পরিবর্তন আসছে নির্বাচনী প্রচারণায়
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুন ২০২৫, ১১:২১:৫০ অপরাহ্ন

বাদ পড়ছে পোস্টার, আসছে বিল বোর্ড
জালালাবাদ রিপোর্ট : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে বেশকিছু পরিবর্তন আসছে নির্বাচনী প্রচারণায়। প্রচারণা থেকে বাদ পড়ছে পোস্টারসহ বেশকিছু প্রচলিত পদ্ধতি, তবে নতুন করে যোগ হচ্ছে বিল বোর্ডের ব্যবহার। নির্বাচনী প্রচারণায় পরিবশেবান্ধব প্রচারণাকে অগ্রাধিকার ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০২৫ চূড়ান্তকরণ এবং সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সপ্তম সভায় এসব পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়।
ইসি সূত্র জানায়, নতুন বাংলাদেশে প্রচলিত নির্বাচন চায় না ইসি। নির্বাচনে পেশী শক্তির ব্যবহার বন্ধ ও প্রচারণাকে ঘিরে প্রার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রোধ ও সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে ইসি। জুলাই গণঅভ্যুথানের আকাঙ্খাকে ধারণ করে নির্বাচনী ব্যবস্থায় আসছে এই পরিবর্তন আসছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও প্রচারণা পদ্ধতির এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছে।
ইসি জানিয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। প্রচার-প্রচারণায় পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহারে জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন করে ভোটারদের কাছে ভোটার স্লিপ পরিচয় করানো হবে। টি-শার্ট, জ্যাকেট ইত্যাদির ব্যাপারে যে অতীতে বিধিনিষেধ ছিল, এ ব্যাপারে শিথিলতা আসছে। এছাড়া প্রচারণা থেকে উঠে যাচ্ছে পোস্টার, নতুন করে যোগ হচ্ছে বিল বোর্ডের ব্যবহার।
আচরণবিধির খসড়া চূড়ান্ত : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০২৫ এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮’-এর আলোকে এ খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। যেখানে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণ কেমন হবে, তা নিয়ে বেশ কিছু নতুন বিষয় সংযোজন করেছে কমিশন।
এর মধ্যে খসড়া বিধিমালায় ভোটের প্রচারণায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের অংশগ্রহণে বিধিনিষেধ, আচরণবিধি লঙ্ঘনে জরিমানা, প্রচারণায় পোস্টার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, শব্দদূষণ রোধে ব্যবস্থা, প্রার্থীদের এক প্ল্যাটফর্মে ইশতেহার ঘোষণা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণার ক্ষেত্রে বিদেশি অর্থায়নে বিধিনিষেধ এবং বিধি মানতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা নেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সপ্তম কমিশন সভায় আচরণবিধি-২০২৫ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। যেখানে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশও আমলে নিয়েছে ইসি। এদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে বেলা সোয়া ১১টা থেকে তিন ঘণ্টাব্যাপী কমিশন সভা হয়।
সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, বিলবোর্ডের ব্যবহার অতীতে ছিল না, এটা ইন করা হচ্ছে। পোস্টারের ব্যবহার বাদ দেওয়ার ব্যাপারে সংস্কার কমিশনেরও একটা প্রস্তাব ছিল, আমরাও একমত হয়েছি। প্রার্থীরা প্রচারণায় ব্যানার ও ফেস্টুন ব্যবহার করতে পারবেন। তিনি জানান, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদেরও যোগ করা হয়েছে। প্রার্থীর পক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের কেউ প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। তাদের জন্য বিভিন্ন সরকারি সুবিধা ব্যবহার যেমন সার্কিট হাউজ, ডাকবাংলো, রেস্ট হাউজ ব্যবহারের ওপরে কিছু বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় পরিবেশবান্ধব সামগ্রীর ব্যবহারের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, ভোটার স্লিপ ইন্ট্রোডিউস করার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। টিশার্ট, জ্যাকেট ইত্যাদির ব্যাপারে অতীতে যে বিধিনিষেধ ছিল, এবার একটু শিথিল মনোভাব পোষণ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ডিফাইন করা হয়েছে উল্লেখ করে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ভোটের প্রচারণার ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ায় কী ধরনের কার্যক্রম করা যাবে, কী করা যাবে না, তা ডিফাইন করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারে বিদেশি বিনিয়োগ আনা যাবে না। তিনি জানান, মাইকে গণসংযোগের সময় শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলে রাখতে হবে। প্রচারণার সময় তিন সপ্তাহ থাকছে। টিভিতে সংলাপের সুযোগ রাখা হয়েছে।
ইসি সানাউল্লাহ আরও বলেন, বিধিমালা লঙ্ঘনে যে নরমাল শাস্তি ছিল, আগে যেটা ছিল ৬ মাস কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, সেটাকে ৬ মাস কারাদণ্ড এবং দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যা সংস্কার কমিশনের একটা প্রস্তাবনা ছিল। তিনি বলেন, আচরণ বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে যে, আচরণ বিধিমালার অনেকগুলো পরিবর্তন বা সংশোধন আরপিওর ওপর নির্ভরশীল, সুতরাং বর্তমানে যে এটা চূড়ান্ত হলে প্রকাশিত হয়ে যাবে আমাদের ওয়েবসাইটে, উপরে লেখা থাকবে আরপিও সংশোধন সাপেক্ষে।
ইসি কমিশনার আরও বলেন, যেসব প্রার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি বা সদস্য হিসেবে পরিচালনা পর্ষদে থাকবেন বা মনোনীত হয়েছেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর সেখান থেকে তাদের পদত্যাগ করতে হবে। ইসি সানাউল্লাহ বলেন, অঙ্গীকারনামা নেওয়ার বিষয়টি বিধিমালায় নতুনভাবে সংযোজন করা হয়েছে। দল এবং প্রার্থী উভয়েরই এ বিধিমালা মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, আচরণবিধির গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে আরপিও-তে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রয়েছে। আগে আচরণবিধিতে আরপিও অনুচ্ছেদটি ছিল না, এবার এটি সন্নিবেশিত হয়েছে। সব প্রার্থীকে এক প্ল্যাটফর্মে ইশতেহার ঘোষণার বিষয়ে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, কমন প্ল্যাটফর্ম বলতে একটি আসনে যে কয়জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন, সংশ্লিষ্ট আসনের আমাদের রিটার্নিং অফিসার সেই প্রার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে একই দিনে ইশতেহার বা ঘোষণাপত্র পাঠ করার ব্যবস্থা করবেন।