৩ দিনে ১৫৫ ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুন ২০২৫, ৯:১১:৪১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সরকারের দুই উপদেষ্টার নির্দেশের পরপরই অবৈধ পাথর উত্তোলন ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট মিল-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নড়েচড়ে বসেছে সিলেটের প্রশাসন। শুরু হয়েছে ধারাবাহিক অ্যাকশন। ৩ দিনের টানা অভিযানে সিলেটের ১৫৫টি অবৈধ স্টোন ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে জেলা প্রশাসন গঠিত টাস্কফোর্স।
এর মধ্যে একদিনে শুধু বুধবার (১৮ জুন) সিলেটে জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলার ৮৭টি ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে টাস্কফোর্স। এ নিয়ে গত ৩ দিনে জেলার ৪ উপজেলায় ১৫৫টি ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
এদিকে বুধবার (১৮ জুন) বেলা দেড়টায় সিলেট নগরীর বারুতখানা এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন সিলেটের পাথরসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। সংগঠনটির পক্ষ থেকে সিলেটের সবপাথর কোয়ারির ওপর থেকে ইজারার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। দাবি আদায়ে আগামী রোববার মানববন্ধন কর্মসূচি পালনেরও ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
এর আগে গত শনিবার (১৪ জুন) সকালে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) জাফলং পরিদর্শনে যান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। পরে দুই উপদেষ্টা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে জাফলংসহ সিলেটের কোনো পাথর কোয়ারি ভবিষ্যতে ইজারা দেওয়া হবে না বলে জানান। অন্যদিকে অবৈধ পাথরের ব্যবসা ঠেকাতে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দ্রুততার সঙ্গে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে থাকা ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দুই উপদেষ্টার নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই জেলায় কী পরিমাণ বৈধ ও অবৈধ ক্রাশার মেশিন আছে, তার তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এ তালিকা তৈরির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। পরবর্তীতে ঐ তালিকা ধরেই সব ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। যদিও গত সোমবার (১৬ জুন) থেকেই ক্রাশার মেশিনে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ শুরু করা হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বুধবার (১৮ জুন) দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত গোয়াইনঘাটের জাফলং এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিদ্যুৎ বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ, বিজিবি ও বন বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স অভিযান চালায়। অভিযানে ৬৭টি ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মিটার জব্দ করা হয়।
বুধবার অভিযান পরিচালনকালে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী বলেন, পরিবেশবিধ্বংসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। আজ বুধবার ৬৭টি ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি মিটার জব্দ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার এ রকম সব যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।
এদিকে কোম্পানীগঞ্জের পারুয়া এলাকায় বেলা ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালিত হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহারের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে ১৭টি যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ ছাড়া কানাইঘাট উপজেলায় টাস্কফোর্সের অভিযান চালিয়ে ৩ টি যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন নিশ্চিত করেছে।
এর আগে সোমবার (১৬ জুন) সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুলে ৩০টি ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৫টি এবং মঙ্গলবার (১৭ জুন) সদর উপজেলার ধোপাগুলে আরো ৩৩টি ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধ ও অবৈধ পাথরের ব্যবসা ঠেকাতে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। পাথর কোয়ারিগুলোয় অভিযানের পাশাপাশি ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধেও অভিযান চলছে। এটা অব্যাহত থাকবে।