ঘুষ বাণিজ্য শীর্ষে বিআরটিএ, দ্বিতীয় পুলিশ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুন ২০২৫, ৯:৩১:১৫ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : বাংলাদেশের সরকারি সেবাখাতে সবচেয়ে বেশি ঘুষ ও দুর্নীতির শিকার হয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে সেবা গ্রহণকারী জনগণ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে’ অনুযায়ী, গত এক বছরে বিআরটিএ থেকে সেবা নিতে গিয়ে ৬৩.২৯ শতাংশ নাগরিক ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন। ঘুষ লেনদেনে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ, যেখানে ঘুষ দিয়েছেন ৬১.৯৪ শতাংশ। এরপর পাসপোর্ট অফিস (৫৭.৪৫%), ভূমি রেজিস্ট্রি অফিস (৫৪.৯২%), বিচারক/ম্যাজিস্ট্রেট, প্রসিকিউটরসহ অন্যান্য বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের অফিস (৫৩.৭৭%) এবং ভূমি রেকর্ড ও অধিগ্রহণ সংক্রান্ত অফিস (৫১.৪০%)। এই জরিপে মোট ২১ ধরনের সরকারি অফিসে ঘুষ লেনদেনের তথ্য উঠে এসেছে।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের ৬৪টি জেলার ৮ লক্ষাধিক নাগরিকের মধ্যে এই জরিপ চালায় বিবিএস। ৪৫ হাজার ৮৬৮টি মৌজা বা মহল্লা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয় ১ হাজার ৯২০টি প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিটের মাধ্যমে। ১৮ থেকে শুরু করে তার বেশি বয়সের নাগরিকরা এতে অংশ নেন।
জরিপ অনুযায়ী, গত এক বছরে সরকারি সেবা নিতে গিয়ে মোট ৩১ শতাংশ নাগরিক ঘুষ বা দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। পুরুষদের মধ্যে এ হার ৩৮.৬২ শতাংশ হলেও নারীদের ক্ষেত্রে তা ২২.৭১ শতাংশ। প্রতিবেদন বলছে, দেশের ১৯.৩১ শতাংশ নাগরিক গত এক বছরে বৈষম্য বা হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন। এর মধ্যে নারীদের হার ১৯.৬২% এবং পুরুষদের ১৮.৯৭%। শহরবাসীদের মধ্যে হয়রানির হার তুলনামূলকভাবে বেশি (২২.০১%)।
বৈষম্যের প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে আর্থ-সামাজিক অবস্থান ও লিঙ্গ প্রভেদের কথা জানান জরিপে অংশ নেওয়াদের মধ্যে ৬.৮২% এবং ৪.৪৭%। অধিকাংশ হয়রানি ঘটেছে পরিবারে (৪৮.৪৪%), গণপরিবহন বা উন্মুক্ত স্থানে (৩১.৩০%) এবং কর্মস্থলে (২৫.৯৭%)। তবে এই হয়রানির ঘটনার মাত্র ৫.৩৫% ভুক্তভোগী তা রিপোর্ট করেছেন।
জরিপে আরও দেখা গেছে, গত দুই বছরে ১৬.১৬% মানুষ কোনো না কোনো বিরোধ বা দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হয়েছেন। এদের মধ্যে ৮৩.৬০% কোনো না কোনো আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় সমাধান পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ৪১.৩৪% মানুষ আদালত বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো আনুষ্ঠানিক সংস্থার সহায়তা নিয়েছেন, অন্যদিকে ৬৮.৯৬% ভরসা রেখেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতা বা পারিবারিক সালিশের মতো অনানুষ্ঠানিক উপায়ে। এই জরিপ দেশের নাগরিক সেবাখাতে দুর্নীতি, বৈষম্য ও বিচার ব্যবস্থার প্রবেশাধিকারে বর্তমান বাস্তবতা ও সীমাবদ্ধতাকে গভীরভাবে তুলে ধরেছে।