সম্পাদকীয় : বিমানযাত্রীদের শংকা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুন ২০২৫, ৯:৩৭:৫৯ অপরাহ্ন
সম্প্রতি ভারতের গুজরাটে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমানের ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর ভারতসহ এ অঞ্চলের বিমানযাত্রীদের মাঝে এক ধরনের আতংক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যারা প্রায়ই বিমানে ভ্রমণ করেন এমন ভীতিহীন যাত্রীদের অনেকের মাঝেও এই আতংকের ছোঁয়া লেগেছে। অনেক বিমানযাত্রী পারতপক্ষে বিমানে ভ্রমণ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে। গুজরাটের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার ভীতি আতংককে আরো বাড়িয়ে তুলেছে সাম্প্রতিক সময়ে আরো কয়েকটি বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ফিরে আসা এবং বোমা আতংকের ঘটনা।
গত ১২ জুন গুজরাটের রাজধানী আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক যাওয়ার পথে উড্ডয়নের পর পরই একটি ফ্লাইট বিধ্বস্ত হয়। এতে নিহত হয় বিমানের ২৪১ যাত্রীসহ ২৭৪ জন। এই দুর্ঘটনা ভারতের সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনাগুলোর ইতিহাসে ভয়াবহতম। কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো স্পষ্ট হয়। বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞগণ নানা কারণকে দায়ী করলেও প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত ও একমত হতে পারছেন না তারা। প্রথমে ইঞ্জিনে পাখি ঢুকে ইঞ্জিন বিকল হওয়ার বিষয়টি সন্দেহের তালিকায় ছিলো শীর্ষে। পরে এ ব্যাপারেও তেমন কোন আলামত পাওয়া যায়নি। এরপর অনেক বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক বিমানের লোড, চাকা না ওঠানো এবং ডানার ফ্ল্যাপ ওপেন রাখার বিষয়কে দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে বলে আশংকা করেন। লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে, বিমানের পাইলট ও কো-পাইলট ছিলেন দক্ষ ও যথেষ্ট অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। তা সত্বেও তাদের পরিচালনার ক্ষেত্রে ভুলভ্রান্তি হতে পারে এমন অভিমতও ব্যক্ত করছেন অনেক বিমান বিশেষজ্ঞ। সবচেয়ে বেশী আতংক ছড়াচ্ছে উক্ত বোয়িং ড্রিম লাইনার বিমানটির নির্মাণকালীন ত্রুটি এবং রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলার সম্ভাবনা। দুর্ঘটনার আগে বিমান নির্মাতা বোয়িং কোম্পানীর নির্মাণকালীন উদাডসীনতা ও ত্রুটির ব্যাপারে মন্তব্য করেছিলেন বার্নেস নামক জনৈক ব্যক্তি। তিনি বোয়িং বিমান নির্মাতা কোম্পানীর এক কর্মী ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, চাহিদার চাপ সামাল দিতে বোয়িং নির্মাণে তড়িঘড়ি করার পাশাপাশি নিম্নমানের যন্ত্রাংশ জুড়ে দেয়া হচ্ছে। এ বক্তব্যের পর তিনি কোম্পানীর রোষানলে পড়েন। এছাড়া ভারতের দুর্ঘটনা কবলিত বিমানসহ বিভিন্ন বিমানের রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলার বিষয়েও অনেকে অভিযোগ করেন। সর্বোপরি ফ্লাইটের পূর্ব মুহূর্তে যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়নি বলে অনেকে দাবি করেন।
ভারতের এই বিমান দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের ‘গুজব মিডিয়া’ গুলোকেও সোচ্চার হয়ে ওঠতে দেখা যাচ্ছে। দুর্ঘটনার জন্য তারা বিদ্রোহী শিখদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এমনকি তুরস্কের সংশ্লিষ্ট বিমান রক্ষণাবেক্ষণকারী কোম্পানীকে দায়ী করছে। তবে তুরস্ক এই বিমান রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকার কথা অস্বীকার করেছে। এসব মিডিয়ার কোন কোনটি বোমা বিস্ফোরণে বিমানটি ধ্বংস হওয়ারও দাবি করেছে। কিন্তু বোমার কোন আলামত পাওয়া যায়নি এই বিস্ফোরণের ঘটনায়।
যা-ই হোক, ভারতের এই ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় একজন যাত্রীর প্রায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়ার বিষযটি গোটা উপমহাদেশ এমনকি বিশ^ব্যাপী বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। এ নিয়ে একটার পর একটা ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে। এই দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষও বেশ নড়ে চড়ে বসেছেন। বোয়িং ড্রিম লাইনারের ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা নিতে শুরু করেছেন।
আমরা ভারতের এই ভয়াবহতম দুর্ঘটনাকে একটি সতর্ক সংকেত হিসেবে গ্রহণ করে বিমান রক্ষণাবেক্ষণে যথাযথ এমনকি বাড়তি যত্ন ও সতর্কতা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিমান কর্তৃপক্ষসমূহের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। বিমান হচ্ছে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বাহন। যে কোন দেশের মানুষ যে কোন দেশের বিমানে আরোহন করতে পারেন। তাই ভারতের এই বিমান দুর্ঘটনায় গোটা বিশে^র বিমানযাত্রীরা কমবেশী শংকিত। আর এই শংকা দূর করার দায়িত্ব বিমান সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ তথা সরকারের।