাওরকে। বিগত ১৫ বছরে উন্নয়ন নয় শুধু লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে হাওরে। ধ্বংস করা হয়েছে হাওরের পরিবেশ। সরকার পরিবর্তন হলেও লুটেরাদের কোন পরিবর্তন হয়নি। ইজারার নামে হাওরের বিলগুলোতে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে মাছ শিকারের নামে চলছে মাছ লুট।
কুলাউড়া মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে নতুন করে ১১টি বিলকে অভয়াশ্রমের আওতায় আনার প্রস্তাব করেন সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু মাসুদ। প্রস্তাবিত বিলগুলো হলো হাকালুকি হাওরের কুলাউড়া উপজেলা অংশের মেদি বিল, পানি খাওয়া বিল, কছমা বিল, সিংকুড়ি বিল, শ্রীকষ্টি বিল, শশাবিল, মহিষমারা বিল, গৌড়কুড়ি বিল, হাওয়া বর্নী ফুট বিল, চাপড়া বিল ও ফাটা চাপড়া বিল।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু মাসুদ ও বড়লেখা সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মিসবাহ উদ্দিন আফজল জানান, হাকালুকি হাওরকে রক্ষার এখনই মোক্ষম সময়। হাওর তীরের বাকি ৪টি উপজেলার মৎস্য বিভাগ এগিয়ে এলে হাওরে যদি অর্ধশত অভয়াশ্রম বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে হাকালুকি হাওর থেকে মাছ বিদেশে রফতানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে আকারে ছোট এবং যোগাযোগ সমৃদ্ধ জায়গার বিলকে অভয়াশ্রম করা হলে দেখভাল ভালোভাবে করা যাবে বলে তারা মতামত ব্যক্ত করেন। তবে প্রস্তাবিত বিলগুলোকে ইজারার আওতায় নিতে গেলে কিছুটা উন্নয়ন ব্যয় করতে হবে। যেমন বিলগুলোকে খনন করে বাড়াতে হবে বিলের গভীরতা। এসব বিলে যাতে বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে কেউ জাল দিয়ে মাছ শিকার করতে না পারে তারজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এসব প্রস্তাবনাও তারা করেছেন।
হাকালুকি হাওরে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা প্রতিনিধি তৌহিদুর রহমান জানান, অভয়াশ্রম বাড়ালে শুধু মাছের উৎপাদনই বাড়বে না স্বয়ংক্রিয়ভাবে হাওরের ইকো সিষ্টেম রক্ষা পাবে। অতিথি পাখির আনাগোনা বাড়বে। সর্বোপরি হাওরের উপর নির্ভরশীল মানুষের জন্য বিকল্প জীবিকায়নের চিন্তা করা লাগবে না। তাদের জীবনমানেরও উন্নয়ন হবে।
‘হাকালুকি হাওর তীরের সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও হাওর তীরের ভুকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, বিগত ১৫ বছর সাবেক পরিবেশ ও বন মন্ত্রীর লোকজন হাওরে হরিলুট চালিয়েছে। এদের নামে এখনও বিল ইজারা রয়েছে। সেগুলো বাতিল করতে হবে। ডিও লেটারে রাজস্বখাতে নেয়া বিলগুলোকে ফের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।