হকারদের রুখবে কে?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুন ২০২৫, ৮:৩৯:০৮ অপরাহ্ন
সর্ষের মধ্যেই ভূত!
স্টাফ রিপোর্টার: একসময় সিলেটে কেবল ফুটপাতের কিছু অংশে হকাররা বসতেন। তবে বর্তমানে শুধু কিছু অংশ নয় নগরীর ব্যস্ততম ফুটপাতগুলোর পুরোটা এবং রাস্তার বড়ো অংশ মিলে তিন স্তরে বিশাল আয়োজনে পণ্যের পসরা সাজিয়ে প্রতিদিন বসছেন হকাররা। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা নগরীর বন্দরবাজার, কোর্ট পয়েন্ট ও জিন্দাবাজার এলাকার।
এজন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশনের লোকজন ও পুলিশকে ম্যানেজ করেই দোকান চালান বলে হকারদের কাছ থেকে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ম্যানেজকারী এই হকাররা বলেন পুলিশের চেয়ে মূলত সিসিকের লোকজনই এখানে মেইন। কয়েক স্তরে তাদের ম্যানেজ করতে হয়। এজন্য একপক্ষ প্রতিদিন, একপক্ষ মাঝেমধ্যে কেতাদুরস্ত পোশাকে এসে এবং অপর ভিআইপি পক্ষকে ঈদ, পূজা ইত্যাদি উৎসবে ম্যানেজের টাকা দিতে হয়। এরমধ্যে মাঝেমধ্যে কেতাদুরস্ত পোশাকে যারা আসেন তাদের সাথে দল বেঁধে লোকজন থাকে। তারা আসেন মূলত সিগনাল দিতে যেন হকাররা বুঝেন সময় ঘনিয়ে এসেছে। আসার আগে লোক মারফত খবর পাঠান যাতে হকাররা সর্তক থাকেন। ফলে তারা আসার আগেই সব জিনিসপত্র সেদিন হকাররা সরিয়ে রাখেন। কেবল আইওয়াশ হিসেবে চোখে পড়ার জন্য দৌড়ে দ্রুতবহন যোগ্য কিছু পণ্য নিয়ে তারা উপস্থিত থাকেন। দলবল নিয়ে সেই অফিসারদের দেখার সাথে সাথেই তা নিয়ে তারা দৌড় দেন। পুরো প্রক্রিয়াটাই থাকে সাজানো। তাই চাইলেই তাদের উচ্ছেদ করতে পারবে না যেকেউ সহজে। এ যেন সর্ষের মধ্যেই ভূতের বসবাস। ফলে হকার নিয়ে নানান কথা উঠলেও কার্যত দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। এতে সড়কে বাজারে লেগে থাকছে দীর্ঘ বিশৃঙ্খলা ও দুর্ভোগ।
সরেজমিন নগরীর বন্দরবাজার ও কোর্ট পয়েন্টে দেখা গেছে তিন স্তরে ফুটপাত ও রাস্তায় হকাররা প্রতিদিন বসছেন। এতে রাস্তা যেমন বন্ধ হয়ে গেছে তেমনি রুদ্ধ হয়েছে হাঁটার পথও। পাশেই নগর ভবনের পেছনে বিশাল মাঠে হকার শেড থাকলেও খাঁ খাঁ করছে তা। গুটিকয়েক হকার সেখানে দোকান সাজিয়ে বসেন। ফুটপাত ও রাস্তায় জুড়ে হকাররা যেদিকে বসেন সেদিকে রাস্তা বলে আর কোনোকিছু বুঝার মতো অবশিষ্ট থাকে না।
ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে তাদের এই ব্যবসা নির্বিঘ্ন করতে প্রতিদিন দোকান ভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। রাত নয়টার পর ক্রেচে ভর দিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে এসে দোকান থেকে সেই চাঁদার টাকা তুলে নেন কামাল নামের এক ব্যক্তি। তিনি যখন যে সরকার আসে তখন তাদের লোক বলে পরিচিতি পান, কামালই মূলত তিন স্তরে চাঁদার বিষয় দেখভাল করেন।
হকাররা বলেন আমাদের উচ্ছেদ করে কোনো লাভ নেই বরং রাখলেই লাভ, প্রতিদিন টাকা মিলে। নগরবাসীর কথা চিন্তা করে হকার তুলে দিলে নগরবাসী তো সিসিকের লোকদের টাকা দেবে না। তাই হকার থাকলে হকার-অফিসার সবার লাভ।